গৌতম আদানি।
এনডিটিভি-র প্রোমোটার রাধিকা এবং প্রণয় রায়ের শেয়ার কেনা ও বেচার উপরে বছর দুয়েক আগেই (২০২০-র ২৭ নভেম্বর) নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল বাজার নিয়ন্ত্রক সেবি। বলেছিল, তাঁরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে মূলধনী বাজারের সঙ্গে সম্বন্ধও রাখতে পারবেন না। গৌতম আদানির আগ্রাসী অধিগ্রহণ আটকাতে সেই নিষেধাজ্ঞাই শাপে বর হতে পারে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ। সে ক্ষেত্রে আদানিদের পথের কাঁটা হতে পারে সেবি। এনডিটিভি-কে নিজেদের অধিকারে রাখতে প্রোমোটার সংস্থা আরআরপিআর অন্তত সেই চেষ্টাই করছে।
বুধবার গভীর রাতে তারা সেবির কাছে এক আবেদন পাঠিয়েছে। তাতে বলেছে, আদানিদের সংস্থা বিশ্বপ্রধান কমার্শিয়াল (ভিসিপিএল) ঋণ শোধ না হওয়ার কারণে আরআরপিআর-এ সংবাদ চ্যানেলটির ২৯.১৮% শেয়ার হাতে নেওয়ার কথা বলেছে ঠিকই। কিন্তু এনডিটিভি কর্তৃপক্ষের উপরে নিষেধাজ্ঞা থাকাকালীন এই পদক্ষেপ করার জন্য আগে তাদের সেবির অনুমতি নেওয়া উচিত ছিল। তার পরেই আদানিদের উদ্যোগ আদপে কতটা আইনসিদ্ধ, সেই প্রশ্ন উঠেছে। ভিসিপিএলের থেকে আরআরপিআর-এর ধার নেওয়ার সময় যেহেতু সংস্থাটি আদানি গোষ্ঠীর ছিল না।
আইন বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, খুব ভেবেচিন্তে পদক্ষেপ করেছেন গৌতম আদানি। আরআরপিআর ওয়ার্যান্ট মারফত ভিসিপিএল-এর থেকে ধার নিয়েছিল। যেখানে বলা ছিল, নির্দিষ্ট সময়ে ঋণ শোধ না করলে আরআরপিআরের ৯৯.৯% শেয়ারের (যা এনডিটিভির মোট শেয়ারের ২৯.১৮%) মালিক হবে তারা। তাই আদানি আগে ভিসিপিএল-কে কিনেছেন। তার পরে তাদের হাতে থাকা ওয়ার্যান্ট বলে এনডিটিভি-র প্রোমোটারদের শেয়ার নিয়েছেন। সংস্থার রাশ দখলে খোলা বাজার থেকে আরও ২৬% অংশীদারি নিতে ঝাঁপিয়েছেন। তবে যে ওয়ার্যান্ট অনুযায়ী তাঁর এই চেষ্টা, তার আইনি বৈধতা নির্ভর করছে তার শর্তের উপর। বিষয়টি নিয়ে আদানি-এনডিটিভির দীর্ঘ আইন লড়াই শুরু হতে পারে বলেও মনে করছে আইনিমহল।
বিশেষজ্ঞদের অনেকেরই ধারণা, যেহেতু আরআরপিআর-কে পুরোপুরি অন্ধকারে রেখে ওই শেয়ার নিয়েছে আদানিরা, তাই ওয়ার্যান্টের শর্ত জানাই এখন সব থেকে জরুরি হয়ে পড়েছে। তার উপরে নির্ভর করছে পদক্ষেপটি আইনের চোখে কতটা গ্রাহ্য। আইন সংস্থা ইন্ডাস-ল’র পার্টনার রবিকুমার বলেন, সাধারণ ভাবে ওয়ার্যান্ট কার্যকর করে শেয়ার হাতে নিতে আগাম অনুমতি লাগে না। তাই এ ক্ষেত্রে সব কিছুই নির্ধারিত হবে দু’পক্ষের নথিবদ্ধ শর্ত অনুযায়ী। একই অভিমত ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব ইন্ডিয়ার প্রাক্তন চেয়ারম্যান অনির্বাণ দত্তের। তবে তাঁর দাবি, ‘‘এ ক্ষেত্রে সেবির অনুমোদন নেওয়া জরুরি ছিল— এই যুক্তিতে কতটা লাভ হবে সন্দেহ আছে।’’