গৌতম আদানি। —ফাইল চিত্র।
আদানি-হিন্ডেনবার্গ কাণ্ডের তদন্তে সুপ্রিম কোর্ট গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির বক্তব্যের সঙ্গে একাধিক বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করল বাজার নিয়ন্ত্রক সেবি!
হিন্ডেনবার্গ তদন্তের জন্য সেবিকে ১৪ অগস্ট পর্যন্ত সময় দিয়েছে শীর্ষ আদালত। একই সঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এম সাপ্রের নেতৃত্বাধীন কমিটিকেও নিয়ন্ত্রণ বিধির সম্ভাব্য খামতির দিকগুলি খতিয়ে দেখতে বলেছে। এই প্রেক্ষিতেই সোমবার আদালতে ৪৩ পৃষ্ঠার হলফনামা জমা দিল বাজার নিয়ন্ত্রক। সেখানে অবশ্য তদন্তের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে উল্লেখ নেই। তবে পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে নির্দেশ চাওয়া হয়েছে। আজ, মঙ্গলবার ফের মামলার শুনানি হওয়ার কথা।
মে মাসে সুপ্রিম কোর্টের কমিটি অন্তর্বর্তী রিপোর্টে বলেছিল, ২০১৪-১৯ সালের মধ্যে সেবির বিধিতে বেশ কিছু সংশোধন হয়েছিল। শিথিল করা হয়েছিল বিদেশি লগ্নি সংক্রান্ত নিয়ম। এতে আদতে বিদেশি লগ্নির মাধ্যমে কারা উপকৃত হচ্ছে, তা বোঝার ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা তৈরি হয়। সেবির অবশ্য পাল্টা বক্তব্য, তারা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ বিধি আদতে শক্তপোক্ত করেছে। ফলে কমিটির এই দাবি ঠিক নয়। বিধি লঙ্ঘনের প্রমাণ পেলে তারা কড়া পদক্ষেপ করবে। এ ছাড়াও কমিটির বক্তব্য ছিল, বাজার যদি মনে করে কোনও সংস্থা অতীতে অনৈতিক লেনদেনে যুক্ত ছিল, তবে সংশ্লিষ্ট শেয়ার দর সংশোধিত হবে। সেবির পাল্টা বক্তব্য, সে ক্ষেত্রেও ব্যবস্থা নিতে সমস্যা নেই। কোনও অভিযোগের ক্ষেত্রে সময় বেঁধে তদন্তের পরামর্শও খারিজ করেছে সেবি। তাদের বক্তব্য, এতে তদন্তের মান খারাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বিষয়ের গভীরতা এবং গুরুত্বের উপরে তদন্তের সময় নির্ভর করে। যদিও কমিটির সুপারিশ মেনে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ করেছে তারা। ফের সংশোধন করেছে বিদেশি লগ্নি সংক্রান্ত নিয়ম।
উল্লেখ্য, জানুয়ারিতে আমেরিকার শেয়ার বাজার সংক্রান্ত গবেষণা সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ রিপোর্টে দাবি করে, গত এক দশক ধরে শেয়ারের দামে কারচুপি করে চলেছে আদানি গোষ্ঠী। ভুয়ো বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থার মাধ্যমে গোষ্ঠীর সংস্থাগুলিতে পুঁজি ঢালা হচ্ছে। ওই লগ্নিকারী সংস্থাগুলির অধিকাংশই গৌতম আদানির দাদা বিনোদের নিয়ন্ত্রিত বলেও দাবি করা হয় রিপোর্টে। এর জেরে আদানিদের শেয়ারে ধস নামে। আদানিরা যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে এবং আইনি পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দেয়। গোটা বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর অব্যাহত। মোদী সরকারের সঙ্গে আদানির ‘ঘনিষ্ঠতা’ নিয়ে কেন্দ্রকে তোপ দেগে চলেছে বিরোধীরা। বাজার নিয়ন্ত্রকের বক্তব্য, আপিল ট্রাইবুনাল (স্যাট) যদি কোনও বিধি খারিজ করে এবং পরবর্তী সময়ে সুপ্রিম কোর্ট স্যাটের নির্দেশ খারিজ করে, তা হলে সংশ্লিষ্ট তদন্তেও দেরি হয় ও তা কঠিন হয়ে পড়ে।