প্রতীকী ছবি
লকডাউনের সময়ে ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে গ্রাহকদের ছ’মাস ঋণের কিস্তি স্থগিতের (মোরাটোরিয়াম) অনুমতি দিয়েছিল রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। পরে কেন্দ্র জানিয়েছিল ২ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণে সুদের উপরে সুদ গুনতে হবে না গ্রাহকদের। কিন্তু মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অশোক ভূষণ, বিচারপতি আর সুভাষ রেড্ডি ও বিচারপতি এম আর শাহের বেঞ্চ পরিষ্কার জানিয়ে দিল, ঋণগ্রহীতাদের একাংশকে এই সুবিধা দেওয়ার কোনও যুক্তি নেই। সুবিধা দিতে হবে সকলকেই। ব্যাঙ্কিং মহলের বক্তব্য, এর ফলে কেন্দ্রের অতিরিক্ত ৭৫০০ কোটি টাকা খরচ হতে পারে।
তবে একই সঙ্গে শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, মোরাটোরিয়ামের মেয়াদ বাড়ানো যাবে না। মেটাতে হবে ওই ছ’মাসের সাধারণ সুদও। ফলে ঋণগ্রহীতাদের পাশাপাশি, বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক এবং কেন্দ্রও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে এই নির্দেশে। কোটাক মহিন্দ্রা ব্যাঙ্কের কর্তা উদয় কোটাক বলেন, ‘‘এ বার মোরাটোরিয়ামের ব্যাপারে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক ও বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক স্বাধীন ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।’’
গত বছর ২৭ মার্চ রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছিল, গ্রাহকদের মার্চ থেকে অগস্ট পর্যন্ত মোরাটোরিয়াম দিতে পারে ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি। কিন্তু বিতর্ক বাধে, তবে কি ওই সময়ের জন্য সুদ এবং সুদের উপরে সুদ গুনতে হবে? এই প্রশ্ন-সহ এবং বিভিন্ন দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হয় একগুচ্ছ মামলা।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
শুরুতে কেন্দ্র জানিয়েছিল, যে কোনও ধরনের সুদ মকুব করা হলেই আর্থিক শৃঙ্খলা নষ্ট হবে। কারণ, আমানতে সুদ দেওয়া বন্ধ হয়নি। কিন্তু অক্টোবরের শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, অতিমারির সময়ে দেওয়া মোরাটোরিয়ামে গ্রাহকদের সুদের উপরে সুদ গুনতে হলে সুবিধা দেওয়ার আসল উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে। শীর্ষ আদালতের কড়া অবস্থানের পরেই সরকার জানায়, আটটি ক্ষেত্রের ২ কোটি পর্যন্ত মেয়াদি ঋণে সুদের উপরে সুদ দিতে হবে না গ্রাহকদের। সেই টাকা তাঁদের ঋণের অ্যাকাউন্টে দিয়ে দেবে ব্যাঙ্ক। আর ব্যাঙ্কগুলিকে তা মিটিয়ে দেবে কেন্দ্র। এই খাতে সরকারের খরচ হবে ৬৫০০ কোটি টাকা।
কিন্তু এ দিন সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্য, শুধু আটটি ক্ষেত্রকে ২ কোটির ঋণে এই সুবিধা দেওয়ার যুক্তি নেই। সুবিধা দিতে হবে সমস্ত ঋণগ্রহীতাকে। কারও সুদের উপরে সুদ কাটা হয়ে থাকলে তা ফিরিয়ে দিতে হবে অথবা পরবর্তী কিস্তিতে সেই ক্ষতি পুষিয়ে দিতে হবে। তবে মোরাটোরিয়ামের মেয়াদ বাড়ানো এবং সামগ্রিক সুদ মকুবের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে শীর্ষ আদালত।