সঞ্জয় বুধিয়া। -ফাইল চিত্র।
চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনালের বহুতলের ছোট্ট অফিস ঘর ভাড়া নিয়ে বাবার সঙ্গে কাজ শুরু করেছিলেন। সে সময় অফিসে স্টেনোগ্রাফার পদের জন্য কাগজে একটি কর্মখালির বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন। জমতে থাকা আবেদন থেকে শ্রীমোহন কুমার নামে এক জন নির্বাচিত হন। কিন্তু তিনি নিয়োগপত্র চাইলে সংস্থার মালিক উত্তরে বলেছিলেন, “আপনার নিয়োগপত্র আপনাকেই টাইপ করে নিতে হবে। কারণ আপনিই আমাদের সংস্থার প্রথম কর্মী।” এক কামরায় ভাড়া ঘর থেকে যাত্রা শুরু করা সংস্থার সেই মালিক হলেন সঞ্জয় বুধিয়া। প্যাটন গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর। সম্প্রতি নিজের দীর্ঘ যাত্রাপথের অভিজ্ঞতা জানিয়ে তরুণদের কঠোর পরিশ্রম এবং সততার মাধ্যমে সাফল্যের বার্তা দিলেন তিনি।
সঞ্জয় বুধিয়া শুধুমাত্র প্যাটন গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর-ই নন। আরও একাধিক পরিচয় রয়েছে তাঁর। ওয়েস্ট বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন, কো-চেয়ার সিআইআই ন্যাশনাল কমিটি অন এক্সপোর্টস অ্যান্ড ইমপোর্টস, ন্যাশনাল কাউন্সিল মেম্বার এআইএমএ, বোর্ড মেম্বার অফ স্টাডিজ (কমার্স) সেন্ট জেভিয়ার্স ইউনিভার্সিটি, মেম্বার অফ অ্যাডভাইসরি বোর্ড অফ ক্যালকাটা বিজনেস স্কুল, বিশ্বভারতী ইউনিভার্সিটি আইকিউএসি-র সদস্য, লা মার্টিনিয়ার গ্রুপ সিওপিএম সোসাইটি-র সদস্য, ডোভার লেন মিউজিক কনফারেন্স-এর পৃষ্ঠপোষক। অতীতে তিনি সিআইআই- ইস্টার্ন রিজিওন এবং ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্স-এর সভাপতি পদেও অভিষিক্ত ছিলেন। মালয়েশিয়া সরকারের সাম্মানিক কনসাল পদও অলঙ্কৃত করেছেন।
তাঁর মতে, গ্রাহকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করতে গেলে আলাদা কোনও জনসংযোগ সংস্থার দ্বারস্থ হওয়ার প্রয়োজন নেই। মানুষকে অগ্রাধিকারে রাখা, তাঁদের সম্মান করা, সহযোগিতা করার মধ্য দিয়েই সুসম্পর্ক গড়ে উঠবে। একটি অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তিনসুকিয়া থেকে ফেরার পথে দিল্লি প্রকাশনে কলম লেখার জন্য দেড়শো টাকা মানি অর্ডার পেতাম। ডিব্রুগড় বিশ্ববিদ্যালয় এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকার ঘটনাই আমার লেখার বিষয় ছিল। ওই পরিমাণ টাকা তখন আমার কাছে অনেক ছিল। তখন আমি সাইকেলে যাতায়াত করতাম। জীবনের চলার পথে চড়াই-উতরাই থাকবেই। কিন্তু, প্রতিটি পথ চলা আমাদের কিছু শিক্ষা দিয়ে যায়।” প্রথম থেকেই কয়েকটি বিষয় মেনে চলেন তিনি। তারই একটি হল, সব সময় হাসিখুশি থাকা এবং সদর্থক ভাবনা নিয়ে চলা। শুধুমাত্র সমস্যা নিয়ে নয়, বরং বিকল্প ভাবনার প্রয়োগ এবং বিকাশ নিয়েও মানুষের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত বলে মনে করেন তিনি। ক্ষমতা বা পদের নিরিখ বিচার না করেই বন্ধু বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। সব সময় বড়দের সম্মান করার কথাও বলেন। তাঁর মতে, কাউকে উপহার দিলে সকলকেই সমান ভাবে দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। কারও সামাজিক অবস্থানের ভিত্তিতে কোনও উপহার সামগ্রী নির্ধারণ করা অনুচিত। কেউ নিমন্ত্রণ করলে অন্তত পাঁচ মিনিট সময় বার করে তাঁর বাড়িতে যাওয়ার কথাও বলেন তিনি। তাঁর মতে ছোটখাটো এই সমস্ত বিষয়ই সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
তিনি বলেন, “তোমার ব্যবসা যাই হোক না কেন, সেখানে কিন্তু অনন্ত সম্ভাবনা রয়েছে। তোমাকে শুধু সেই সম্ভাবনা খুঁজে তাকে বাড়িয়ে তুলতে হবে। কিন্তু যে পথেই যাও নৈতিক ভাবে সব সময়ই ক্রেতাদের আস্থাভাজনের চেষ্টা জারি রাখতে হবে। এক সময় বলা হত বিক্রেতা এবং সরবরাহকারী। সময় এখন পাল্টেছে। এখন এরা সকলেই অংশীদার হিসেবে স্বীকৃত। কারণ, ক্রেতারা সরবরাহকারীর ওপর সে ভাবে আস্থা রাখেন না। অতএব, আমাদের কর্তব্য এই দু’য়ের মাঝে একটি বিশ্বাসযোগ্য সেতু নির্মাণ করা। যাতে, উভয় পক্ষেরই বিকাশ ঘটে।” পাশাপাশি তাঁর সংযোজন, “ভারতের ক্ষেত্রে আজকের ব্যবসায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল বাজারে নিজের অস্তিত্বের জানান দেওয়া। ভারতের সামনে এখন সুবর্ণ সুযোগ নিজেদের উৎপাদনক্ষম করে তুলে বিশ্ব বাজারে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করা।“