এই সময়ে চাপা টেনশন প্রতিবারই থাকে। ডিসেম্বর নাগাদ সারা বছরের কাজের মূল্যায়ন বেরোনোর অপেক্ষায় থাকে ধুকপুকুনি। কিন্তু সেখানে দুনিয়া জুড়ে স্যামসাঙের ৩ লক্ষ ২৫ হাজার কর্মীর সঙ্গী এ বার দমবন্ধ উৎকণ্ঠা। প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না কেউই। কিন্তু ‘গ্যালাক্সি নোট-৭’ কাণ্ড যে এ বার মূল্যায়নে আঁচড় কাটতে চলেছে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই কারও। ফলে কিউবিক্ল থেকে ক্যান্টিন— সর্বত্র কান পাতলেই উদ্বেগের ফিসফিস। নিজেদের অন্যতম ভরসার মোবাইল নিয়ে ‘নাক কাটা যাওয়া’র মাশুল গুনে চাকরি যাবে কত জনের? ছাঁটাই হতে পারেন কোন কোন শীর্ষ কর্তা?
এমনিতে দক্ষিণ কোরীয় বৈদ্যুতিন পণ্য প্রস্তুতকারকটি জানিয়েছে, শুধু নোট-৭ ঘিরে তৈরি হওয়া সমস্যায় ম্যানেজমেন্টে রদবদল হবে না। কিন্তু সংস্থার অনেকের ধারণা, কিছু সাধারণ কর্মীর উপর কোপ তো পড়বেই, বাদ যাবেন না শীর্ষ কর্তারাও। দায় নিয়ে সরতেই হবে কিছু জনকে।
একের পর এক নোট-৭ ফোনে ব্যাটারি ফেটে যাওয়ায় তা বিক্রি বন্ধ করেছে সংস্থা। ফেরাতে হচ্ছে ২৫ লক্ষ ফোন। বেশি লাভের জন্য যে দামি ফোনকে তারা হাতিয়ার করতে চেয়েছিল, তা এমন মুখ থুবড়ে পড়ায় কার্যকরী মুনাফা ৫৪০ কোটি ডলার কমার সম্ভাবনা। জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে এই প্রথম স্মার্ট ফোন ব্যবসা ক্ষতির মুখ দেখতে পারে বলেও আশঙ্কা অনেকের। তার উপর মার্কিন মুলুকে আবার এই ফোন নিয়ে হয়রানির কারণে মামলা ঠোকার ইঙ্গিত দিয়েছেন ক্রেতারা।
আর্থিক ক্ষতি বা আইনি সমস্যাতেই শেষ নয়। স্যামসাঙের ব্র্যান্ডেও বড় ধাক্কা নোট-৭ কাণ্ড। সংস্থার অনেক কর্মীই বলছেন, এই যে প্রায় প্রতিদিন ফেটে যাওয়া ফোনের ছবি সমেত স্যামসাঙের নাম কাগজে-টিভিতে পাক খাচ্ছে, তা কি আদৌ সংস্থার ভাবমূর্তির পক্ষে ভাল? এই ফোন নিয়ে বিমানে চড়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে অনেক সংস্থা (এ দিন যেমন লুফৎহন্সা)। বিমান ছাড়ার আগে সিট বেল্ট বাঁধতে বলার মতোই নিয়ম করে ঘোষণা হচ্ছে উড়ানে নোট-৭ চালু না-করার। আর এই সব কিছুতে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে ব্র্যান্ড-স্যামসাং।
কর্মীদের একাংশের দাবি, ‘‘বিশ্ব বাজারে বাকি বৈদ্যুতিন পণ্যের চাহিদায় কিছুটা ভাটা থাকায়, মুনাফা বাড়ানোর চাপ বইতে হচ্ছে মোবাইল ব্যবসাকেই। একের পর এক মডেল আসছে দ্রুত। তাই এমনটা হওয়ারই ছিল।’’ কিন্তু এই ভুলের দাম কী ভাবে চোকাতে হবে, তা নিয়েই ঘুম ওড়ার জোগাড় সওয়া তিন লাখ কর্মীর।