রান্নার গ্যাসের গ্রাহকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি ভর্তুকি পাঠানোর ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর তেল সংস্থাগুলির বাণিজ্যিক গ্যাস সিলিন্ডারের বিক্রি বাড়ছে। গৃহস্থালিতে ব্যবহারের রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার বেআইনি ভাবে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের অভিযোগ অহরহ ওঠে। তেল সংস্থাগুলির দাবি, এর ফলে ১৯ কেজি-র বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের বিক্রি মার খাচ্ছিল। গত জানুয়ারি থেকে ফের বিক্রি বাড়ছে বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের।
তেল সংস্থা সূত্রের খবর, ডিসেম্বর পর্যন্ত হয় বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের বিক্রি কমছিল বা একই থাকছিল। কিন্তু জানুয়ারি থেকে ছবিটা ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করেছে। যেমন ইন্ডেন-এর এক কর্তা জানান, গত বছরের চেয়ে এ বছরের জানুয়ারিতে তাঁদের বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের বিক্রি বেড়েছে প্রায় ২০%। পরবর্তী সময়েও ওই বৃদ্ধির হার একই রয়েছে। অথচ ২০১৩-র তুলনায় ২০১৪-র ডিসেম্বরে বিক্রি কার্যত একই ছিল।
ভারত পেট্রোলিয়ামের এক কর্তা জানান, জানুয়ারির হিসেবে তাঁদের ক্ষেত্রে ওই বিক্রি বৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ৫১%। গত বছরের মার্চের চেয়ে এ বারের মার্চে তাঁদের বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের বিক্রি বেড়েছে প্রায় ৬২%। চলতি মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত তা আরও এক শতাংশ বেড়েছে। হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম নির্দিষ্ট তথ্য না-দিলেও তারাও জানিয়েছে, গত কয়েক মাস ধরে বাড়ছে তাদের বাণিজ্যিক সিলিন্ডার বিক্রি।
সাধারণত ভর্তুকির রান্নার গ্যাসের দাম বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের চেয়ে অনেক কম পড়ে। ফলে পকেট বাঁচাতে রেস্তোরাঁ-সহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে গৃহস্থালির রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার ব্যবহারের প্রবণতা বেশি ছিল বলে অভিযোগ। অটোতেও গৃহস্থালির গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের ছবি প্রায়শই ধরা পড়ে।
বর্তমান বাজার দরের হিসেবে, ওই দু’ধরনের সিলিন্ডারের দামের ফারাক ২০০ টাকার বেশি। আগে যখন বিশ্ব বাজারে তেলের দাম চড়া ছিল, তখন গ্যাসের দামও ঊর্ধ্বমুখী থাকায় এই ফারাক আরও বেশি ছিল। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এখন বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমে যাওয়ায় দু’ধরনের সিলিন্ডারের মধ্যে দামের ফারাক তাই কমেছে। উপরন্তু গৃহস্থালির সিলিন্ডারের ভর্তুকির টাকা সরাসরি গ্রাহকের ব্যাঙ্কের অ্যাকাউান্টে পড়ছে। সে ক্ষেত্রে ভর্তুকির সিলিন্ডার কৌশলে হাতবদলের ঝক্কির দায় সামলে এক শ্রেণির ব্যক্তির আগে যতটা লাভ হত, এখন আর তা হয় না। তাই বাণিজ্যিক কাজে গৃহস্থালির সিলিন্ডার ব্যবহারের প্রবণতা কিছুটা কমেছে।
এই কারণেই তেল সংস্থাগুলির আরও দাবি, ভর্তুকির টাকা গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে সরাসরি বণ্টন হওয়ায় ভর্তুকির সিলিন্ডার নিয়ে কারচুপির সম্ভাবনা কমছে। অভিযোগ, যারা এই চক্রে যুক্ত, অনেক সময়েই ভর্তুকির সিলিন্ডার গ্রাহকের অজান্তে তারা সেটি বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে বিক্রি করে দিত। কিন্তু এখন সরকার ভর্তুকির সিলিন্ডারের ‘কোটা’ বেঁধে দেওয়ায় এবং সরাসরি ভর্তুকির টাকা গ্রাহককে হস্তান্তরের জন্য অনেকেই বাড়তি ঝুঁকি নিয়ে ওই হাতবদলে ততটা উৎসাহী হচ্ছে না। বিশেষ করে যখন লাভের অঙ্কটা তেমন বড় নয়।
গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি ভর্তুকির টাকা বণ্টনের কারণে বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের বিক্রি বৃদ্ধির সম্ভাবনার যুক্তি পুরোপুরি উড়িয়ে দিচ্ছেন না অল ইন্ডিয়া এলপিজি ডিস্ট্রিবিউটর্স অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম শীর্ষ কর্তা বিজনবিহারী বিশ্বাসও। তবে তাঁর বক্তব্য, শুধু সে কারণেই বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের বিক্রি বাড়ছে, তা না-ও হতে পারে। তাঁরও মতে, এখন বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কম থাকায় সার্বিক ভাবেই গ্যাসের দামও কম। ফলে বাণিজ্যিক সিলিন্ডার কেনার আগ্রহ বাড়ছে। তবে সরাসরি ভর্তুকি বণ্টন এ ক্ষেত্রে কতটা সহায়ক হয়েছে তা আরও কিছু দিন পরে বোঝা যাবে বলেই তাঁর দাবি।