প্রতীকি ছবি
ওমিক্রনের কামড় সবে ফিকে হচ্ছিল। ছন্দে ফিরছিল অর্থনীতি। ঠিক তখনই নতুন আঘাত এল রাশিয়া ইউক্রেনকে আক্রমণ করে বসায়। ভারত-সহ অন্য কোনও দেশ এই যুদ্ধে এখনও শামিল না-হলেও, এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারবে না। এই ধরনের ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়ে শেয়ার সূচকে। রাশিয়া যুদ্ধ ঘোষণা করা মাত্র আতঙ্কে কুঁকড়ে যায় বিশ্বের ছোট-বড় সব বাজার। বৃহস্পতিবার সেনসেক্স তলিয়ে যায় ২৭০২ পয়েন্ট (৪.৭২%)। সংঘাতের সামগ্রিক ধাক্কায় আগামী দিনে আরও পড়তে পারে বাজার। পতনকে সুযোগ হিসেবে দেখে ভাল শেয়ারে বা শেয়ার ভিত্তিক ফান্ডে লগ্নি করার এটাই আদর্শ সময়।
বাজার নিয়ে আলোচনার আগে অর্থনীতিতে এই যুদ্ধের প্রভাব কী হতে পারে, তা দেখে নেওয়া যাক—
ভারতে এই প্রভাব যতটা না প্রত্যক্ষ, তার থেকে অনেক বেশি পরোক্ষ। যুদ্ধরত দুই দেশের সঙ্গে সরাসরি বাণিজ্য বিপুল নয়। চলতি অর্থবর্ষে রাশিয়ায় রফতানির অঙ্ক ২৫৫ কোটি ডলার (প্রায় ১৯,২০৯.১৫ কোটি টাকা), আমদানি হয়েছে ৬৮৯ কোটি ডলারের (প্রায় ৫১,৯০২.৩৭ কোটি টাকা)। ইউক্রেনের ক্ষেত্রে আরও কম। তবে ভারত রাশিয়া থেকে মূলত তেল এবং সামরিক সরঞ্জামের মতো জরুরি জিনিস কেনে, যা বন্ধ হলে মাথায় হাত পড়বে। ইউক্রেন থেকে আনে প্রধানত সূর্যমুখী তেল a মাইক্রোচিপ তৈরির কিছু উপাদান। চিপ তৈরির উপাদানে টান পড়লে আরও বাড়বে গাড়ি শিল্পের সঙ্কট। অন্য দিকে, ভারতের ওষুধ, চা ইত্যাদির বড় বাজার রাশিয়া। রফতানি আটকালে সমস্যায় পড়বে সংশ্লিষ্ট শিল্প।
আগে থেকেই বাড়ছিল অশোধিত তেলের দাম। আগুনে ঘি পড়ল যুদ্ধ শুরু হতে। ব্রেন্ট ক্রুড এক সময় পৌঁছে গেল ১০৫ ডলারে। প্রমাদ গুনল ভারতের মতো তেল আমদানিকারী দেশ। প্রয়োজনের ৮০ শতাংশের বেশি তেল কিনতে হয়। খরচ হয় মোট আমদানি বিলের প্রায় ২৫%। তেলের দাম বাড়লে চড়ে ডলারের দাম, নামে টাকা। অবস্থা যা, তাতে পাঁচ রাজ্যে ভোট মিটলে পেট্রল-ডিজ়েলের দাম বাড়ানো ছাড়া পথ নেই। অথচ তাতে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি বেলাগাম হতে পারে। যে হার ইতিমধ্যেই ৬% ছাড়িয়েছে। দাম রাশ টানতে বাড়াতে হতে পারে সুদ। কিন্তু সেটা হলে শিল্পের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়ায় আঘাত লাগবে। কারণ তাদের লগ্নির খরচ বাড়বে।
অর্থাৎ সমস্যা বেশ গভীরে। বিশ্ব বাজারে তেলের মোট জোগানের ১২% আসে রাশিয়া থেকে। এই সরবরাহ বিঘ্নিত হলে কী হতে পারে, সহজেই অনুমেয়।
ইউক্রেন আক্রমণের সমালোচনা করে অবিলম্বে হিংসা ত্যাগ করার আর্জি জানালেও, অর্থনীতির স্বার্থেই ভারতের রাশিয়াকে চটানো সমীচিন নয়। ইউক্রেনে ভারতীয়দের সুরক্ষার প্রশ্নও জড়িত। যে কারণে ভারত রাষ্ট্রপুঞ্জের সুরক্ষা কাউন্সিলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোটাভুটিতে বিরত থেকেছে।
বৃহস্পতিবার পতনের পরের দিনই বিশ্ব বাজারের পথে হেঁটে ঘুরে দাঁড়ায় ভারতীয় সূচক। সেনসেক্স বাড়ে ১৩২৯ পয়েন্ট। তব এই উত্থান সমস্যা কাটার ইঙ্গিত নয়। এক ঝটকায় দাম অনেকটা পড়ায় বহু লগ্নিকারীর কম দামে শেয়ার কিনতে নামা এর কারণ। পরিস্থিতি দেখে যুদ্ধ আরও গড়াবে বলে মনে হচ্ছে। এ কথা স্পষ্ট করেই বলেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ।
বাজার যদি আরও নামে, তবে তা সুযোগ হিসেবে দেখতে হবে। গত দু’দশকে যতবারই যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে সূচক গোঁত্তা খেয়েছে, তার ঠিক পরে উঠেছে বিদ্যুৎ গতিতে। ফলে পড়তি বাজারই কম দামে ভাল শেয়ার কেনার সুযোগ। শেয়ার বাছাই নিয়ে ধন্দ থাকলে নিফ্টি অথবা সেনসেক্স ইটিএফ কেনা যেতে পারে। লগ্নি হতে হবে একটু বড় মেয়াদের। নিচু বাজারে সুবিন্যস্ত ফান্ডেও একলপ্তে লগ্নি করা যেতে পারে। এসআইপি-র পথে লগ্নি করলে, তা চালিয়ে যাওয়াই উচিত।
(মতামত ব্যক্তিগত)