পর্যটনশিল্পে নতুন শব্দবন্ধ এখন ‘ওয়ো রুম’। চিরাচরিত হোটেল ব্যবসার খোলনলচে বদলে দিয়েছে এই অনলাইন ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে নতুন কোথাও গিয়ে ঘর পাওয়া এখন অনেক সহজ। পাশাপাশি, অনেকের সামনেই নতুন উপার্জনের পথ খুলে গিয়েছে।
এই পরিবর্তনের কর্ণধারের নাম রীতেশ আগরওয়াল। ওড়িশার এই যুবক হোটেল চেন ‘ওয়ো’-র মালিক। সম্প্রতি একটি সাইটে জানিয়েছেন তাঁর জীবনের যাত্রাপথ। তাঁর শৈশব কেটেছে ওড়িশার রায়গড়ে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। দশম শ্রেণির পরে পড়াশোনা রাজস্থানের কোটা শহরে। বরাবরই তাঁর শখ ছিল শিল্পদ্যোগী হওয়া।
কলেজের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে রাজস্থান থেকে দিল্লি গিয়ে সেখানকার বিভিন্ন স্টার্ট আপ-এ ইন্টার্নশিপ করতেন রীতেশ। এ সব টেরও পেতেন না তাঁর বাবা মা। আঠেরো বছর বয়সে শুরু করেন তাঁর নতুন ব্যবসা।
প্রথম ব্যবসা থেকে যা উপার্জন করেন, সেটা দিয়ে তিনি প্রায় একশোটি হোটেলে থাকেন এবং কথা বলেন সে সব হোটেলের মালিকদের সঙ্গে।
কিন্তু বেশি দিন কলেজ ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা চলল না। ধরা পড়ে গেলেন বাবার কাছে। রীতেশ জানালেন, তিনি পড়াশোনার বদলে ব্যবসা-ই করতে চান।
ছেলের উত্তরে খুশি হননি বাবা। কিন্তু পাশে দাঁড়ালেন রীতেশের মা। নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে সাহায্য করলেন ছেলেকে।
ভাল ভাবে ব্যবসা শুরু করার আগে রীতেশ বহু দেশ ঘুরলেন। থাকলেন বিভিন্ন হোটেলে। এর পরের ধাপ ছিল কঠোর পরিশ্রম। রীতেশ বুঝেছিলেন এ ছাড়া সাফল্য অধরা।
মার্কিন শিল্পপতি পিটার থিয়েলের নামের ফেলোশিপ নিয়ে বিভিন্ন দেশে সফর করেন রীতেশ। তিনি-ই প্রথম এশিয়ান অন্ত্রপ্রনর যিনি এই ফেলোশিপ পেয়েছেন।
২০১৩ সালে ‘ওয়ো রুমস’-এর ব্যবসা শুরু করেন রীতেশ। প্রথম দিকে তিনি নিজে রুমসার্ভিস বয় থেকে শুরু করে বেবি সিটার, বিভিন্ন ভূমিকায় কাজ করেছেন। এমনকি, তাঁকে সাধারণ কর্মী ভেবে বখশিসও দিয়েছেন অনেকে।
আজও দিনভর পরিশ্রম করতে ভালবাসেন রীতেশ। সবকিছুর সার্থকতা তিনি খুঁজে পান, যখন দেখেন একটা রাস্তার চারধারে ঝুলছে ‘ওয়ো রুমস’-এর বোর্ড। একটানা দীর্ঘ ক্ষণ কাজের পরে তাঁর অন্যতম বিনোদন পোষ্য কুকুর লিজার সঙ্গে খেলা।
বিভিন্ন বাজেটের সঙ্গে মানানসই হোটেলের পাশাপাশি ‘ওয়ো রুমস’ এখন জনপ্রিয় করেছে ‘ব্রেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্ট’ এবং ‘ভ্যাকেশন হোম’-এর ধারণাও। চিরাচরিত হোটেলের থেকে এই নতুন রীতি অনেকটাই অন্যরকম।
মাত্র সাত বছরের মধ্যে ‘ওয়ো রুমস’ এখন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম হোটেল চেন। সারা বিশ্বে তাঁদের কর্মীর সংখ্যা ১৭ হাজারের বেশি।
চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় দিদির মুখে প্রথম ‘অন্ত্রপ্রেনর’ শব্দটি প্রথম শুনেছিলেন রীতেশ। তখন থেকেই মনে গেঁথে গিয়েছিল শব্দটা। অর্থ না বুঝেও সবসময় বলতেন, বড় হয়ে ‘অন্ত্রপ্রেনর’ হবেন। আজও নামের পাশে এই শব্দটাই সবথেকে বেশি রোমাঞ্চিত করে ২৬ বছর বয়সি এই তরুণকে।
রীতেশের সাফল্যের নেপথ্য কাহিনি মন জয় করেছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের। অনেকেই বলছেন, জীবনে চলার পথে নতুন করে ভাবতে শেখাচ্ছেন ছক ভাঙা তরুণ শিল্পোদ্যোগী রীতেশ আগরওয়াল। (ছবি: ফেসবুক)