প্রতীকী ছবি
এ মাসের বিক্ষিপ্ত লকডাউনে পেট্রল পাম্প খোলা থাকলেও, রান্নার গ্যাস সিলিন্ডারের সরবরাহ, ডাক ও ব্যাঙ্কের মতো জরুরি পরিষেবাকে ছাড় দেয়নি রাজ্য। এর জেরে আগামী দিনে গ্রাহকদের সিলিন্ডার জোগাতে দেরি হতে পারে বলে আশঙ্কা তেল ও ডিলার সংস্থাগুলির। তাদের ভয়, গ্রাহক নির্দিষ্ট সময় সিলিন্ডার না-পেয়ে ‘প্যানিক বুকিং’ শুরু করলে পরিস্থিতি জটিল হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিক্ষিপ্ত ভাবে কয়েক দিন কাজ বন্ধ রেখে সরকার করোনাকে হারানোর চেষ্টা করলেও, অন্যান্য দিন গ্যাসের দোকানে লক্ষ লক্ষ মানুষ লাইন দিলে সংক্রমণ বাড়ার বিপদ থাকবেই। সেই সঙ্গে জোগানে চাপ তৈরি হওয়ায় সিলিন্ডার দিতে দেরি হলে গ্রাহকদের ক্ষোভের মুখেও পড়তে পারেন ডেলিভারি বয়েরা। তাই রাজ্যের কাছে এই পরিষেবাকে ছাড় দেওয়ার আর্জি জানিয়েছে তেল সংস্থাগুলি। যদিও বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজ্যের তরফে মঙ্গলবার কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
মার্চ শেষে শুরু লকডাউনে অন্য জরুরি পরিষেবার মতোই ছাড় পেয়েছিল রান্নার গ্যাসের জোগান। তবুও অনেকে আতঙ্কে সিলিন্ডার বেশি বুক করায় জোগানে কৃত্রিম সঙ্কট দেখা দেয়। সংস্থাগুলি একবার বুকিংয়ের পরে ১৫ দিনের মধ্যে ফের বুকিংয়ে নিষেধাজ্ঞা চাপায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে গড়িয়ে যায় বেশ কিছু দিন।
এখন জোগান
• রান্নার গ্যাস বুকিংয়ের পরে গড়ে তিন-চার দিনে সিলিন্ডার পান গ্রাহক।
• কোনও কোনও অঞ্চলে তার থেকে কম দিনে সরবরাহ হয়, কোথাও একটু বেশি সময় লাগে।
• তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থা মিলে দিনে প্রায় ৪.৫ লক্ষ সিলিন্ডার জোগায় সারা রাজ্যের গ্রাহকদের।
সংস্থার আশঙ্কা
• করোনা সংক্রমণ আটকাতে মার্চের শেষ থেকে শুরু নিরবচ্ছিন্ন লকডাউনে রান্নার গ্যাসের জোগানকে জরুরি পরিষেবা হিসেবে ছাড় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাড়তে থাকা সংক্রমণ আটকাতে রাজ্যে এই দফায় শুরু বিক্ষিপ্ত লকডাউনে সেই ছাড় নেই। মাঝে মাঝেই এক এক দিন করে কাজ বন্ধ থাকলে গোটা সরবরাহ ব্যবস্থায় চাপ বাড়বে।
• এমনিতেই বিভিন্ন এলাকায় সংক্রমণ ছড়ানোয় কর্মীর হাজিরা অনেক সময় কম থাকছে। ফলে লকডাউন বাদে বাকি দিনগুলিতে জোগানের চাপ সামলানো কঠিন হতে পারে।
• তার উপরে লকডাউন ঘোষণা হতেই বেড়েছে বুকিং। বর্ষার কারণেও এই সময় সিলিন্ডারের চাহিদা বেশি থাকে।
• ছাড় না-থাকায় গ্রাহকদের গ্যাস পেতে দেরি হতে পারে।
রাজ্যকে আর্জি
• আগের মতোই এ মাসের বিক্ষিপ্ত লকডাউনের দিনগুলিতেও ছাড় দেওয়া হোক রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহকে।
• তেল সংস্থাগুলির পাশাপাশি ডিস্ট্রিবিউটরদেরও আবেদন, অন্যান্য রাজ্যের মতোই এখানে জরুরি পরিষেবা হিসেবে বিবেচিত হোক গ্যাসের জোগান।
সংস্থা ও ডিস্ট্রিবিউটরদের দাবি, অগস্টে সাত দিন লকডাউন। রবিবার ও স্বাধীনতা দিবসের ছুটি ধরলে কাজের দিন ১৮। স্থানীয় পুরসভা বা জেলা স্তরে কোথাও কোথাও আরও বেশি দিন লকডাউনের কথা বলা হয়েছে। ফলে সাধারণ বুকিংয়ের ক্ষেত্রেই সিলিন্ডার পৌঁছতে সময় লাগতে পারে। আর আতঙ্কের বুকিং হলে তো কথাই নেই। সব মিলিয়ে নিষেধাজ্ঞার জেরে বুকিংয়ের পরে সিলিন্ডার পাওয়ার সময় গড়ে ১০ দিনেও পৌঁছতে পারে। তাদের আক্ষেপ, বহু রাজ্যেই সাময়িক লকডাউন চলছে। কিন্তু কোথাও রান্নার গ্যাসের বটলিং কারখানা বা সিলিন্ডারের জোগান বন্ধ রাখা হয়নি। অল ইন্ডিয়া এলপিজি ডিস্ট্রিবিউটর্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট বিজনবিহারী বিশ্বাস জানান, তাঁরাও খাদ্য দফতরের কাছে বিষয়টি জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, লকডাউন থেকে ছাড় না-পেলে অন্তত ১৫ দিনে বুকিংয়ের নিয়ম ফের চালু করুক তেল সংস্থাগুলি। সংস্থাগুলি বলছে, শুধু একটি রাজ্যের জন্য সেটা অসম্ভব। কারণ, তা কেন্দ্রীয় ব্যবস্থার আওতায়।