স্ত্রী অক্ষতা মূর্তির সঙ্গে সুনক।
ঋষি সুনক। ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী, ভারতীয় বংশোদ্ভুত এবং ইনফোসিসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তির জামাই। গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই, মাইক্রোসফটের সত্য নাদেল্লা, টুইটারের পরাগ আগরওয়াল, আইএমএফের ফার্স্ট ডেপুটি এমডি গীতা গোপীনাথ-সহ বিদেশে সফল ভারতীয় বংশোদ্ভুতদের সঙ্গে এক নিঃশ্বাসে উচ্চারিত হয় তাঁর নামও। ব্রিটেনের শাসকদল কনজ়ারভেটিভ পার্টির প্রথম সারির এই নেতা এখন পড়েছেন রাজনৈতিক ফাঁপড়ে। কারণ, ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিসে তাঁর স্ত্রী অক্ষতা মূর্তির অংশীদারি এবং সেখান থেকে প্রাপ্ত আয় বাবদ ব্রিটেনে কর না দেওয়া।
ঋষির সঙ্গে অক্ষতার পরিচয় স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০৯ সালে বিয়ে করেন তাঁরা। ঋষি ব্রিটেনের নাগরিক হলেও, তাঁর স্ত্রী সে দেশের পাসপোর্ট নেননি। অক্ষতার যুক্তি, ভারতের নাগরিক হিসেবে তাঁর দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ নেই। সম্প্রতি জানা গিয়েছে, ব্রিটেনের কর ব্যবস্থায় অক্ষতা ‘নন-ডোমিসাইলড’ হিসেবে চিহ্নিত। যাঁরা ব্রিটেনের স্থায়ী নাগরিক নন, তাঁদের এই তকমা দেওয়া হয়। বিদেশ থেকে তিনি যে আয় করেন তার জন্য ব্রিটেনে তাঁকে কর গুনতে হয় না। এখানেই উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন। বিরোধী লেবার পার্টির বক্তব্য, এক দিকে মূল্যবৃদ্ধির বাজারে অর্থমন্ত্রী ঋষি দেশে করের হার বাড়িয়ে চলেছেন। বাড়াচ্ছেন জাতীয় বিমার খরচ। আর অন্য দিকে লন্ডনের ১১ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে বসবাস করে তাঁর স্ত্রী সেই করই এড়িয়ে যাচ্ছেন! বাঁচাচ্ছেন পরিবারের করের খরচ! বিশেষজ্ঞদের একাংশ আবার বলছেন, অক্ষতার ব্রিটেনের নাগরিকত্ব নেওয়ার সুযোগ নেই এমন নয়। কিন্তু সে ক্ষেত্রে তাঁকে ‘নন-ডোমিসাইলড’ তকমা হারাতে হবে। ইনফোসিসে অক্ষতার ০.৯১% শেয়ার রয়েছে। যার মূল্য ৬৯ কোটি পাউন্ড (প্রায় ৬৮৩০ কোটি টাকা)। সেই শেয়ার বাবদ ডিভিডেন্ড হিসেবে হাতে আসবে ১.১৬ কোটি পাউন্ড। কিন্তু ‘নন-ডোমিসাইলড’ তকমার জন্য তাঁকে ব্রিটেনে কোনও করই দিতে হবে না। যেখানে ব্রিটিশ নাগরিক হলে গুনতে হত ৩৮.১% ডিভিডেন্ড কর।
সুনক মস্কোয় ইনফোসিসের অফিসকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি আরও এক বার বিতর্কে জড়িয়েছেন। এক সাক্ষাৎকারে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, অর্থমন্ত্রী ব্রিটেনের সংস্থাগুলিকে রাশিয়ায় ব্যবসা করতে বারণ করছেন। আর তাঁর স্ত্রীই রাশিয়ায় ইনফোসিসের ব্যবসা থেকে লাভবান হচ্ছেন। তবে কি বাড়িতেই অর্থমন্ত্রীর কথা শোনা হয় না? সুনক সেই প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেও পরে মস্কোর অফিস থেকে কাজকর্ম বন্ধ করেছে ইনফোসিস।
২০১৮ সালে প্রথম মন্ত্রী হওয়ার সময়েই সুনক স্ত্রীয়ের ‘নন-ডোমিসাইলড’ তকমার কথা মন্ত্রিসভার দফতরকে জানিয়েছিলেন। ফলে সরকারেরও বিষয়টা অজানা নয়। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শদাতাও সুনকের কর সংক্রান্ত ঘোষণায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলেই খবর। কর বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, অক্ষতা মোট ন’বছর ব্রিটেনে বসবাস করেছেন। আরও ছ’বছর থাকলে এমনিতেই তিনি ওই সুবিধা আর পাবেন না। তা ছাড়া সেই সুবিধা না চাইলে তা আয়কর রিটার্নের ফর্মেও নির্দিষ্ট জায়গায় উল্লেখ করতে পারেন তিনি। এক সরকারি মুখপাত্রের বক্তব্য, ‘‘তিনি (অক্ষতা) ব্রিটেনের রোজগারের উপরে কর দেন। ভবিষ্যতেও দেবেন।’’