বিশেষত ২০০০-এর নোট বদলাতে পরিচয়ের প্রমাণ লাগবে না এবং দিনে যত বার ইচ্ছে বদলানো যাবে বলে সরকারি বার্তার পরে। ফাইল ছবি।
সাড়ে ছ’বছর আগে নোটবন্দির সময়ে পাঁচশো-হাজার টাকার নোট বদল করতে চূড়ান্ত হয়রান হয়েছিলেন মানুষ। ব্যাঙ্ক-এটিএমের সামনে লম্বা লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। চড়া গরমে বাজার থেকে ২০০০ টাকার নোট তুলে নেওয়ার ঘোষণার পরে তাই সতর্ক রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। সমস্ত ব্যাঙ্ককে তাদের নির্দেশ, নোট জমা বা বদল করতে আসা মানুষের জন্য পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। চড়া রোদ থেকে বাঁচাতে অপেক্ষা করার জন্য থাকতে হবে ছাউনি। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, অতীত থেকে শিক্ষা নিয়েই সাবধান শীর্ষ ব্যাঙ্ক। আজ থেকে শুরু হচ্ছে নোট জমা এবং বদল। চলবে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তবে কালো টাকার প্রশ্নে তরজা বহাল। বিশেষত ২০০০-এর নোট বদলাতে পরিচয়ের প্রমাণ লাগবে না ও দিনে যত বার ইচ্ছে বদলানো যাবে বলে সরকারি বার্তার পরে।
টুইটে কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরমের অভিযোগ, ২০০০ টাকার নোট শুধু অতি সহজে বেআইনি ভাবে কালো টাকা মজুত করতে সাহায্য করেছে। এখন সেগুলির মালিকদের জন্য লাল কার্পেট বিছিয়ে দেওয়া হল, যাতে তাঁরা সেই টাকা বদলে নিতে পারেন। কোনও ফর্ম (রিকুইজ়িশন স্লিপ) বা পরিচয়ের প্রমাণ ছাড়াই নোট বদলের সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই দিল্লি হাই কোর্টে হয়েছে জনস্বার্থ মামলা।
রবিবারই কেন্দ্র স্পষ্ট করে, একলপ্তে ২০,০০০ টাকার বেশি নোট বদল করা যাবে না। কিন্তু এক দিনে একাধিক বার বদল করতে অসুবিধা নেই। তার পরেই ওঠে অভিযোগ, এ ভাবে যে কেউ বিনা বাধায় কালো টাকাও বদলে নিতে পারবেন। এ দিন রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাসের দাবি, টাকা জমা নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে। সে সব ব্যাঙ্কগুলিকে মেনে চলতে হবে। বাড়তি কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি ঠিকই। তবে ৫০,০০০ টাকার বেশি নগদ জমা করলেই প্যান দেখানো-সহ বর্তমান সব নিয়ম পালন বাধ্যতামূলক।
ব্যাঙ্কগুলিকে নোট জমা ও বদলের দৈনিক হিসাব রাখার নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। তবে এ দিন আদালতে রুজু মামলায় আবেদনকারীর দাবি— জুয়ারি, প্রতারক, অপহরণকারী, ঘুষখোর, বিচ্ছিন্নতাবাদী, আতঙ্কবাদী, ড্রাগ পাচারকারী, খনি মাফিয়া-সহ বহু দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ ২০০০ টাকার নোট মজুত করেছে এত দিন। কারণ, সমস্ত বেআইনি অপকর্ম নগদ লেনদেনে চলে বলে বেশি মূল্যের নোটই ব্যবহৃত হয়। তাই পরিচয় না জানিয়ে এবং কোনও ফর্মে তথ্য রাখার শর্ত ছাড়া সেগুলি বদলের সুযোগ দেওয়াও বেআইনি। আরবিআই এবং এসবিআইয়ের নিশ্চিত করা উচিত, যাতে শুধু ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেই জমার পথ খোলা থাকে।
কেন্দ্রকে বিঁধে শিবশেনা নেতা সঞ্জয় রাউত বলেন, কোনও সিদ্ধান্ত বিজেপি বা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রী মোদীর বিরুদ্ধে গেলে, তখনই কিছু স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি নেতিবাচক আবহকে ঢাকার চেষ্টা করেন। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, তাঁর ইঙ্গিত কর্নাটকের ভোটে বিজেপির হেরে যাওয়ার দিকে। এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ারের দাবি, ২০০০-এর নোট প্রত্যাহার এক ‘খামখেয়ালি ব্যক্তির’ সিদ্ধান্তের মতো।
শুক্রবার এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণার পরে সোমবারই প্রথম সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন শক্তিকান্ত। তাঁর দাবি, অর্থনীতির উপর এর প্রভাব হবে ‘‘অতি অতি সামান্য’’। কারণ দেশে যত মুদ্রা চালু আছে, তার মাত্র ১০.৮% হল ২০০০-এর নোট। সাধারণ লেনদেনে তেমন ব্যবহার হয় না বলেই সব নোট ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে হয় বদল না হয় জমা পড়ে যাবে। শক্তিকান্তের বার্তা, অর্থ ব্যবস্থায় পরিষ্কার নোট চালু রাখতে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের নীতি (ক্লিন নোট পলিসি) অনুসারে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। বর্তমানে তাঁদের এবং বিভিন্ন ব্যাঙ্কের ভাঁড়ারে (চেস্ট) যথেষ্ট পরিমাণে অন্যান্য মূল্যের নোট মজুত আছে। তবে ২০০০-এর নোট বৈধ থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা দেখব ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কত নোট জমা পড়ে। তার পর কী পদক্ষেপ করা হবে, সে ব্যাপারে আমি এখনই অনুমানের ভিত্তিতে কিছু বলতে পারব না।’’