—প্রতীকী ছবি।
বাড়ি-ফ্ল্যাটের স্ট্যাম্প ডিউটি এবং পেট্রল-ডিজ়েলের বিক্রয় করে ছাড়ের মেয়াদ বাড়ায়নি রাজ্য সরকার। গত ১ জুলাই থেকেই তা তুলে নেওয়া হয়েছে। ফলে মূল্যবৃদ্ধির বাজারে সেগুলির ক্রেতাদের খরচ আরও বেড়েছে। প্রশাসনের একাংশ বিষয়টিকে ‘নিয়মমাফিক’ বলে ব্যাখ্যা করলেও, রাজ্যকে কেন এই ‘জনমোহিনী’ সুবিধা প্রত্যাহার করতে হল, তা নিয়ে শুরু হয়েছে চর্চা। আর্থিক বিশ্লেষকদের অনেকের প্রশ্ন, তবে কি রাজ্যের কোষাগারের পরিস্থিতি ক্রমশ নড়বড়ে হচ্ছে? সরকারি ভাবে এ ব্যাপাকে মুখ খোলা না হলেও আধিকারিকদের একাংশের দাবি, যে পরিস্থিতি এবং প্রয়োজনে সিদ্ধান্তগুলি নিতে হয়েছিল, তা এখন আর নেই।
প্রবীণ আধিকারিকদের অনেকের দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বরাবরই সাধারণ মানুষের উপর আর্থিক বোঝা চাপানোর বিরোধিতা করে এসেছে। কিন্তু এখন আর্থিক হাল সন্তোষজনক নয়। সে কারণেই সরকারকে ছাড়ের রাস্তা থেকে সরতে হচ্ছে। তাঁদের ব্যাখ্যা, করোনার পরে ২০২১ সালের বাজেটে বাড়ি-ফ্ল্যাটের নথিভুক্তি ও স্ট্যাম্প ডিউটিতে ২% ছাড় ঘোষণা করেছিল রাজ্য। তেলের বিক্রয় করেও লিটার পিছু ১ টাকা করে ছাড় মিলছিল। লোকসভা ভোটের কারণে চলতি অর্থবর্ষের বাজেটেও চমক রাখতে হয়েছিল বেশ কিছু। যার ফলে কোষাগারে চাপ বেড়েছে।
যেমন, এ বারের বাজেটকে নারীপ্রধান করে তুলতে প্রায় ৪৪% বরাদ্দ মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট করেছিল সরকার। বাজেট নথিতে রাজ্য জানিয়েছিল, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ১.৯৮ কোটি মহিলা উপভোক্তাকে লক্ষ্মীর ভান্ডারের সুবিধা দিতে খরচ হয়েছিল ১০,১০১ কোটি টাকা। এখন প্রতি মাসে ৫০০ টাকার অনুদান ১০০০ এবং ১০০০ টাকার অনুদান বেড়ে হয়েছে ১২০০ টাকা। প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, ফলে খরচ বাড়বে।
পাশাপাশি, ভোটের প্রচারে ১১ লক্ষ উপভোক্তাকে বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতে মাথাপিছু ১.২০ লক্ষ টাকার হিসাব ধরলে প্রায় ১৩,০০০ কোটি টাকা খরচ হতে পারে। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক আবাস যোজনার বরাদ্দ মঞ্জুর না করলে প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্য এই খরচের দায়ও রাজ্যের কাঁধেই চাপবে।
নবান্ন যে তথ্য দিয়েছে, তাতে এ বছর রাজ্যের মোট আয় হতে পারে প্রায় ৩,৩৬,১১৪ কোটি টাকা। কিন্তু খরচ হতে পারে ৩,৩৬,১১৬ কোটি। অর্থাৎ, আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি। অনুদান খাতে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় সেই ফারাক আরও বাড়তে পারে। তাঁদের মতে, সম্ভবত সে কারণেই কিছু খাতে যথাসম্ভব সাশ্রয় করতে চাইছেন নবান্নের কর্তারা। সরাসরি মুখ না খুললেও প্রশাসনের অন্দরের একাংশের দাবি, ‘‘রাজ্যের বিপুল অঙ্কের প্রাপ্য আটকে রেখেছে কেন্দ্র। সেই অর্থ সময়ে পাওয়া গেলে রাজ্যের অর্থনীতিতে এতটা চাপ আসত না। তাতে তেলের বিক্রয় করে আরও ছাড় দিয়ে মানুষকে সুরাহা দেওয়া যেত। করা যেত আরও অনেক কাজ। সেটা বিরোধীদের বোঝা উচিত।’’