হাসমুখ আঢিয়া
জিএসটি চালু হওয়ার চার মাসের মধ্যেই তার হার পুরোপুরি বদলে ফেলার প্রয়োজনীয়তার কথা মানল কেন্দ্র।
রাজস্ব সচিব হাসমুখ আঢিয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘জিএসটি-র কাঠামো এখন তৈরি। এ বার এই পরোক্ষ করের হারে আমূল পরিবর্তন আনা জরুরি।’’ মূলত ছোট-মাঝারি ব্যবসায়ী ও মানুষকে স্বস্তি দিতেই হার ঢেলে সাজার ইঙ্গিত দেন তিনি। করের হার কমলে যে আদায় বাড়বে, সে কথাও মেনে নেন তিনি। পাশাপাশি তিনি কবুল করেন, ১২টিরও বেশি কেন্দ্রীয় ও রাজ্য স্তরের করের বদলে চালু হয়েছে জিএসটি। এই ব্যবস্থায় স্থিতি আনতে এক বছরের মতো সময় লাগবে। উল্লেখ্য, উৎপাদন শুল্ক, পরিষেবা কর, যুক্তমূল্য কর (ভ্যাট) ইত্যাদি মিশে দেশ জুড়ে জুলাই থেকে
চালু হয়েছে অভিন্ন এই কর ব্যবস্থা।
আঢিয়া জানান, করের হার সম্পূর্ণ ভাবে ঢেলে সাজাই এখন জরুরি। তার জন্য প্রয়োজনে একটি বিভাগের আওতায় থাকা বিভিন্ন পণ্যকে আলাদা করতে হতে পারে। আবার বিভিন্ন বিভাগে থাকা রকমারি পণ্যকে একটি বিভাগে আনাও অনেক সময় প্রয়োজন। তাঁর কথায়, ‘‘যেখানেই দেখব ছোট-মাঝারি ব্যবসায়ী কিংবা সাধারণ মানুষের উপর বাড়তি বোঝা চেপেছে, সেখানেই করের হার কমাতে চাই। তা হলে কর জমাও বাড়বে।’’
তবে রাজস্ব সচিব জানান, এর জন্য যে-সব হিসেবপত্র জরুরি, তা সেরে ফেলতে হবে সংশ্লিষ্ট কমিটিকে। তারাই ঠিক করবে, কোন কোন পণ্যে হার অদল-বদল করা দরকার। এই কমিটি তার প্রস্তাব যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পেশ করবে জিএসটি পরিষদের কাছে। আঢিয়া বলেন, ‘‘কমিটি তথ্যের ভিত্তিতে সরকারের রাজস্ব ক্ষতির অঙ্ক হিসেব করবে। বিভিন্ন হারের মধ্যে তুলনা টানাও জরুরি। তবে ন্যায্য হার ঠিক করতেই হবে। আর, তার জন্যই ঢেলে সাজতে হবে বিভিন্ন হার।’’
প্রসঙ্গত, ১০ নভেম্বর গুয়াহাটিতে বসবে জিএসটি পরিষদের ২৩ তম বৈঠক। পৌরোহিত্য করবেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। থাকবেন নানা রাজ্যের প্রতিনিধিরাও। পরিষদ ইতিমধ্যেই শিল্পমহল ও রফতানিকারীদের স্বস্তি দিতে বদল করেছে করের হার ও আগে মেটানো কর ফেরতের ব্যবস্থা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, জিএসটি নিয়ে ছোট-মাঝারি ব্যবসায়ীরা নরেন্দ্র মোদী সরকারের উপর খড়্গহস্ত। অথচ তারাই যেহেতু বিজেপি-র ভোটব্যাঙ্ক, তাই মোদী-জেটলিও জিএসটির ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার রাস্তাই খুঁজছেন বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা। তাঁদের মতে, সামনেই গুজরাতে ভোট। তার আগেই ছোট ব্যবসায়ীদের স্বস্তি দিতে তাই জিএসটি-র হার ঢেলে সাজতে চায় কেন্দ্র। উল্লেখ্য, জিএসটি চালুর পর থেকে ছোট ব্যবসায়ীদের সমস্যা সমাধানের দাবিতে সরব হয়েছে নানা রাজ্য। তার মধ্যে রয়েছেন পশ্চিম -বঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রও। এ বার তাই হার বদলের পথেই হাঁটতে চায় কেন্দ্র। আঢিয়ার মন্তব্যে সেই ইঙ্গিতই পেয়েছেন তাঁরা।
আধিয়ার যুক্তি, ‘‘জিএসটি সকলের জন্যই নতুন ব্যবস্থা। তাই থিতু হতে এক বছরের মতো সময় লাগবে।’’ এ ব্যাপারে যুক্তমূল্য করের সঙ্গেও তুলনা টানেন তিনি। আঢিয়া জানান, ২০০৫ সালে যুক্তমূল্য কর বা ভ্যাট জমানা চালু হওয়ার পরে বিভিন্ন মহল থেকে আপত্তি ওঠে। আন্দোলনও চলে এক বছর ধরে। উল্লেখ্য, বিক্রয়করের বদলে বদলে ভ্যাট চালু হয়। তা বসানো হতো রাজ্য স্তরে।