আয়কর দফতরের নোটিস মানেই আমাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। নানা কারণেই আপনি ট্যাক্স নোটিস পেতে পারেন। সব সময় হয়ত সেখানে উদ্বেগের আদৌ কোনও কারণ নেই। আসুন, দেখে নিই কোন কোন কারণে আপনার কাছে আসতে পারে আয়কর-নোটিস।
শেয়ারে লগ্নির ক্ষেত্রে লং টার্ম ক্যাপিটাল গেন (এলটিসিজি)-এর সঠিক হিসাব না দেওয়া থাকলে আপনি আয়কর নোটিস পেতে পারেন। নোটিস না পেতে চাইলে এলটিসিজি-র হিসাব ঠিকমতো কষে তারপরেই আয়কর রিটার্ন জমা দিন।
আপনি যদি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল না করেন, তা হলে আয়কর দফতর থেকে রিমাইন্ডার নোটিস আসবে। যদি কারও উপার্জন করযোগ্য হয়, তা হলে তিনি ট্যাক্স রিটার্ন ফাইল করতে বাধ্য।
আয় গোপন করে বেঁচে যাওয়ার কোনও পথ নেই। কারণ আয়কর বিভাগ আপনার ব্যাঙ্ক লেনদেন, কাজের জায়গা, ভাড়াটে, দুই দেশের মধ্যে তথ্যের আদানপ্রদান-সহ সব জায়গা থেকে আপনার উপার্জন জানতে পেরেই যাবে। তাই আপনি যদি উপার্জনের কোনও অংশ রিটার্নে না দেখান, আর সেই উপার্জনের হদিশ আয়কর বিভাগ পেয়ে যায়, তা হলে আপনি ট্যাক্স নোটিস পেতেই পারেন।
তাই আপনি সব ফিনান্সিয়াল স্টেটমেন্ট সংগ্রহ করুন। তারপর সেখান থেকে আপনার উপার্জনের উৎসের তালিকা বানান। তারপর রিটার্ন দাখিল করুন।
ধরুন আপনি আপনার স্ত্রী বা আপনার স্বামীর নামে কিছু বিনিয়োগ করলেন। কিন্তু সেটা আইটিআর দাখিলের সময় ভুলে গেলেন বা ইচ্ছে করে গোপন করলেন। তা হলে কিন্তু আপনার কাছে আসতে পারে নোটিস। কারণ আয়কর দফতর যদি দেখে, ওই বিনিয়োগ করা হয়েছে আয়করদাতার উপার্জন থেকে এবং ওই বিনিয়োগ আয়করের আওতায় পড়ে, তা হলে আপনার কাছে নোটিস আসার সম্ভাবনা প্রবল।
তাই রিটার্ন দাখিলের আগে দেখে নিন আপনার স্ত্রী বা স্বামীর এমন কোনও উপার্জন আছে কিনা, যা নাকি আপনার উপার্জনের সঙ্গে সম্পর্কিত। যদি তা হয়ে থাকে, তা হলে অবশ্যই দাখিল করুন রিটার্নে।
আপনি আয়কর রিটার্ন দাখিল করলেন, কিন্তু সেখানে কিছু ভুল থেকে গেল। তা হলে কিন্তু আপনি নোটিস পেতে পারেন। যদি সঠিক ফর্মে আয়কর রিটার্ন দাখিল না করেন, তা হলেও আয়কর দফতর থেকে ইনকাম ট্যাক্স অ্যাক্ট-এর ১৩৯ (৯) ধারায় ডিফেক্টিভ রিটার্ন নোটিস পাবেন। একবার নোটিস পেলে পনেরো দিনের ভিতরে আপনাকে উত্তর দিতে হবে।
আপনাকে সংশোধিত আইটিআর দাখিল করতে হবে। সেটাও চেষ্টা করুন নির্দিষ্ট সময়সীমা বা ডেডলাইনের ভিতরেই সম্পূর্ণ করতে। তাই প্রথমেই দাখিলের আগে ভাল করে দেখে নিন ফর্ম সঠিক আছে কিনা।
বেশি অঙ্কের লেনদেন করলে আপনার কাছে নোটিস আসতে পারে। আয়কর দফতর সেই করদাতাদের চিহ্নিত করে রাখেন, যাঁরা বেশি অঙ্কের লেনদেন করেন কিন্তু আয়কর রিটার্নে তা জানান না। যেমন ধরুন, আপনি যদি ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বড় অঙ্কের লেনদেন করেন, বড় অঙ্কের অর্থিক বিনিয়োগ করেন, অথবা কোনও সম্পত্তি কেনেন, কিন্তু রিটার্নে দাখিল না করেন, তবে নোটিস আসবে।
নোটিস-প্রাপ্তি এড়াতে আয়করদাতাকে তাঁর উপার্জনের বিশ্বাসযোগ্য উৎস জানাতে হবে। আয়কর দফতর আপনার যুক্তি মেনে নেন, সমস্যা মিটে গেল। নয়তো আয়কর দফতর পদক্ষেপ করতে পারে। স্ক্রুটিনি নোটিসের ক্ষেত্রেও আয়করদাতাকে এমন তথ্য দিতে হবে যাতে আয়কর দফতর সন্তুষ্ট হয়।
যে কোনও সময়ে আপনি আয়কর দফতরের আতস কাচের তলায় আসতে পারেন। যদি আপনি কোনও নোটিস, বিশেষত, ১৪৩(২) ধারায় নোটিস পান, তা হলে বুঝতে হবে আপনার দাখিল করা রিটার্ন অ্যাসেসিং অফিসার নজরে রেখেছেন। স্ক্রটিনি সংক্রান্ত কোনও নোটিস পেলে প্রথমেই আপনি যা করবেন তা হল, নোটিসের ভ্যালিডিটি চেক করবেন। এরপর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উত্তর দিন।
যদি আপনি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সাড়া দিতে না পারেন, তবে ইনকাম ট্যাক্স অ্যাক্ট-এর ২৭২এ ধারায় আপনাকে আয়কর দফতর ১০ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করতে পারে। তাই যদি আপনার কাছে যথার্থ উত্তর মজুত না থাকে তবে জরিমানা এড়াতে প্রফেশনাল চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট-এর সঙ্গে কথা বলুন।
নোটিস এড়াতে আপনার সব উপার্জন দাখিল করুন। বকেয়া আয়কর দাখিল করুন। সব রকম নথিপত্র হাতের কাছে মজুত রাখুন, যাতে প্রয়োজনে দাখিল করতে পারেন।
বিগত আর্থিক বর্ষের আয়কর বকেয়া থাকলেও পেতে পারেন নোটিস। অ্যাসেসিং অফিসার আপনাকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন, যদি আপনি গত বছরের রিফান্ড অ্যামাউন্টের সঙ্গে বকেয়া কর অ্যাডজাস্ট করা যায়।
নোটিস এড়াতে খেয়াল রাখুন যাতে কোনও কর বকেয়া না থাকে। সময় থাকতেই নির্দিষ্ট সময় অন্তর চেক করতে থাকুন আপনার ই-ফাইলিং পোর্টাল। যদি বকেয়া থাকে, তা হলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা মিটিয়ে ফেলুন। সাধারণত নোটিস জারির দিন থেকে তিরিশ দিন সময় দেওয়া হয় বকেয়া মিটিয়ে ফেলার জন্য।
ইনকাম ট্যাক্স অ্যাক্ট-এর বলে আয়কর দফতরের হাতে আপনার আইটি রিটার্ন পুনর্মূল্যায়ন করার ক্ষমতা আছে। যদি অ্যাসেসিং অফিসারের মনে হয় আপনি আয়কর ফাঁকি দিয়েছেন, তা হলে আইটি রিটার্ন পুনর্মূল্যায়নের পরে ২৭০এ ধারায় শাস্তিযোগ্য আপরাধ হবে। তাই আয়কর রিটার্ন ঠিক ভাবে দাখিল করুন এবং সময়ে দাখিল করুন।