উত্তাল। ক্ষোভে জ্বলছে মন্দসৌর। পিটিআইয়ের ফাইল চিত্র।
চাষিদের বিক্ষোভ আর ভোট-রাজনীতির কথা মাথায় রেখে কৃষি-ঋণ মকুবের পথে হাঁটছে একের পর এক রাজ্য। অথচ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্ট বলছে, রাজকোষ ঘাটতি আশঙ্কাজনক ভাবে ফুলেফেঁপে উঠেছে তাদের। ২০১৫-’১৬ আর্থিক বছরে সমস্ত রাজ্য মিলিয়ে তার অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ৪ লক্ষ ৯৩ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা। এমনিতে বাজেটের হিসেব অনুযায়ী ২০১৬-’১৭ অর্থবর্ষে তা খানিকটা কমে আসার কথা। কিন্তু কৃষি-ঋণ মকুবে একে-অন্যকে ‘টেক্কা দেওয়া’র এই বাজারে ঘাটতির ছবি বরং আরও মলিন হতে পারে বলে আশঙ্কা অনেকের।
রাজ্যগুলির আর্থিক হাল কেমন, তা নিয়ে শীর্ষ ব্যাঙ্কের সদ্য প্রকাশিত রিপোর্টে চোখ রাখলেই স্পষ্ট যে, ঘাটতির এই অসুখ অধিকাংশ রাজ্যে কতটা গভীর। উত্তরপ্রদেশে গত অর্থবর্ষে তার অঙ্ক ৬৪,৩২০ কোটি টাকা। মহারাষ্ট্রে ৩৭,৯৫০ কোটি।
অথচ এই উত্তরপ্রদেশেই গত বিধানসভা নির্বাচনে ভোট-বৈতরণী পার হতে কৃষি-ঋণ মকুবের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি। মসনদ দখলের পরে সেই কথা রেখে ছোট-মাঝারি চাষিদের প্রত্যেকের ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ধার মাফের কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। যার ফলে অন্তত ৩৬ হাজার কোটি টাকার বোঝা চাপতে চলেছে তাঁর রাজ্যের ঘাড়ে। একই ছবি মহারাষ্ট্র সমেত অন্য অনেক রাজ্যেও। আরব সাগরের তীরের ওই রাজ্যে ৩৪ হাজার কোটির বোঝা ঘাড়ে নিয়ে কৃষি-ঋণ মাফের কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস। অথচ ২০১৫-’১৬ সালেই তাদের রাজকোষ ঘাটতির অঙ্ক ৩৭,৯৫০ কোটি টাকা।
রাজনীতি। ঋণ মাফের ঘোষণার পরে কর্নাটক বিধানসভা। পিটিআইয়ের ফাইল চিত্র।
অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি স্পষ্ট জানিয়েছেন, কোনও রাজ্যের ঋণ মকুবের দায় কেন্দ্র নেবে না। তা বইতে হবে সংশ্লিষ্ট রাজ্যকেই। তা ছাড়া, দেশের রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা শিথিলের যে কোনও প্রশ্ন নেই, তা-ও বারবার বলেছেন তিনি। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলছেন, আর্থিক শৃঙ্খলা কিংবা অর্থনীতির স্বাস্থ্য ভাল থাকা তো শুধু কেন্দ্রের বিষয় নয়। রাজ্যগুলির ঘাড়ে এ ভাবে বিপুল রাজকোষ ঘাটতির বোঝা চেপে থাকলে কী ভাবে পোক্ত থাকতে পারে দেশের অর্থনীতির ভিত? লখনউয়ের মসনদ জিততে গিয়েই নতুন করে কৃষি-ঋণ মাফের বাঁধ ভেঙে ফেলা হল কি না, সে প্রশ্নও তুলছেন অনেকে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ১৯৯০-’৯১ থেকে ২০১৬-’১৭ সালের মধ্যে সমস্ত রাজ্যেরই রাজকোষ ঘাটতি বেড়েছে বহু গুণ। বিশেষত গত এক দশকে তা বেড়েছে হুড়মুড়িয়ে। ধাক্কা খেয়েছে আর্থিক শৃঙ্খলা। তার উপরে কৃষি-ঋণ মাফের এই হিড়িকে সেই সমস্যা আরও আরও গভীর হবে বলে আশঙ্কা অনেকের।