প্রতীকী চিত্র
কেন্দ্রের নেতা-মন্ত্রীরা অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়ার লক্ষণ খুঁজে পেলেও, বৃদ্ধি নিয়ে বহু আর্থিক উপদেষ্টা ও রেটিং সংস্থার পূর্বাভাস আগের থেকে কমেছে। এপ্রিল-জুনে দেশের জিডিপি ২৩.৯ শতাংশে তলিয়ে যাওয়ার পরে সংশ্লিষ্ট মহল উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, সঙ্কোচন হওয়ারই ছিল। কিন্তু তা বলে এতটা! এই পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশের আশঙ্কা, আর্থিক ক্ষেত্রের অন্তত কিছুটা উন্নতি না-হলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঘোষণা করা ঋণ পুনর্গঠন প্রকল্পের সাফল্য চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
এর আগে যে কর্পোরেট ঋণ পুনর্গঠন প্রকল্প আনা হয়েছিল তার থেকে এ বারেরটিকে বেশি নম্বর দিলেও, অনেকের প্রশ্ন দীর্ঘ মেয়াদে তার লাভ এবং ঋণ শোধের সমস্যার স্থায়ী সমাধান হওয়া নিয়ে। তাঁদের আশঙ্কা, পুনর্গঠনের পরে আপাতত বেশ কিছুটা সুবিধা হয়তো পাবে বিভিন্ন সংস্থা বা ব্যক্তি। কিন্তু অর্থনীতি ছন্দে ফিরতে যদি আরও অনেক সময় নেয়, তবে পুরনোটির মতোই নতুন পুনর্গঠন প্রকল্পের জেরেও অনুৎপাদক সম্পদ আরও বেড়ে ব্যাঙ্কগুলিকে বিপদে ফেলতে পারে। যার জেরে চাপ বাড়তে পারে অর্থনীতির।
শেয়ার লেনদেন সংস্থা আনন্দ রাঠির বিশেষজ্ঞদের মতো অনেকেই বলছেন, এর সাফল্য একাধিক ‘যদি’র উপর নির্ভর করছে। যেমন, যদি অর্থনীতির হাল দ্রুত ফেরে, যদি ঋণদাতা সংস্থাগুলি দক্ষতার সঙ্গে প্রকল্পটি রূপায়ণ করতে পারে বা যদি অর্থনীতির সুদিন শুরুর আগেই সংস্থার কোমর না-ভাঙে। যে কারণে তাঁদের আশঙ্কা, পুনর্গঠিত ধারের বড় অংশই পরে অনুৎপাদক সম্পদ হতে পারে।
একাংশের আশঙ্কা
• দেশের আর্থিক পরিস্থিতির কিছুটা অন্তত উন্নতি না-হলে ঋণ পুনর্গঠন প্রকল্প সফল হওয়া মুশকিল।
• বর্তমান আর্থিক সঙ্কটের নিরিখে স্বল্প মেয়াদে এটি কাজে দিলেও, দীর্ঘ মেয়াদে তা কতটা সুরাহা দেবে? উল্টে যে ঋণ পুনর্গঠিত হবে, তার বড় অংশ আগামী দিনে অনুৎপাদক সম্পদে পরিণত হবে না তো?
• ঋণদাতা ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি কতটা দক্ষতার সঙ্গে প্রকল্পটি কাজে লাগাতে পারবে, সন্দেহ আছে।
• প্রকল্পটি এত জটিল যে, অনেকের পক্ষেই এর সুবিধা নেওয়া মুশকিল।
তবে স্টেট ব্যাঙ্কের বেঙ্গল সার্কলের চিফ জেনারেল ম্যানেজার আর কে মিশ্র মতে, “বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক সংস্থাই ইচ্ছা থাকলেও ঋণ শোধ করতে পারবে না। ফলে তাদের অ্যাকাউন্টগুলির অনুৎপাদক সম্পদে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেটা হলে আর্থিক সংস্থান করতে ব্যাঙ্ক-সহ ঋণদাতা সংস্থাগুলির মোটা টাকা আটকে থাকবে। ঋণ পুনর্গঠন সেই সমস্যা কমাবে।’’ ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের প্রাক্তন সিএমডি ভাস্কর সেন বলছেন, ‘‘প্রকল্পটিকে সফল করতে সকলের সচেষ্ট হওয়া জরুরি।’’
শ্রেয়ী ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফিনান্সের চেয়ারম্যান হেমন্ত কানোরিয়া অবশ্য বলেন, “আমাদের মতো এনবিএফসির থেকে যারা ঋণ নিয়েছে, তাদের অনেকেই সমস্যায় পড়েছে। ফলে তাদের ঋণ পুনর্গঠনের সুবিধা দিতে হবে। কিন্তু আমরা ব্যাঙ্কের থেকে যে ঋণ নিয়েছি, তাতে সেই সুবিধা নেই।’’