ফাইল চিত্র।
গৃহস্থের হাত রোজই পুড়ছে মূল্যবৃদ্ধির আগুনে। এই অবস্থায় অনেকে মনে করেছিলেন, এ বারের ঋণনীতিতে বুঝি সুদের হার বাড়াবে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। কিন্তু তা হয়নি। মূল্যবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৪.৫% থেকে বাড়িয়ে ৫.৭% করলেও, সুদের হার (রেপো রেট বা যে সুদের হারে শীর্ষ ব্যাঙ্ক স্বল্প মেয়াদে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে ঋণ দেয়) একই রাখা হয়েছে। এই নিয়ে টানা ১১টি ঋণনীতিতে তা অপরিবর্তিত থাকল। লক্ষ্য সেই একই। কম সুদে শিল্পকে পুঁজি জুগিয়ে আর্থিক বৃদ্ধির হার বাড়াতে সাহায্য করা। তবে একটা পরিবর্তন হয়েছে। তা হল, চড়া মূল্যবৃদ্ধিকে নাগালে রাখতে অবস্থান বদলের বার্তা। অর্থাৎ, ভবিষ্যতে প্রয়োজনে সুদ বাড়ানো হতে পারে। এ ছাড়াও রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের লক্ষ্য আগামী কয়েক বছরে বাজারে নগদের জোগান কমিয়ে আনা। চলতি অর্থবর্ষে আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাসও ৭.৮% থেকে কমিয়ে ৭.২% করেছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক।
রেপো রেট অপরিবর্তিত রাখায় এক দিকে যেমন শেয়ার বাজার চাঙ্গা হয়েছে, তেমনই মাথা তুলেছে ঋণপত্রের ইল্ড। শুক্রবার সেনসেক্স ৪১২ পয়েন্ট বেড়েছে। ইল্ড ৬.৯১% থেকে এক লাফে পৌঁছে গিয়েছে ৭.১১ শতাংশে। মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম পরানো না গেলে ঋণপত্রের দাম আরও কমে ইল্ডকে ঠেলে তুলতে পারে।
মূল্যবৃদ্ধিই যে এখন অর্থনীতির সামনে প্রধান বাধা, তা অবশ্য রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক স্পষ্ট মেনে নিয়েছে। বস্তুত, সাধারণ মানুষের কাছেও এটাই প্রধান সমস্যা। এই অবস্থাতেও শীর্ষ ব্যাঙ্ক সুদ না বাড়ানোয় সুদ নির্ভর মানুষের কিছুটা হতাশ। চড়া মূল্যবৃদ্ধির মোকাবিলায় আমেরিকা ও ব্রিটেন সুদ বাড়ানোর পরে তাঁদের মনে ক্ষীণ হলেও আশা তৈরি হয়েছিল, ভারতের শীর্ষ ব্যাঙ্কও হয়তো এ বারে একই পথে হাঁটবে।
ফেব্রুয়ারিতে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ৬.০৭%। এর পরে জ্বালানি এবং ভোজ্য তেলের দাম আরও বেড়েছে। এর জেরে মার্চে মূল্যবৃদ্ধি কোন জায়গায় পৌঁছেছে, তা জানা যাবে শীঘ্রই। পেট্রল-ডিজ়েলের দাম লাগামছাড়া হওয়ায় দাম বাড়ছে বহু পণ্যের। ১ এপ্রিল থেকে বহু অত্যাবশ্যক ওষুধের দামও বেড়েছে। অথচ জমার উপরে সুদের হার একই জায়গায় দাঁড়িয়ে। ব্যাঙ্কে জমায় মানুষ এখন সর্বোচ্চ ৫.৭৫% হারে সুদ পান। প্রবীণদের ক্ষেত্রে তা ৬.৫০%। প্রযোজ্য কর বাদ দিলে সুদ বাবদ প্রকৃত আয় অবশ্য আরও কম। আবার খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার ইতিমধ্যেই ৭ শতাংশে পৌঁছে গিয়ে থাকলে সুদ বাবদ প্রকৃত আয় শূন্যেরও নীচে। এতে বেশি সমস্যায় পড়েছেন অবসরপ্রাপ্ত মানুষেরা। যাঁরা তিন বছর বা তারও আগে অবসরের টাকা অনেক বেশি সুদে বিভিন্ন প্রকল্পে রেখেছিলেন, তা মেয়াদ শেষের পরে নতুন করে ওই প্রকল্পেই রাখতে গেলে সুদ পাচ্ছেন অনেক কম। গত ১ এপ্রিল অনেক মানুষ কাজ থেকে অবসর নিয়েছেন। জমানো টাকা কোথায় রাখা যায় ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছেন না তাঁরাও। তবে এপ্রিল-জুনের মেয়াদে ডাকঘর জমা প্রকল্পগুলিতে সুদের হারের হেরফের করা হয়নি। জাতীয় সঞ্চয়পত্রে সুদের হার একই থাকায় ভারত সরকারের সেভিংস বন্ডেও সুদ (৭.১৫%) আপাতত একই থাকবে। আজকের দিনে যে সমস্ত নির্ভরযোগ্য জায়গায় টাকা রাখা যায়, তার একটি তালিকা সারণিতে দেওয়া হল।
(মতামত ব্যক্তিগত)