ডিসেম্বরে আরবিআই রেপো রেট আরও ৩৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানোর পরে আবার ঋণে সুদের হার বাড়িয়েছে বেশ কিছু ব্যাঙ্ক। প্রতীকী ছবি।
একই সঙ্গে খুচরো ও পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি খানিকটা করে নামায় স্বস্তি ফিরেছিল দেশে। কিন্তু স্থায়ী হয়নি। আমেরিকার শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারাল রিজ়ার্ভ ফের ৫০ বেসিস পয়েন্ট সুদ বাড়ানোয় এবং পরের বছরে আরও অন্তত ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেওয়ায় মুষড়ে পড়ে শেয়ার বাজার। হতাশ হয়ে পড়েন লগ্নিকারীরা। তাঁরা মনে করেছিলেন মূল্যবৃদ্ধি একটুনামায় সুদের দাওয়াইয়ে ক্ষান্ত দেবে আমেরিকা। বিশেষত এর জেরে যেহেতুআর্থিক মন্দার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ভারতে ডিসেম্বরে আরবিআই রেপো রেট (যে সুদে ব্যাঙ্কগুলিকে স্বল্পমেয়াদে ধার দেয় তারা) আরও ৩৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানোর পরে আবার ঋণে সুদের হার বাড়িয়েছে বেশ কিছু ব্যাঙ্ক। ঋণগ্রহীতাদের মাসিক কিস্তির (ইএমআই) বোঝা ভারী হয়েছে। তবে সুখের কথা হল, সুদ বেড়েছেআমানতেও। একটি বড় মাপের বেসরকারি ব্যাঙ্ক প্রবীণদের সর্বাধিক সুদ দিচ্ছে ৭.৭৫% হারে এবং তা ৫ থেকে ১০ বছরের বড় মেয়াদে। অন্যদের ১৫ মাস থেকে ১০ বছরে দেওয়া হচ্ছে ৭%। স্টেট ব্যাঙ্কে প্রবীণদের সর্বাধিক সুদ ৭.২৫%। ৬০০ দিনের মেয়াদে পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কে তা ৭.৫০%। সাধারণ গ্রাহকের ৭%।
এ দিকে, ডিসেম্বরের ১৯ থেকে ২৩ (এই অর্থবর্ষে তৃতীয় দফা) এবং ৬ থেকে ১০ মার্চ (চতুর্থ)— দু’দফায় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক বাজারে ছাড়বে ভারত সরকারের গোল্ড বন্ড। তৃতীয় দফায় সোনা বন্ডের দাম গ্রাম প্রতি ৫৪০৯ টাকা চূড়ান্ত হয়েছে। অনলাইনে আবেদন জানালে এবং দাম মেটালে ছাড় মিলবে। অন্য দিকে, বিয়ের মরসুমে সোনার দর ক্রমশ চড়েছে। শুক্রবার ১০ গ্রাম পাকা সোনার (২৪ ক্যারাট) দাম ছিল ৫৪,৫০০ টাকা।
মূল্যবৃদ্ধির হার মাথা নামানোয় সেনসেক্স গত সপ্তাহে দু’দিনে বেড়েছিল ৫৪৮ পয়েন্ট। বুধবার রাতে আমেরিকায় সুদ বৃদ্ধি সপ্তাহের শেষ দু’দিনে তাকে টেনে নামায় ১৩৪০ পয়েন্ট। সূচক থামে ৬১,৩৩৮ অঙ্কে। নিফ্টি থিতু হয় ১৮,২৬৯-এ। ডিসেম্বরের প্রথম দিনে ৬৩,২৮৪ অঙ্কে পৌঁছে নজির গড়া সেনসেক্স পরের দু’সপ্তাহে খুইয়েছে ১৯৪৬।
নভেম্বরে দেশে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার নেমেছে ৫.৮৮ শতাংশে। ১১ মাস পরে তা ফিরেছে আরবিআইয়ের বেঁধে দেওয়া সহনসীমার (৬%) নীচে। পাইকারি মূল্যবৃদ্ধিও কমে ৫.৮৫%। ২১ মাসে সর্বনিম্ন। মূল্যবৃদ্ধি এ ভাবে মাথা নামালে সুদ বৃদ্ধির হারও কমবে, আশা লগ্নিকারীদের। তাই বাজার চাঙ্গা হয়। তার উপরে অক্টোবরে শিল্পোৎপাদন ৪% সঙ্কুচিত। ২৬ মাসে সবচেয়ে কম। ফলে আর্থিক কর্মকাণ্ডে গতি আনার স্বার্থেও ভবিষ্যতে সুদ বাড়ানোর ব্যাপারে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক আরও তলিয়ে ভাববে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে গত সপ্তাহের শেষে ভারতে বাজারের গোঁত্তা খাওয়ার কারণ যতটা না দেশীয়, তার থেকে অনেক বেশি আন্তর্জাতিক। আমেরিকা, ব্রিটেন এবং ইউরোপীয় অঞ্চলে সুদ বেড়েছে আরও ৫০ বেসিস পয়েন্ট করে। এতে মন্দা ত্বরান্বিত হতে পারে, এই আশঙ্কা ধাক্কা দেয় ভারতেও। অবশ্য ৬৩ হাজারে ওঠা সেনসেক্সে সংশোধনের পতন হওয়ারই ছিল। তা একটু এগিয়ে গেল, এই যা। ছোট-বড় বহু সংস্থার শেয়ার দর বেশ খানিকটা করে নেমেছে।
(মতামত ব্যক্তিগত)