২০০৯ সালের পুনর্মিলন উৎসবে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে শিল্পপতি রতন টাটা। ছবি: এক্স হ্যান্ডেল থেকে।
৮৭ বছর বয়সে না ফেরার দেশে চলে গিয়েছেন প্রাক্তন ছাত্র। রয়ে গিয়েছে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা তাঁর শিল্পসাম্রাজ্য। প্রাক্তনীর সেই সাফল্য আজও বুকে করে বয়ে বেড়াচ্ছে আটলান্টিকের পারের বিশ্ববিদ্যালয়। যেখানকার ক্লাসরুম, করিডোর, লাইব্রেরি তথা ক্যাম্পাসেই যে নিত্য আনাগোনা ছিল ভবিষ্যতের এই শিল্পপতির।
বুধবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন শিল্পপতি রতন টাটা। তাঁর প্রয়াণের খবর মিলতেই তামাম শিল্পজগতের পাশাপাশি শোকস্তব্ধ আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ও। কারণ, এখান থেকেই স্নাতকের ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন প্রবাদপ্রতিম জামশেদজি টাটার উত্তরসূরি।
১৯৬২ সালে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকের ডিগ্রি পান রতন টাটা। তাঁর বিষয় ছিল স্থাপত্য ও কাঠামোগত প্রকৌশল (আর্কিটেকচার অ্যান্ড স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং)। প্রাক্তনীর প্রয়াণে শোকাহত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তিকালীন প্রেসিডেন্ট মাইকেল কোটলিকফ জানিয়েছেন, ‘‘একজন আন্তর্জাতিক স্তরের শিল্পপতি হওয়া সত্ত্বেও রতন টাটা ছিলেন শান্ত ও নম্র স্বভাবের মানুষ। অন্যদের জন্য উদ্বেগ ও উদারতা তাঁকে একটা অন্য মানুষে রূপান্তরিত করেছিল। আর এ জন্যই ভারত ও ভারতের বাইরে লক্ষ লক্ষ মানুষের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য কাজ করে গিয়েছেন তিনি। আমাদের প্রতিষ্ঠানের বিশ্বব্যাপী প্রভাবকে প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রেও তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।’’
পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে পুরোদস্তুর শিল্প জগতে প্রবেশের পরেও নিজের শিক্ষাঙ্গনকে ভোলেননি রতন টাটা। পরবর্তী কালে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হন তিনি। এই প্রতিষ্ঠানে যাঁরা অর্থসাহায্য করেছেন, সেই সমস্ত আন্তর্জাতিক খ্যাতনামীদের তালিকায় সবার প্রথমে থেকেছে রতন টাটার নাম।
২০০৮ সালে ‘টাটা কর্নেল ইনস্টিটিউট ফর অগ্রিকালচার অ্যান্ড নিউট্রিশন’ নামের একটি গবেষণা সংস্থা তৈরি করেন জামশেদজি টাটার এই উত্তরসূরি। ২০১৭ সালে নিউ ইয়র্কের কর্নেল রুজভেল্ট দ্বীপের ক্যাম্পাসে গড়ে ওঠে ‘টাটা ইনোভেশন সেন্টার’। যার জন্য পাঁচ কোটি ডলার খরচ করতে পিছপা হননি রতন টাটা।
এ ছাড়া তাঁর উদ্যোগে তৈরি হওয়া ‘টাটা স্কলারশিপ ফান্ড’ থেকে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত পড়ুয়াদের অর্থসাহায্য করা হয়। চলতি বছরে মোট ৩০৫ জন পড়ুয়াকে এই তহবিল থেকে বৃত্তি দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে ৮৯ জন ভারতীয়।
১৯৫৯ সালে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য ভর্তি হন রতন টাটা। কিন্তু স্থাপত্যবিদ্যার কৌশল আয়ত্ত করতে দু’বছরের মাথায় বিষয় পরিবর্তন করেন তিনি। ২০০৯ সালের পুনর্মিলন উৎসবে সহপাঠীরা তাঁকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র তৈরি করেছিলেন। সেখানে স্থাপত্যবিদ্যা তাঁর কর্মজীবনে কী ভাবে কাজে লেগেছে, তা কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনীকে অকপটে বলতে শোনা গিয়েছিল।