ইয়েস ব্যাঙ্ক কাণ্ডে এখন সংবাদ শিরোনামে রাণা কপূরের নাম। তাঁর বাণিজ্য-সাম্রাজ্যের পরবর্তী কাণ্ডারি তাঁর তিন কন্যা— রাধা, রাখি এবং রোশনী। ইয়েস ব্যাঙ্কের ভরাডুবির পরে বাবার সঙ্গে এই তিন কন্যাও বিতর্কের শীর্ষে। তবে অন্যদিকে তাঁরা ছিলেন দেশের মহিলা উদ্যোগপতিদের মধ্যে অগ্রণী।
রাণা ও বিন্দু কপূরের বড় মেয়ে রাধার জন্ম ১৯৮৪ সালে, দিল্লিতে। স্কুলজীবনের পরে উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি পাড়ি দেন নিউ ইয়র্ক। সেখানে পার্সনস স্কুল অব ডিজাইন থেকে ফাইন আর্টস-এ স্নাতক হন। কিন্তু শেষ অবধি পা রাখেন বাবার দেখানো পথেই। যদিও শিল্পপতি বাবার ছত্রছায়া থেকে বেরিয়ে এসে তিন কন্যাই আলাদা পরিচয় গড়ে তুলেছেন।
বছর তিনেক আগে তিন বোন গড়ে তোলেন নিজস্ব সংস্থা ‘দ্য থ্রি সিস্টার্স’। বিনিয়োগ করেন প্রায় ৯৬৫ কোটি টাকা। পাশাপাশি, বাবার ব্যবসাতেও সক্রিয় ভূমিকা ছিল তিন কন্যারই। কারণ রাণা কপূর মনে করেন, যে কোনও উদ্যোগপতির কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা উচিত তাঁর সন্তানদেরও।
বিদেশে পড়াশোনা শেষে ২০০৯-এ দেশে ফিরে আসেন রাধা। ক্রিয়েটিভ অন্ত্রপ্রনর হিসেবে বহু ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তিনি। তাঁর সংস্থাগুলির মধ্যে অন্যতম ‘ডু ইট ক্রিয়েশনস’ এবং ইন্টেরিয়র জিজাইনিং-এর ‘ব্র্যান্ড ক্যানভাস’। এ ছাড়াও আছে লন্ড্রি ও ড্রাই ক্লিনিং-এর সংস্থা ‘প্রেস্টো’। ২০১৩ সালে ‘ইন্ডিয়ান স্কুল অব ডিজাইন অ্যান্ড ইনোভেশন’ প্রতিষ্ঠা করেন রাধা। তিনি এই সংস্থার এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর।
রিটেল, সংবাদমাধ্যম এবং ক্রীড়া— এই তিন ক্ষেত্রেই বিনিয়োগ করেছেন রাধা। প্রো কবাডি দল ‘দবাং দিল্লি’ এবং হকি লিগ-এর ‘দবাং মুম্বই’-এর মালিকানা আছে রাধার।
রাধা নিজেও ক্রীড়ায় উৎসাহী। ভালবাসেন গল্ফ, ক্রিকেট ও কবাডি। নিজে গল্ফ খেলেওছেন এক সময়ে। নিয়মিত যোগাভ্যাসও করেন তিনি।
২০১৭ সালের ২৬ জানুয়ারি রাধা বিয়ে করেন আদিত্য খন্নাকে। দিল্লির বাসিন্দা আদিত্য পেশায় ফিনান্সিয়াল ইনভেস্টর। আদিত্য-রাধার বিয়ের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন দেশের বিভিন্ন মহলের নামজাদা ব্যক্তিত্বরা। শাহরুখ-সলমনের পাশাপাশি সেই অনুষ্ঠানে ছিলেন অনিল অম্বানীর মতো শিল্পপতিও।
রাধার মতো তাঁর দুই বোনেরও আলাদা পরিচয় আছে। মেজো বোন রাখি কপূর আইপিএলে একসময় নজর কেড়েছিলেন। সুন্দরী এই কন্যা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছিলেন। এ ছাড়াও তিনি ছিলেন ইয়েস ব্যাঙ্কের ম্যানেজিং ডিরেক্টর।
লন্ডনের উড়ানে চাপার আগে, মুম্বই বিমানবন্দরে আটকানো হয়েছে রাণার মেয়ে রোশনী কপূরকে। কারণ রাণার বিরুদ্ধে আর্থিক নয়ছয় মামলার তদন্তে দুই বোন ও মায়ের সঙ্গে নাম জড়িয়েছে তাঁরও। রাণার পরে, রোশনী ও পরিবারের অন্য সদস্যদের নামে লুক-আউট নোটিস জারির পরেই এই পদক্ষেপ।
ইডি-র অভিযোগ, তদন্তে সহযোগিতা করেননি রাণা। অথচ আর্থিক নয়ছয়ে তাঁর শামিল থাকার ইঙ্গিত মিলেছে ভূরি ভূরি। জানা গিয়েছে, শোধ না-হওয়ার আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও আবাসন প্রকল্পে ঋণদাতা দিওয়ান হাউসিং ফিনান্সকে (ডিএইচএফএল) ইয়েস ব্যাঙ্ক ঋণ দিয়েছিল শুধু রাণার কথাতেই। যে ডিএইচএফএলে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে আগেই।
রাণা, ডিএইচএফএল এবং ডু-ইট আরবান ভেঞ্চার্সের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে সিবিআই-ও। অভিযোগ, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, দুর্নীতি ও প্রতারণার। ইডি-র অভিযোগ, ইয়েস ব্যাঙ্ক থেকে ধার নেওয়ার বিনিময়ে রাণার পরিবারের সংস্থা ডু ইট-কে ঋণ দেয় ডিএইচএফএল। যার ডিরেক্টর রাণার স্ত্রী বিন্দু কপূর, তাঁর তিন মেয়ে।
রাণা অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেন। মুম্বই আদালতে দাঁড়িয়ে তাঁকে ছলছল চোখে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আমি তদন্তে সহযোগিতাই করতে চাই। দিনরাত চোখের পাতা এক না করা সত্ত্বেও সাহায্য করতে আগ্রহী।’’ রাণার আইনজীবীরও দাবি, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ইয়েস ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলার সীমা বাঁধায় ক্ষুব্ধ মানুষ। তাই তাঁর মক্কেলকে বলির পাঁঠা করা হচ্ছে। ( ছবি: আর্কাইভ ও ফেসবুক)