রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন। —ফাইল চিত্র।
আগামী আড়াই দশকের মধ্যে ভারতকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার বার্তা দিচ্ছে মোদী সরকার। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে এই লক্ষ্যের যৌক্তিকতা নিয়েই কার্যত প্রশ্ন তুললেন রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন। যার প্রধান কারণ হিসেবে তুলে ধরলেন দেশবাসীর বড় অংশের অপুষ্টিকে।
রাজনের বক্তব্য, অপুষ্টির সমস্যা দূর করা এবং মানবসম্পদের উন্নয়নে জোর না দিলে উন্নত দেশ হয়ে ওঠা কঠিন। তাঁর প্রশ্ন, এখন যে নাবালক অপুষ্টির শিকার, সে ১০ বছর পরে শ্রম বাহিনীতে যোগ দিলে কি দেশকে শক্তিশালী বানানো সম্ভব?
পেনসেলভেনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক রোহিত লাম্বার সঙ্গে লেখা নিজের নতুন বইয়ের উদ্বোধন উপলক্ষে রাজন ভারতে রয়েছেন। বিভিন্ন রাজ্যে এই সংক্রান্ত একাধিক কর্মসূচিতে তিনি মন্তব্য করেছেন, আর্থিক বৃদ্ধির হার ৬-৬.৫ মধ্যে আটকে থাকলে ২০৪৭ সালেও ভারত নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশ হিসেবেই থেকে যাবে। ফলে বৃদ্ধির হারকে ৮ শতাংশে নিয়ে যেতে হবে। ভারতের সেই সম্ভাবনা আছে। এ বার হায়দরাবাদের ইন্ডিয়ান স্কুল অব বিজ়নেসের এক অনুষ্ঠানে তাঁর বক্তব্য, ‘‘২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছি আমরা। কিন্তু আজ যখন ৩৫% মানুষ অপুষ্টির শিকার, তখন উন্নত ধনী রাষ্ট্র হয়ে ওঠার কথা বলা তো হাস্যকর ব্যাপার।... মনে রাখতে হবে, আজ যে সমস্ত শিশু অপুষ্টির শিকার তারা ১০ বছর পরে কর্মী বাহিনীতে যোগ দেবে।’’ তাঁর প্রশ্ন, অপুষ্টির সমস্যা নিয়ে একটি দেশ কী করে উন্নত হয়ে উঠতে পারে?
কিছু দিন আগে রাজন বলেছিলেন, ভারতের সবচেয়ে বড় শক্তি তার ১৪০ কোটি জনসংখ্যা। কিন্তু তাঁদের অর্থনীতির জন্য ঠিক মতো কাজে লাগাতে হলে সব ক্ষেত্রে চাকরি তৈরি করা জরুরি। একমাত্র তখনই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে। সেই সূত্র ধরে এ বার তিনি দেশের এই বিপুল মানবসম্পদকে কাজে লাগানোর জন্য তাঁদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার উপরেও জোর দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘মাঝের সময়টাকে পোক্ত করতে ভারতের সব থেকে জরুরি সম্পদ, মানবসম্পদে মনোনিবেশ করতে হবে। সেটাই ভবিষ্যতে আমাদের জাতীয় সম্পদ গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। আমার মতে, সেখান থেকেই শুরু করা ভাল।’’ এই পথে হাঁটার পরামর্শ দিতে গিয়ে রাজন কোথায় ভুল হচ্ছে খুঁজে বার করে শুধরে নেওয়ার বার্তা দিয়েছেন।