সিস্টেমা শ্যাম টেলিসার্ভিসেস (এসএসটিএল)-এর ভারতীয় শাখা কিনতে বৃহস্পতিবার বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ এবং ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের অনুমোদন পেল রিলায়্যান্স কমিউনিকেশন্স (আর-কম)। এই অধিগ্রহণ সম্পূর্ণ হলে আর-কমের হাতে আসবে কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের ন’টি গুরুত্বপূর্ণ সার্কেলে এসএসটিএল-এর হাতে থাকা ৮৫০ মেগাহার্ৎজ-এর অতিরিক্ত ৩.৭৫ মেগাহার্ৎজ স্পেকট্রাম। যা ফোরজি পরিষেবার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
গত মাসেই এসএসটিএলের ভারতীয় শাখা কেনার কথা জানিয়েছিল অনিল অম্বানীর সংস্থাটি। এ দিন এক বিবৃতিতে তাদের দাবি, সে জন্য স্টক এক্সচেঞ্জগুলির সায় পেয়েছে তারা। এর পর বিষয়টি নিয়ে এগোতে আর-কম বম্বে হাইকোর্ট এবং সিস্টেমা রাজস্থান হাইকোর্টের অনুমোদন পেতে আর্জি জানাবে। যা পাওয়ার পরই টেলিকম দফতরের (ডট) দ্বারস্থ হবে তারা। সংস্থা দু’টির মধ্যে হওয়া চুক্তি অনুয়ায়ী, দুই সংস্থার মেলবন্ধনের পরে আর-কমে এসএসটিএল-এর ১০ শতাংশ অংশীদারি থাকবে। সব শর্ত পূরণ ও সরকারি অনুমোদন পেয়ে দুই সংস্থা পুরোপুরি মিশে যেতে মার্চ মাস হয়ে যাবে বলে আশা তাদের।
ভারতে ‘এমটিএস’ ব্র্যান্ডের মাধ্যমে ব্যবসা চালায় এসএসটিএল। তাদের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৯০ লক্ষ। এ বার তাঁরাও আর-কমেরই গ্রাহক হবেন। এসএসটিএল-এর প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা ব্যবসাও হাতে আসবে তাদের। কিন্তু শুধু গ্রাহক সংখ্যা বা বাড়তি ব্যবসার চেয়েও দুই সংস্থার মিলনের ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্বপর্ণ হয়ে উঠছে এসএসটিএল-এ হাতে থাকা ৮৫০ মেগাহার্ৎজ-এর বাড়তি স্পেকট্রাম। কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লি, গুজরাত, তামিলনাড়ু, কর্নাটক, কেরল, উত্তরপ্রদেশ (পশ্চিম) ও রাজস্থানে এসএসটিএল-এর ৩.৭৫ মেগাহার্ৎজ স্পেকট্রাম পাবে আর-কম। রাজস্থান বাদে অন্যত্র আর-কমের স্পেকট্রামের লাইসেন্সের সময়সীমা বেড়ে দাঁড়াবে ২০৩৩ পর্যন্ত। বস্তুত, এর ফলে আর-কমের লাইসেন্সের মেয়াদ বাড়বে ১২ বছর। কারণ, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই বেশ কয়েকটি সার্কেলে তাদের নিজস্ব স্পেকট্রামের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। সব মিলিয়ে সংস্থাটির হাতে ফোরজি পরিষেবার সহায়ক ওই স্পেকট্রামের পরিমাণ হবে ১৪৮.৭৫ মেগাহার্ৎজ।
এই লেনদেনের ক্ষেত্রে তাদের নগদে কোনও অর্থ দিতে হবে না বলেও দাবি আর-কমের। সংস্থা জানিয়েছে, এসএসটিএল-এর স্পেকট্রামের জন্য আগামী ১০ বছর টেলিকম দফতরকে বছরে ৩৯২ কোটি টাকা করে দেবে তারা। পাশাপাশি পরিচালন পর্ষদে যেমন এসএসটিএল-কে কোনও আসন দিতে হবে না, তেমনই তাদের ভেটো প্রদানের ক্ষমতাও থাকবে না। অন্য দিকে, লেনদেন পর্ব সাঙ্গ হওয়ার আগে বকেয়া ঋণ মিটিয়ে দেবে এসএসটিএল। ভারতের টেলিকম বাজারে এখন তাদের দখল ১ শতাংশেরও কম। সংস্থাটির মোট কর্মী সংখ্যা প্রায় ১৫০০। মূল সংস্থা সিস্টেমা-র এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, কার্যত সব কর্মীই ভবিষ্যতে সংযুক্ত সংস্থায় কাজ করার সুযোগ পাবেন।
প্রসঙ্গত, শুধু সিস্টেমার ভারতীয় সংস্থা কেনাই নয়। কাঁধে চেপে থাকা প্রায় ৩৯ হাজার কোটি টাকা দেনার দায় কমানো। আর টেলি পরিষেবার ব্যবসায় নিজেদের জায়গা আরও পোক্ত করা। এই জোড়া লক্ষ্য সামনে রেখে ব্যবসা মিশিয়ে দিতে এয়ারসেলের সঙ্গেও কথা শুরু করেছে আর-কম। সে ক্ষেত্রে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে আর কম, এমটিএস (এসএসটিএলের ব্র্যান্ড) এবং এয়ারসেল মিলে নতুন সংস্থা তৈরি হবে। তার দৌলতে ১০ হাজার কোটির দেনা মেটাতে পারবে আর কম। গ্রাহক সংখ্যাতেও ওই সংযুক্ত সংস্থা হবে দেশে দ্বিতীয় বৃহত্তম।