পাঁচ দিন পরে গত শুক্রবার শেয়ার বাজার উঠলেও, বাজেট নিয়ে বিভিন্ন মহলের ক্ষোভ এখনও তেমন প্রশমিত হয়নি। লোকসভা ভোটের কারণে স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় ছ’মাস পরে এ বার পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ হয়েছে। পরের বাজেট পেশ হবে আর ছ’মাস পরে। তা সত্ত্বেও এ বার যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তা নির্মলা সীতারামনের আগের ছ’টি বাজেটে সম্ভবত দেখা যায়নি। সরকারের পক্ষ থেকে বড় দাবি করা হলেও, খুব কম মানুষই বাজেটে খুশি। কারণগুলি একবার দেখা যাক—
- লোকসভা নির্বাচনে অনেক রাজ্যে বিজেপির ভোট কমেছে। খুশি রাখতে হচ্ছে শরিকদের। সামনে আবার কিছু রাজ্যে ভোট। এই অবস্থায় সাধারণমানুষের জন্য নতুন কর কাঠামোতে স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন ২৫,০০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। সামান্য পুনর্বিন্যাস হয়েছে আয়করের স্তরে। তবে সেটা শুধু নতুন বিকল্পে। ফলে এই কাঠামোয় যাঁদের আয় ১৮ লক্ষ টাকা, তাঁরা বাঁচাতে পারবেন প্রায় ১৮,২০০ টাকা। মাসে ১৫০০ টাকা। আয় এর কম হলে সাশ্রয়ও কমবে। শতাংশের হিসাবে করের দায় কমতে পারে মাত্র ১%। অন্য দিকে, খুচরো মূল্যবৃদ্ধি এখন ৫.০৮%। যা শুষে নেবে সাশ্রয়কে। চাকুরিজীবী না হলে বাঁচবে আরও কম। তার উপরে পুরনো কাঠামো থাকলে নতুন সুবিধা নেই।
- খুশি নন প্রবীণ নাগরিকেরাও। নতুন কাঠামোয় তাঁদের করের সুবিধা দেওয়া হয়নি। উপরন্তু এ বারও ফেরেনিপ্রবীণদের ট্রেনের টিকিটে ছাড়।
- ক্ষুব্ধ শেয়ার এবং ফান্ডের লগ্নিকারীরা। কারণ স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি মূলধনী লাভে কর বাড়িয়ে করা হয়েছে যথাক্রমে ২০% ও ১২.৫%। এতে ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ের ব্যক্তিদের একাংশ বাজার বিমুখ হতে পারেন।
- দীর্ঘমেয়াদি মূলধনী লাভে কর বেড়ে ১২.৫%। এতে বছরে এত দিন ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লাভে কর দিতে হত না। তা বেড়ে হয়েছে ১.২৫ লক্ষ। বেড়েছে শেয়ারে ফিউচার ও অপশন লেনদেনে কর (এসটিটি)। এই সিদ্ধান্ত ব্যাঙ্কের জন্য ভাল হলেও, শেয়ারে লগ্নি করে বেশি আয় ও কর বাঁচানোর পথ খোঁজা মানুষের পক্ষে সুখের নয়।
- ক্ষতি পুরনো সম্পত্তি বিক্রিতেও। জমি-বাড়ি বিক্রির উপরে দীর্ঘমেয়াদি লাভকর ২০% থেকে কমে ১২.৫% হলেও, তুলে নেওয়া হয়েছে মূল্যবৃদ্ধির সূচক প্রয়োগের (ইন্ডেক্সেশন) সুবিধা। ফলে পুরনো সম্পত্তি বিক্রি করতে গেলে বহু ক্ষেত্রে করের দায় বাড়বে। অনেকে অঙ্ক কষে দেখাচ্ছেন, ২০ বছরের আগে কেনা বা উত্তরাধিকার হিসেবে পাওয়া সম্পত্তি এখন বেচলেবেশি কর চাপবে। এই বৃদ্ধি উত্তরাধিকারী কর বা এস্টেট ডিউটি চাপানোর সামিল বলে অভিযোগ একাংশের। সীতারামন ও অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা একে দীর্ঘমেয়াদি মূলধনী লাভকরের সরলীকরণ বললেও, এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সাধারণ মানুষ।
- বহু বড় সংস্থা ডিভিডেন্ড ছাড়াও বাজার থেকে বেশি দামে শেয়ার কিনে (বাই ব্যাক) লাভের টাকা লগ্নিকারীদের মধ্যে বণ্টন করে। এত দিন এই ক্ষেত্রে সংস্থাকেই ২০% হারে কর মেটাতে হত। এখন লগ্নিকারীর হাতে আসা টাকায় আয়ের স্তর অনুসারে কর বসবে। এতে ক্ষতি ক্ষুদ্র লগ্নিকারীদের।
(মতামত ব্যক্তিগত)
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)