—প্রতীকী চিত্র।
পরস্পরের সম্পূর্ণ উল্টো দিকে হাঁটতে শুরু করেছে খুচরো এবং পাইকারি বাজারের দাম। জুনে খুচরোয় মূল্যবৃদ্ধির হার মাথা তুলে যখন ৫ শতাংশের কাছে পৌঁছেছে, তখন পাইকারি পণ্যের দাম আরও নেমে ৮ বছরে সবচেয়ে কম। প্রশ্ন উঠছে, এই স্বস্তি আমজনতার পকেটে পৌঁছবে কবে? কিংবা আদৌ পৌঁছবে কি?
শুক্রবার কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান জানিয়েছে, জুনে পাইকারি বাজারে মূল্যবৃদ্ধি ছিল আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় (-)৪.১২%। অর্থাৎ এপ্রিল, মে মাসের মতো ফের পাইকারি পণ্যের মূল্যহ্রাস ঘটেছে। মে মাসে দাম কমে যাওয়ার হার ছিল ৩.৪৮%। গত মাসে আরও নেমেছে।
অথচ বাজার-হাট করতে গিয়ে আনাজের মাত্রাছাড়া দরে কার্যত নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ মানুষের। কলকাতার বাজারে কেজিতে লঙ্কার দাম ২০০ টাকা। টোম্যাটো ঘুরছে ১৩০ টাকার আশেপাশে। এক কেজিআদা ৩০০ টাকা, বেগুন ৮০ টাকা, ভিন্ডি ৪০-৫০ টাকা, উচ্ছে ৬০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, ধনেপাতা ২০০ টাকা। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, বাকিগুলি আগের থেকে সামান্য কমলেও আলু, পেঁয়াজ ক্রমশ বাড়ছে। ইতিমধ্যেই সার্বিক ভাবে খুচরো মূল্যবৃদ্ধি উঠেছে ৪.৮১ শতাংশে। অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, খাদ্যপণ্যের দাম আরও না কমলে তা ফের ৬ শতাংশে পৌঁছোতে পারে। যে হার রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের বেঁধে দেওয়া মূল্যবৃদ্ধির সর্বোচ্চ সহনসীমা এবং মূল্যবৃদ্ধিকে যার নীচে নামাতে গত বছরের মে মাস থেকে ২৫০ বেসিস পয়েন্ট সুদ বাড়িয়েছে তারা।
আইআইটি পটনার অর্থনীতির অধ্যাপক রাজেন্দ্র পরামানিক বলছেন,দুই বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হিসাবের ভিত্তিতে তফাৎ আছে। খুচরো মূল্যবৃদ্ধি চড়ছে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায়, বিশেষত আনাজ ও ডালের। সেই চাপ পড়ছে না পাইকারিতে। তাঁর কথায়, ‘‘খুচরো বাজারে মূল্যসূচকের প্রায় ৪৬% জুড়ে খাদ্য এবং পানীয়ের দাম, জামা-কাপড় এবং জুতোর ভাগ ৬%, আবাসনের ১০%, জ্বালানি ও আলোর ৭%, বাকিগুলি মিলিয়ে ৩০%। অন্য দিকে, পাইকারিতে খাদ্য, জ্বালানির মতো পণ্যের ভাগ মাত্র ২০%। কল-কারখানায় তৈরি পণ্যের (কাগজ, প্লাস্টিক, পোশাক, প্যাকেটের খাবার ইত্যাদি) প্রায় ৬৫%।’’
আর্থিক বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দত্তের দাবি, পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি উৎপাদকের দিক থেকে দামের ওঠাপড়া অনুসরণ করে আর খুচরো মূল্যবৃদ্ধিতে তা হয় ক্রেতার নিরিখে। তাই খুচরোয় শুধু খাদ্যপণ্যের দামের ভাগ যদি ৫০% হয়, তবে পাইকারিতে তা ২৪.৪%। তাঁর বার্তা, ‘‘খাদ্যপণ্যের দাম অনেকটা না কমলে আমজনতা মূল্যবৃদ্ধির কবল থেকে বেরোতে পারবেন না। কারণ অত্যধিক গরম ফসলের ক্ষতি করছে। ফলে দাম আরও বাড়তে পারে। ভাল বৃষ্টি না হলে নিস্তার নেই।’’