বর্তমান ফর্মুলা অনুযায়ী, পেনশন হিসাবের দু’টি মাপকাঠি হল পেনশনযোগ্য বেতন এবং পেনশনযোগ্য কাজের সময়কাল। প্রতীকী ছবি।
শর্তসাপেক্ষে কর্মীদের প্রভিডেন্ড ফান্ডের (পিএফ) বর্ধিত পেনশনের আর্জি বাতিলের সুযোগ দিতে বৃহস্পতিবার নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিলেন পিএফ কর্তৃপক্ষ। সেটির ১০ নম্বর ধারায় জানানো হয়েছে, সেই বর্ধিত পেনশনের অঙ্কের নতুন ফর্মুলা বা হিসাবের পদ্ধতি পরবর্তী বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশ করা হবে। এতেই সংশ্লিষ্ট মহলে প্রশ্ন উঠছে, হিসাবের নির্দিষ্ট ফর্মুলা থাকলেও নতুন ফর্মুলা প্রয়োজন হচ্ছে কেন? কর্মীর বেতনের উর্ধ্বসীমা ছাড়িয়ে বাকি অংশের উপরেও হিসাব কষার নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। তা বদলের সুযোগ না থাকলেও কি হিসাবের মূল কাঠামোয় বদল আনা হতে পারে? কারণ বিভিন্ন সূত্রের ইঙ্গিত, বর্ধিত পেনশন দিতে হলে পিএফের তহবিলের উপর চাপ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। তাতে প্রকল্প চালাতেই সমস্যা হতে পারে। তা খতিয়ে দেখে সেই চ্যালেঞ্জ এড়ানোর বিকল্প পথের খোঁজ নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে পিএফ দফতরে। উল্টো দিকে শ্রমিক ইউনিয়নের একাংশের মনে সংশয়, বর্ধিত পেনশন যতটা হওয়া আশা, নতুন ফর্মুলায় তাতে কোপ পড়বে না তো?
বর্তমান ফর্মুলা অনুযায়ী, পেনশন হিসাবের দু’টি মাপকাঠি হল পেনশনযোগ্য বেতন (পেনশনেব্ল স্যালারি) এবং পেনশনযোগ্য কাজের সময়কাল (পেনশনেব্ল সার্ভিস)। এই দু’টির গুণিতককে ৭০ দিয়ে ভাগ করলে মিলবে পেনশনের অঙ্ক। এ ক্ষেত্রে পেনশনেব্ল স্যালারি হল অবসর বা চাকরি ছাড়ার সময়ে কর্মীর যে বেতন থাকবে তার আগের ৬০ মাসের গড় বেতন। কাজের সময় ধরা হবে ১৬.১১.১৯৯৫ (যেদিন থেকে পেনশন প্রকল্প চালু হয়) অথবা তার পরে যে দিন থেকে পেনশন অ্যাকাউন্টে টাকা কাটা হচ্ছে সেই দিনটি (দু’টির মধ্যে যেটি পরে) থেকে অবসর বা চাকরি ছাড়ার দিন পর্যন্ত সময়কালকে।
বর্তমানে অবসর বা চাকরি ছাড়ার সময় যে টাকাই কর্মী মাইনে পান না কেন, সর্বোচ্চ ১৫,০০০ টাকা বেতনের ভিত্তিতেই আগের ৬০ মাসের গড় হিসাব করা হয়। কিন্ত শীর্ষ আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে বর্ধিত পেনশন হিসাবের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মীর অবসর বা চাকরি ছাড়ার সময় পুরো যে বেতন ছিল, তার ভিত্তিতেই আগের ৬০ মাসের গড় বেতনকে পেনশনেবল স্যালারি ধরতে হবে। কর্মীদের সিংহভাগের ক্ষেত্রেই যা ১৫,০০০ টাকাকে ভিত্তি করে হিসাব করা গড় বেতনের থেকে অনেক বেশি।
এই পরিস্থিতিতে ফর্মুলা বদলের কথা বিজ্ঞপ্তিতে বলায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন অনেকে। যেমন ইউটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক এবং পিএফের আঞ্চলিক কমিটির শ্রমিক প্রতিনিধি সদস্য অশোক ঘোষ বলেন, “আশঙ্কা, সরকার এমন কিছু কৌশল বার করতে চাইছে না তো যাতে বর্ধিত পেনশন কমানো যায়? না হলে পেনশন হিসাবের নির্দিষ্ট পদ্ধতি থাকতেও কেন নতুন পদ্ধতির কথা উঠছে? সে ক্ষেত্রে বর্ধিত পেনশন কমাতে পুরো ফর্মুলার বদল না হলেও তাতে কিছু সংশোধন করা হতে পারে।’’
সূত্রের খবর, পেনশনযোগ্য বেতন হিসাবের নিয়ম বদলের আইনি অধিকার পিএফ কর্তৃপক্ষের আছে। আর সেটা হলে বর্ধিত পেনশন কমার সম্ভাবনা রয়েছে বলে দাবি অশোকবাবুর। তাঁর বক্তব্য, অবসরের আগের ৬০ মাস বা ৫ বছরের পরিবর্তে যদি ৭ বা ১০ বছরের গড় বেতনের ভিত্তিতে পেনশন হিসাব করা হয়, তা হলেই সেটা হতে পারে। তবে সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের বক্তব্য, এ নিয়ে জল্পনা চললেও যতক্ষণ না পিএফ কর্তৃপক্ষ আরও কিছু বিশদে জানাচ্ছেন, ততক্ষণ গোটাটা স্পষ্ট হবে না। আপাতত সবাই তাই তাকিয়ে তাঁদের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকেই।