Paytm

Paytm: একগুচ্ছ প্রশ্ন তুলে দিল পেটিএমের শেয়ার বিক্রি

বাজারে লেনদেনের প্রথম দিনে ক্ষতি অনুযায়ী মেগা আইপিওগুলির মধ্যে পেটিএমই বৃহত্তম।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২১ ০৭:১৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

বাজারে প্রথম বার শেয়ার বিক্রি করে মূলধন জোগাড়ের ক্ষেত্রে (আইপিও বা পাবলিক ইসু) এখনও পর্যন্ত সকলকে টেক্কা দিয়েছে নেটে টাকা মেটানোর সংস্থা পেটিএম। কিন্তু দেশের এই বৃহত্তম আইপিও-টি শেয়ার বাজারে নথিবদ্ধ হওয়ার দিন লগ্নিকারীদের ঘরে শুধু মোটা লোকসানই পৌঁছে দেয়নি, তুলে দিয়েছে শেয়ারে লগ্নির নিরাপত্তা এবং রক্ষাকবচ নিয়ে আরও অনেক প্রশ্ন। যেগুলি সরাসরি জড়িয়ে ক্ষুদ্র লগ্নিকারীদের স্বার্থের সঙ্গে। প্রশ্নগুলি ভাবাবে বিনিয়োগকারী, বাজার নিয়ন্ত্রক সেবি, এমনকি সরকারকেও।

Advertisement

১৮,৩০০ কোটি টাকার পেটিএম আইপিও শেয়ার বাজারে নথিবদ্ধ হয় গত শুক্রবার। ২১৫০ টাকায় প্রথম ইসু করা শেয়ার নথিবদ্ধ হয় ১৯৫০ টাকায় এবং দিনের শেষে নামে ১৫৬৪ টাকায়। অর্থাৎ লাভ দূরের কথা, প্রথম দিনেই লোকসান ২৭.২৫%। খুচরো লগ্নিকারীরা এই ইসুতে ঢেলেছিলেন ২০৮১ কোটি টাকা। তার মধ্যে ৫৬৭ কোটি হারিয়ে গিয়েছে। ৭৩৭৫ কোটি টাকা পুঁজি ঢেলে মিউচুয়াল ফান্ডের মতে লগ্নিকারী সংস্থাগুলির কপালে জুটেছে ২০১০ কোটির লোকসান।

বাজারে লেনদেনের প্রথম দিনে ক্ষতি অনুযায়ী মেগা আইপিওগুলির মধ্যে পেটিএমই বৃহত্তম। এর আগে নথিবদ্ধ হওয়ার দিন রিলায়্যান্স পাওয়ার শেয়ারে লোকসান হয়েছিল ১৭.২২%, কেয়ার্ন শেয়ারে ১৪.০৬% ও আইসিআইসিআই প্রু লাইফ শেয়ার ১০.৮৯৮%। পেটিএমের বর্তমান আর্থিক অবস্থা দেখে মনে হয় না দ্রুত তাদের উন্নতি করার সম্ভাবনা আছে।

Advertisement

এই ইসুকে কেন্দ্র করে উঠেছে একগুচ্ছ প্রশ্ন। যেমন—

 সংস্থাটির মূল্যায়ন এবং আইপিও-তে শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক চড়া কেন? যে সংস্থা গত তিন বছরে লাভের মুখ দেখেনি এবং অদূর ভবিষ্যতেও দেখার সম্ভাবনা কম, তাদের প্রতিটি শেয়ার ২১৫০ টাকা হয় কী করে?

 সব তথ্য পেটিএম নিয়ন্ত্রকের কাছে জমা দেওয়া নথিতে (প্রসপেক্টাসে) প্রকাশ করেছিল ঠিকই। কিন্তু কত জন
ছোট লগ্নিকারী তা পড়েন? বেশির ভাগই ছোটেন বাজারের উদ্দীপনায়। পরামর্শদাতাদের ভূমিকা তা হলে কী?

 লগ্নিকারী সংস্থাগুলিই বা সব জেনে কেন এই ইসুতে ৭৩৭৫ কোটি টাকা ঢেলে ২০১০ কোটি টাকার লোকসান ঘরে নিল? মিউচুয়াল ফান্ডের মতো লগ্নি সংস্থার লোকসান তো সাধারণ বিনিয়োগকারীদের উপরেই বর্তাবে।

 শেয়ার প্রিমিয়ামের (মূল দামের উপরে যে অংশ যোগ হয়ে আইপিও-তে ইসুর মোট দাম স্থির হয়) উপরে কড়া নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত নয় কি? যেমন ছিল তিন দশক আগে সিসিআই (কনট্রোলার অব ক্যাপিটাল ইসুজ়)-এর জমানায়। ভাল বাজারের সুযোগে ১ টাকা মূল দামের উপরে ২১৪৯ টাকা প্রিমিয়াম পেটিএম নিল কোন যুক্তিতে?
এ নিয়ে সেবিকে ভাবতে হবে।

 প্রথম দিনেই পেটিএম শেয়ারের এই পতনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কি পরের ইসুগুলিতে? শীঘ্রই এলআইসি আনতে পারে বৃহত্তম আইপিও।

গত সপ্তাহে বাজার এমনিতেই দুর্বল ছিল। পেটিএমের দুঃস্বপ্নের নথিভুক্তির দিন সেনসেক্স আরও ৩৭২ পয়েন্ট নেমে সপ্তাহ শেষ করে ৫৯,৬৩৬ অঙ্কে। অক্টোবরে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি বেড়ে হয়েছে ১২.৫৪%। যা পাঁচ মাসে সব থেকে বেশি। খুচরো বাজারেও পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। ফলে এখনই সুদ কমার সম্ভাবনা নেই। পেট্রল-ডিজ়েলের দাম একটু কমায় আশা, আগামী দিনে পণ্যমূল্য মাথা নামাবে। তবে জ্বালানির সস্তা হওয়ার হার খুবই সামান্য। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক মনে করে, দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। তবে একই সঙ্গে তারা বলেছে, বাজারে অনেক শেয়ারের দাম একটু বেশিই বেড়ে আছে। তার উপরে এই মুহূর্তে বিশ্লেষণ চলছে কৃষি আইন প্রত্যাহারেরন ভাল-মন্দ নিয়ে। সব মিলিয়ে বাজার চঞ্চল থাকার আশঙ্কা।

(মতামত ব্যক্তিগত)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement