প্রতীকী ছবি।
সকাল হোক বা বিকেল, মোবাইল ফোনে প্রতি এক থেকে দু’ঘণ্টায় আসছে এসএমএস। তারপর আসছে ফোন। "পার্সোনাল লোন নেবেন? দু’দিনেই পেয়ে যাবেন!"— এই ধরনের লোভনীয় প্রস্তাব রোজ শুনছি আমরা। ঋণ না নিতে চাইলেও, বার বার বলাতে মনে হয় নিয়েইনি! দরকার হোক বা না হোক, লোন মানেই ব্যাঙ্ক এটা আমাদের এক বদ্ধমূল ধারণা। কিন্তু আপনি কি জানেন আপনার জীবন বিমা পলিসিও দিতে পারে আপনাকে লোন? জেনে নিন কী ভাবে লাইফ ইনস্যুরেন্স পলিসি ব্যবহার করে লোন নেওয়া যায়।
জীবন বিমা কেনার প্রথম উদ্দেশ্য হল যে, যদি আপনার অকালে মৃত্যু ঘটে, তা হলে আপনার পরিবারকে যেন কোনও আর্থিক অসুবিধা ভোগ করতে না হয়। কিন্তু জীবন বিমা আজকাল বহুমুখী। পলিসি নেওয়া থাকলে বিমা ব্যবহার করে ঋণের সুবিধা পেতে পারেন। পার্সোনাল লোনের তুলনায় সুদের হার কম থাকায় এই ভাবে ঋণ নেওয়া একটি জনপ্রিয় পছন্দ হয়ে উঠছে। অনেকেই বলবেন যে গোল্ড লোনের ক্ষেত্রে, সুদের হার কম থাকে। কিন্তু জীবন বিমা ব্যবহার করে ঋণ নিলে একটি অতিরিক্ত সুবিধা হল যে, বিমার মূল্য কমে যায় না; সোনা বা শেয়ারের বিপরীতে ঋণের ক্ষেত্রে বাজারে সম্পদের মূল্য নামার সঙ্গে নানান ঝামেলা হয়।
জীবন বিমা ব্যবহার করে ঋণ নেওয়ার আগে কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নেওয়া উচিত।
প্রথমে জানতে হবে আপনার বিমা ব্যবহার করে ঋণ নেওয়া যাবে কি না। আপনার বিমা কাগজ খুলে দেখুন, লোন শব্দটি আছে কি না। সব জীবন বিমা ব্যবহার করে ঋণ নেওয়া যায় না। 'মানিব্যাক' পলিসি, 'হোল লাইফ' পলিসি বা 'এনডাওমেন্ট' পলিসির ক্ষেত্রে সাধারণত লোন পাওয়া যায়। টার্ম ইন্সিওরেন্স পলিসির ক্ষেত্রে আপনি বেঁচে গেলে কোনও টাকা বিমা কোম্পানি দেয় না, তাই এর থেকে ঋণ নেওয়াও যায় না। আপনি যদি গত তিন বছরে পলিসি প্রিমিয়াম ঠিক সময়ে দিয়ে থাকেন, ঋণ নিতে অসুবিধা নেই।
আরও পড়ুন: ভাল-মন্দের মধ্যে দিশা খুঁজছে বাজার
দ্বিতীয় কথা যেটা বুঝতে হবে তা হল, জীবন বিমা ব্যবহার করে ঋণ নিলে, আপনিই হলেন 'সম্পদ'। যেমন গাড়ির লোন নিলে গাড়ি এ ক্ষেত্রে সম্পদ বা 'অ্যাসেট'। বাড়ির লোন নিলে বাড়ি হল সম্পদ। কিন্তু জীবন বিমা ব্যবহার করে লোন নিলে শেষমেশ আপনিই সম্পদ। মজার কথা হল, অন্য কোনও ঋণ নিলে অনেক অনুসন্ধান বা একটি কঠোর অনুমোদন প্রক্রিয়া সহ্য করতে হয়। জীবন বিমা ব্যবহার করে লোন এই সব ঝামেলা থেকে অনেকটাই রক্ষা পাওয়া যায়। তবে, আপনার মাইনে কত বা চাকরির অবস্থা কেমন তা দেখা হতে পারে। বিমা ব্যবহার করে ঋণ নিলেও, ফেরত দিতে পারবেন কি না এই ব্যাপারে সবাই জানতে চাইবে।
তৃতীয়ত, কত টাকা লোন পাবেন এটাও জানতে হবে। জীবন বিমা ব্যবহার করে ঋণ নিলে লাইফ ইন্সিওরেন্স কোম্পানি আপনাকে জানিয়ে দেবে কত টাকা ঋণ নিতে পারবেন। সাধারণত দেখা যায় যে বিমা দিয়ে লোন নিলে 'সারেন্ডার ভ্যালু'-র ৮০-৮৫% অংশ লোন দেওয়া হয়। যদি পলিসিতে ২ লাখ টাকা 'সারেন্ডার ভ্যালু' হয়, তাহলে এক লক্ষ ৬০ হাজার থেকে এক লক্ষ ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু মনে রাখবেন লোন পরিমাণ নির্ভর করছে লোন সংস্থার উপর। একবার ঋণের পরিমাণ নির্ধারণ করার পর, পলিসির সমস্ত অধিকার ঋণদাতার কাছে হস্তান্তর করা হয়। উপরন্তু, যেহেতু ঋণের পরিমাণ আয়কর কর্তৃপক্ষ আয় হিসাবে দেখে না, এটি করযোগ্য নয়।
চতুর্থত, বিমা ব্যবহার করে লোন নিলে সুদের হার নির্ভর করে পলিসি কত পুরনো তার উপর। যত পুরনো পলিসি, প্রিমিয়াম তত বার দেওয়া হয়েছে। অনেক সময় দেখা যায়, যে ব্যাঙ্ক বিমার বিরুদ্ধে আপনাকে ঋণ দিচ্ছে, সেই ব্যাঙ্ক কর্মীরা সুদের হার বেশি লাগান। এলআইসি বা লাইফ ইন্সিওরেন্স কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া অনেক কম টাকা সুদ নেয়। লোন দেওয়া হয় নুন্যতম ৬ মাসের জন্যে। মনে রাখবেন যে একটি জীবন বিমা পলিসির বিরুদ্ধে ঋণ গ্রহণের পরে, পলিসি ধারকদের প্রিমিয়াম প্রদান চালিয়ে যেতে হবে। যদি পলিসি হোল্ডার এই কাজটি না করেন, কিছু সংস্থা পলিসিটি বাতিল করতে পারে।