প্রতীকী ছবি।
করোনার জেরে বিদেশে চাহিদা কমায় গত কয়েক মাস ধরে এমনিতেই মার খাচ্ছে দেশের রফতানি শিল্প। লকডাউনের পর থেকে তা কিছুটা মাথা তুললেও, এখনও আগের বছরের চেয়ে ছবিটা মলিন। তার উপরে চিন্তা বাড়াচ্ছে ইউরোপ, আমেরিকায় ফের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়া। গত সাত মাসে ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের রফতানি কমেছে ১৪%। এই পরিস্থিতিতে এ বার এই শিল্পের কাছে আরও বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে ইস্পাতের দাম এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়ে যাওয়া এবং কন্টেনারের অভাব। ইঞ্জিনিয়ারিং এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিলের (ইইপিসি) দাবি, এই দুই কারণে বাড়ছে পণ্য উৎপাদন ও তা রফতানির খরচ। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ছে ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য। অবস্থা সামলাতে তাই ইস্পাতের দাম কমানোর ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানিয়েছে তারা।
ইইপিসির চেয়ারম্যান মহেশ দেশাইয়ের অভিযোগ, ইস্পাতের দাম চলতি অর্থবর্ষে ইতিমধ্যেই টনে ৭০০০ টাকা বেড়েছে। ছ’মাস আগে যে ইস্পাতের দাম ছিল টন পিছু ৩৫,০০০ টাকা। সেটা এখন ৪২,০০০ টাকায় ঠেকেছে। যার জের পড়ছে উৎপাদন খরচে। ইস্পাত শিল্প সূত্রের খবর, ভারতে লকডাউন শুরুর পরে পণ্যটির চাহিদা তলানিতে চলে যায়। সেই সময়ে দেশীয় সংস্থাগুলি রফতানি বাড়ানোয় জোর দিয়েছিল। এখনও ওই সব সংস্থার কাছে বড় অঙ্কের রফতানির বরাত রয়েছে। তাই তাতেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে ইস্পাত সংস্থাগুলি। ফলে টান পড়েছে দেশে জোগানে।
এই অবস্থায় ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য শিল্পের একাংশের দাবি, দেশীয় ইস্পাত শিল্পকে সুরক্ষিত করতে অনেক ক্ষেত্রেই পণ্যটি আমদানিতে বাড়তি শুল্ক চাপিয়েছে কেন্দ্র। সরকারের কাছে তাঁদের আর্জি, দেশে ইস্পাতের জোগান স্বাভাবিক না-হওয়া পর্যন্ত তার আমদানি শুল্ক কমানো হোক। যাতে ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যের কাঁচামাল ইস্পাত কিছুটা কম দামে তাঁরা পেতে পারেন।
সেই সঙ্গে কন্টেনারের অভাব নিয়েও নাজেহাল ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য রফতানি শিল্প। করোনা আবহে দেশে এমনিতেই শিল্পোৎপাদনে ভাটার টান। ফলে কমেছে আমদানি। তাই কন্টেনারও আসছে কম। ইইপিসির এগ্জ়িকিউটিভ ডিরেক্টর সুরঞ্জন গুপ্ত বলেন, ‘‘আমদানি কমায় কন্টেনারের অভাব দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি সম্প্রতি কাস্টমসের কিছু নতুন নিয়ম চালু হয়েছে। ফলে দেরি হচ্ছে ছাড়পত্র পেতেও। যে কারণে আমদানির পর কন্টেনার খালি হতেও আগের থেকে সময় লাগছে বেশি। ফলে সব মিলিয়ে সমস্যা বাড়ছে রফতানি শিল্পের।’’
তার উপরে কন্টেনারের সংখ্যা কমায় তাতে করে জাহাজে পণ্য পাঠানোর ভাড়াও বেড়ে গিয়েছে। সুরঞ্জনবাবু জানান, ‘‘যেমন আমেরিকায় পণ্য পাঠাতে একটি ২০ ফুটের কন্টেনারের ভাড়া আগে ছিল ১২০০ ডলার। এখন সেটাই বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৮০০ ডলার। ইউরোপে তা ১০০০ ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ১৮০০ ডলারের মতো।’’ সব মিলিয়ে তাই এখন অবস্থা স্বাভাবিক হওয়ার দিন গুনছে ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য রফতানি শিল্প।