—প্রতীকী চিত্র।
কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালের বেশির ভাগ অনেকাংশে নির্ভরশীল বাংলাদেশি রোগীদের উপর। কিন্তু সে দেশে অস্থিরতার কারণে কমেছে রোগী আসার সংখ্যা। কোনও কোনও ক্ষেত্রে তা নেমেছে ৭৫ শতাংশেরও বেশি। যার জেরে কার্যত মাথায় হাত হাসপাতালগুলির।
কলকাতায় মণিপাল গোষ্ঠীর অধীন চারটি হাসপাতালে গত সাত দিন ধরে বর্হিবিভাগে নতুন বাংলাদেশি রোগী প্রায় নেই বললেই চলে। সূত্রের খবর, আগে মাসে ২৩০০-২৪০০ রোগী আসত। জুলাইয়ে তা কমে ১৪০০-র মতো হয়েছে। যা পরিস্থিতি, তাতে চলতি মাসে এর অর্ধেকে দাঁড়াবে। কর্তৃপক্ষ মনে করেন, এই অবস্থা আরও মাস পাঁচেক চলবে। এই রোগীরা মূলত নগদে চিকিৎসার খরচ মেটান। ফলে লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে হাসপাতালকে।
রুবি জেনারেলের সিজিএম-অপারেশনস শুভাশিস দত্ত বলেন, “আগে পড়শি দেশ থেকে দিনে ৩০-৩৫ জন রোগী আসতেন। অগস্টের প্রথমে তা কমে হয় ১০-এর আশেপাশে। গত তিন দিন মিলিয়ে ৭-৮ জন এসেছেন। নতুন করে ভিসা না দেওয়ায় এই হাল। ১ তারিখ থেকে নতুন রোগী ভর্তিও হননি।” তাঁর কথায়, আর্থিক ক্ষতি কিছুটা হয়েছে। তবে বহু রোগী ১৫ অগস্টের পরে আসতে চেয়ে আবেদন করেছেন। আর এন টেগোর সূত্রের খবর, বর্হিবিভাগে দিনে ১৫০-র বেশি বাংলাদেশি রোগী আসতেন। সেটা কমে দাঁড়িয়েছে ২৫-৩০ জনে। শেষ কয়েক দিনে তা আরও কমেছে। কমেছে রোগী ভর্তিও।
ছোট-মাঝারি হাসপাতালগুলিরও ব্যবসার বড় অংশ আসে বাংলাদেশের রোগীদের চিকিৎসা করে। ফলে নগদের অভাবে ভুগছে তারা। রাজারহাটের লোটাস আগে মাসে ১৫-২০ জন বাংলাদেশের রোগী পেত। এখন ১-২ জন আসছেন। নিউরোসার্জন সব্যসাচী সাহা বলেন, ‘‘বাংলাদেশের রোগীরা মূলত চিকিৎসা করান নগদে। তাঁদের সংখ্যা কমায় প্রভাব পড়েছে চিকিৎসকদের উপরেও।” তিনি জানান, চলতি মাসে মাত্র এক জন বাংলাদেশি রোগীর অস্ত্রোপচার করেছেন। স্বাভাবিক সময়ে রোগীর সংখ্যা থাকত চার-পাঁচ গুণ।
পিয়ারলেস হাসপাতালের সিইও সুদীপ্ত মিত্র যদিও আর্থিক ক্ষতির কথা মানতে নারাজ। তাঁর কথায়, “যে রোগীরা চিকিৎসা করাবেন বলে স্থির করেছিলেন, তাঁরা আসবেনই। ফলে এটা লাভ-ক্ষতির বিষয় নয়। এখন হয়তো রোগী পাচ্ছি না। মাস তিনেক বাদে পাব।” উল্লেখ্য, পিয়ারলেসেও দিনে বাংলাদেশ থেকে আসা রোগীর সংখ্যা ১৮০ থেকে ৩০-এর আশেপাশে নেমেছে।
বেসরকারি হাসপাতালের সংগঠন, ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হসপিটালস্ অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’র সভাপতি রূপক বড়ুয়া বলেন, “কলকাতার হাসপাতালগুলিতে স্বাভাবিক সময়ে বাংলাদেশের রোগীদের থেকে ২০-২৫ কোটি টাকার মতো আয় হয়। জুলাইয়ে যা ২০ শতাংশের মতো কমেছে। অগস্টে তা নামতে পারে ৫০ শতাংশের বেশি।’’