প্রতীকী ছবি।
বিশ্ব বাজারে চড়া অশোধিত তেলের জন্য ভারতে পেট্রল-ডিজ়েলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে আশঙ্কা তো আছেই। তার মধ্যে আমজনতার দুর্ভোগ বাড়িয়ে প্লাস্টিকের বহু পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। কারণ, অশোধিত তেল থেকে তৈরি হয় ন্যাপথা। তা মূলত বিদেশ থেকে কিনে এনে প্লাস্টিক শিল্পের কাঁচমাল পলিমার তৈরি করে হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের (এইচপিএল) মতো পেট্রোকেম সংস্থাগুলি। চড়া অশোধিত তেলের কারণে ন্যাপথা এবং পলিমারের দাম বাড়ায় সাধারণ প্লাস্টিকের জিনিস কিনতেও অনেক ক্ষেত্রে আগের থেকে বেশি টাকা লাগছে। পরিস্থিতি সামলাতে বিকল্প হাতড়াচ্ছে শিল্প। যেমন, এইচপিএল আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে ন্যাপথা থেকে পলিমারের উৎপাদন বাড়িয়ে কাঁচামালের বাড়তি খরচে কিছুটা রাশ টানার চেষ্টা করছে বলে খবর।
শিল্প সূত্রের বক্তব্য, অশোধিত তেল থেকে পেট্রল-ডিজ়েলের মতো পরিবহণ জ্বালানি উৎপাদনের পরে কম পরিমাণে তৈরি হয় ন্যাপথা। তাই প্রয়োজনের বেশির ভাগটাই আমদানি করতে হয়। হালে ন্যাপথার দাম বেড়েছে প্রায় ৩০%। পেট্রোকেম শিল্পের একাংশের অবশ্য দাবি, সেই তুলনায় পলিমারের দাম বেড়েছে মাত্র ৮%-১০%। বাকিটা তারাই বহন করছে। তবে ইন্ডিয়ান প্লাস্টিক ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট শিশির জালান বলছেন, পলিমার প্রায় ১৫%-২০% দামি হয়েছে। ফলে পশ্চিমবঙ্গের হাজার পাঁচেক ছোট-মাঝারি প্লাস্টিক পণ্য তৈরির সংস্থা সঙ্কটের মুখে। পণ্যের দাম সামান্য বাড়তেই বিক্রি কমেছে। সাধারণ আয়ের মানুষ এগুলির বড় ক্রেতা। উৎপাদন খরচ বাড়লেও চাহিদা আরও ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কায় তাই প্লাস্টিকের জানিসের দাম সেই হারে বাড়াতে পারছে না সংস্থাগুলি। সমস্যা যুঝতে সরকারি সাহায্যের পাশাপাশি পেট্রোকেম সংস্থাগুলিকেও বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আর্জি জানান তিনি।
এইচপিএল সূত্রের খবর, প্রায় দু’বছর আগে আমেরিকার লুমুস টেকনোলজিসকে কিনেছিল তারা। সেই লুমুসের প্রযুক্তিই বাড়তি উৎপাদন খরচের চাপ সামলাতে কাজে লাগছে। এইচপিএলের মূল উৎপাদন কেন্দ্র, ন্যাপথা ক্র্যাকারটি লুমুসের প্রযুক্তিতে চলে। তাতে পলিমার উৎপাদনের দক্ষতা ও ক্ষমতা বাড়ছে। অর্থাৎ, একই পরিমাণ ন্যাপথা থেকে আগের চেয়ে বেশি পলিমার তৈরি করছে সংস্থা।
শিল্পমহল সূত্রের বক্তব্য, দূষণ কমাতে ভবিষ্যতে পেট্রল-ডিজ়েলের চাহিদা কমলে সরাসরি অশোধিত তেল থেকে আরও বেশি ন্যাপথা তৈরি করা যাবে। সূত্রের খবর, লুমুসের কাছেও সেই প্রযুক্তি রয়েছে। তবে সে জন্য এই ধরনের শোধনাগার গড়তে আগ্রহী যে কোনও পেট্রোকেম সংস্থাকেই বিপুল লগ্নি করতে হবে। তার জন্য সহায়ক নীতি ও পরিবেশ-সহ সরকারি সাহায্য জরুরি, দাবি শিল্পের।