—প্রতীকী চিত্র।
সোনার দৌড় থামার নাম নেই। বুধবার ফের তা পৌঁছে গেল নজিরবিহীন উচ্চতায়। কলকাতায় ১০ গ্রাম খুচরো সোনা (২৪ ক্যারাট) এই প্রথম ৬৬,৫০০ টাকায় উঠল। জিএসটি ধরলে দাম ৬৮,০০০ টাকারও বেশি। এর জেরে আরও দামি হল গয়না তৈরির সোনা। ফলে এক দিকে আতান্তরে ক্রেতা, আসন্ন বিয়ের মরসুমের জন্য যাঁদের গয়না কিনতেই হবে। অন্য দিকে প্রমাদ গুনছেন বিক্রেতা, চড়া দামের ধাক্কায় যাঁরা ব্যবসা হারাচ্ছেন। বিশেষত পাড়ার আনাচেকানাচে ছড়িয়ে থাকা বহু ছোট-মাঝারি গয়নার দোকানে ক্রেতা কার্যত উধাও হয়েছে বলে খবর।
গয়না ব্যবসায়ীদের একাংশের দাবি, চৈত্র মাসে সোনার গয়নার বিক্রিবাটা কমই হয়। তবে এ বছর নজিরবিহীন দামের জেরে বাজার চোখে পড়ার মতো ফাঁকা। বিত্তবানদের পাশাপাশি সাধারণ কিছু ক্রেতা আসছেন দাম আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায়। খরচ দেখে মাথায় হাত পড়ছে অনেকেরই। বিয়ের গয়না কিনে রাখতে ছাড়ের সুবিধা চাইছেন তাঁরা। ঘরের গয়না ভাঙানোর প্রবণতাও বেড়েছে। সেনকো গোল্ড অ্যান্ড ডায়মন্ডস-এর এমডি-সিইও শুভঙ্কর সেন জানান, স্কুল-কলেজের পরীক্ষা, আগাম কর মেটানোর চাপও এই সময়ে সোনার চাহিদা কমায় খরচে রাশ পড়ে বলে। আরও দাম বৃদ্ধির আশঙ্কায় কিছু ক্রেতা তা-ও আসছেন, না হলে চাহিদা খুবই কম।
ছোট দোকান এবং কারিগরদের সংগঠন বঙ্গীয় স্বর্ণ শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক টগর পোদ্দার ও স্বর্ণ ব্যবসায়ী মধুসূদন কুইলা জানাচ্ছেন, তাঁরা মাঝারি মাপের দোকান চালান। ইতিমধ্যেই সেখানে বিক্রি প্রায় ৫০% কমেছে। কিছু দোকান একেবারেই বরাত পাচ্ছে না। টগরবাবুর দাবি, ‘‘এখন রমজান চলছে। এই সময় কিছু অঞ্চলে সোনার গয়নার চাহিদা বেশি দেখা যায়। এ বছর তা-ও ঝিমিয়ে। মধুসূদনের আক্ষেপ, ‘‘ক্রেতার দেখা পাওয়াই ভার। এখন অর্ধেকে নেমেছে ব্যবসা। দু’দিন পরে সেটুকুও থাকবে কি না, জানা নেই।’’ আপাতত ঘুরে দাঁড়ানোর পথ দেখা যাচ্ছে না, দাবি কারিগরদেরও। যাঁদের মধ্যে অনেকের হাতেই গয়না তৈরির বরাত নেই।
অল ইন্ডিয়া জেম অ্যান্ড জুয়েলারি ডোমেস্টিক কাউন্সিলের ডিরেক্টর সমর দে-র দাবি, দাম এখন ঊর্ধ্বমুখীই থাকবে। কারণ, ভারত-সহ বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক সোনা কিনছে। ফলে বিশ্ব বাজারে তার চাহিদা বৃদ্ধির কারণে চড়ছে দাম। তার উপর আমেরিকায় সুদের হার কমবে বলে যে জল্পনা রয়েছে, তার জন্যেও বহু লগ্নিকারী সোনা কিনে বিনিয়োগের পথে হাঁটছেন। ঋণপত্রের বিকল্প হিসেবে বাছছেন এই হলুদ ধাতুকে।
সমরের বক্তব্য, ‘‘আগামী দিনে আমেরিকায় যখন সত্যিই সুদ কমবে, তখন আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় সোনা আরও অনেকটা চড়তে পারে। যা ভারতের দামকেও ঠেলে তুলবে।’’ অঞ্জলি জুয়েলার্সের ডিরেক্টর অনর্ঘ উত্তীয় চৌধুরী অবশ্য মনে করেন, এই দাম বৃদ্ধি আসলে সোনার প্রতি সাধারণ মানুষের আকর্ষণ এবং আস্থা দুই-ই বাড়াচ্ছে।