করোনার আবহে গোটা বিশ্ব কী রকম আর্থিক বৈষম্য আর দারিদ্রে জর্জরিত হয়ে পড়েছে, আগেই তার ভয়ানক ছবি দেখিয়েছে একাধিক দেশি-বিদেশি রিপোর্ট। এমন অবস্থায় দুশ্চিন্তা আরও বাড়াল বিশ্ব বাজারে খাদ্যপণ্যের আকাশছোঁয়া দাম। রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্ট জানাচ্ছে, ১০ বছরের মধ্যে মানুষকে এত চড়া দামে কিনতে হয়নি খাবার। চাল, গমের মতো যে সব শস্য বিভিন্ন দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য, সেগুলি এবং সেই সঙ্গে ভোজ্য তেল এতটাই চড়েছে যে, মূলত এই দুয়ের হাত ধরে ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজ়েশনের (ফাও) খাদ্যপণ্য সূচক গত মাসে তার আগের বছরের চেয়ে ৩১.৩% বেড়ে ১৩৩.২ পয়েন্টে পৌঁছেছে। শেষ বার তা এত উঠেছিল ২০১১-এর জুলাইয়ে।
শুধু অক্টোবর নয়, বিশ্ব বাজারে খাদ্যপণ্যে দাম বেশ কয়েক মাস ধরেই টানা বাড়ছে। সেপ্টেম্বরে এই সূচক ছিল ১২৯.২-তে। রিপোর্ট বলছে, করোনায় উৎপাদনে ধাক্কা ও চাহিদার অনুপাতে ফলন বৃদ্ধি না-হওয়ায় টান পড়েছে জোগানে। যে কারণে শস্যের দাম এক মাসেই বেড়েছে ৩.২%। যার মধ্যে শুধু গমেরই ৫%। ফাও-র দাবি, প্রধানত আমেরিকা, কানাডা, রাশিয়ার মতো দেশে ফলন কমায় দাম বাড়ছে। সেই সঙ্গে গত মাসে ৯.৬% বেড়ে রেকর্ড গড়েছে ভোজ্য তেল। সব মিলিয়ে চলতি বছর ফসলের উৎপাদন ২৭৯.৩ কোটি টনে দাঁড়াতে পারে। গত মাসে যা ২৮০ কোটি হতে পারে বলেছিল ফাও।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চাহিদা ও জোগানের ঘাটতির সঙ্গে বিভিন্ন দেশে জ্বালানির দর বৃদ্ধিও প্রভাব ফেলেছে দামে। ভারতেও রেকর্ড গড়েছে পেট্রল, ডিজ়েলের দাম। কেন্দ্র উৎপাদন শুল্ক ছাঁটলেও, তেলের দর যেখানে দাঁড়িয়ে তাতে পণ্য সরবরাহে ধাক্কা লাগছে। যা মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ। আনাজের দামে আগুন। ভোজ্য তেল ঘুরছে
২০০ টাকার কাছাকাছি। মূল্যবৃদ্ধির কারণে বেশ ক’টি ঋণনীতিতে সুদ ছাঁটেনি রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। ফাও-এর মতে, রেকর্ড উৎপাদনও চাহিদা সামলানোর জন্য যথেষ্ট নয়। তাই আরও বেশি ফলনের দিকেই তাকিয়ে সব মহল।