প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি পিটিআই।
লগ্নির আগে বিনিয়োগকারী বাজারের চাহিদা মাপেন। আর সেই মাপকাঠিতে ভারতই সেরা। বিশ্ব মঞ্চে লগ্নি টানার এই বিজ্ঞাপন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। বৃহস্পতিবার, কানাডার শিল্প মহলের সঙ্গে ভিডিয়ো বৈঠকে। এ দেশের তলিয়ে যাওয়া চাহিদা, এপ্রিল-জুনের নজিরবিহীন জিডিপি সঙ্কোচন (২৩.৯%) এবং সঙ্কট সামলাতে তাঁর সরকারের নামমাত্র ত্রাণ ঘোষণার অভিযোগ কার্যত উড়িয়ে তাঁর দাবি, করোনা যখন শুধু সমস্যাকেই তুলে ধরছে তখন সে সব যুঝে সমাধানের পথ দেখাচ্ছে ভারত। যদিও এ দিনই বিশ্ব ব্যাঙ্কের হুঁশিয়ারি— ভারতের অর্থনীতির পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। যা আগে দেখা যায়নি। চলতি অর্থবর্ষে জিডিপি কমতে পারে ৯.৬%।
কানাডার শিল্পকর্তাদের মোদীর বার্তা, ‘‘কোথাও পুঁজি ঢালার আগে কী দেখেন? সুষ্ঠু গণতন্ত্র, রাজনৈতিক স্থায়িত্ব, শিল্প সহায়ক নীতি, স্বচ্ছ শাসন ব্যবস্থা, দক্ষ মানবসম্পদ, বৃহৎ বাজার কোথায় আছে? একটাই জবাব পাবেন, ভারত। উৎপাদন শিল্প বা পরিষেবা, শিক্ষা বা কৃষি, সব ক্ষেত্রেই লগ্নির সুযোগ বিস্তর।’’ এর আগে মার্কিন শিল্প মহলের সঙ্গে বৈঠকেও মোদীর দাবি ছিল, এমন খোলা ও বিপুল বাজার দুনিয়ায় মেলা ভার। সে দিনের মতো বৃহস্পতিবারও তাঁর দাবি, লগ্নির এই সুযোগ আগে আসেনি।
কিন্তু প্রশ্ন হল, বাজারে নতুন চাহিদা কই? চাহিদা ফেরার দাওয়াই-ই বা কোথায়? অর্থনীতির দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানো নিয়ে রঘুরাম রাজন, কৌশিক বসুর মতো অর্থনীতিবিদেরা সংশয়ী। সরকার যে ত্রাণের ফিরিস্তি দিচ্ছে, তা যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। সকলেই বলছেন, কাজ খুইয়ে অনেকের হাতে টাকা নেই। হালে যেটুকু বিক্রি হচ্ছে, তা লকডাউনে জমে থাকা চাহিদার বহিঃপ্রকাশ ও উৎসবের কেনাকাটা। পরিসংখ্যান বিশেষজ্ঞ প্রণব সেনও বলেছেন, চাহিদা বাড়াতে তিন বছর সরাসরি আরও বেশি সরকারি ত্রাণ জরুরি।
বিশ্ব ব্যাঙ্ক অতিমারি মোকাবিলায় কিছু ক্ষেত্রে সরকারের পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে ঠিকই। তবে তারা উদ্বিগ্ন কাজ খোওয়ানো ও বহু মানুষের দারিদ্রসীমার নীচে তলিয়ে যাওয়া নিয়ে। বিদেশি লগ্নিকারীদের মোদী অবশ্য বুঝিয়েছেন ত্রাণ দেওয়ায় কতটা একাগ্র ছিলেন তাঁরা। সকলে বুঝলেন কি না, তা বলবে সময়।