বেতনের বাড়তি অংশের উপর নিয়োগকারীর দেয় ১২% টাকা থেকে পেনশন তহবিলে কাটা হবে ৯.৪৯%। প্রতীকী ছবি।
বর্ধিত হারে পেনশন পাওয়ার জন্য ওই খাতে ভর্তুকির বাড়তি টাকা দিতে হবে পিএফের সংশ্লিষ্ট সদস্যকেই। বেতনের নির্দিষ্ট সীমার উপরে বাড়তি টাকায় পেনশন পেতে ভর্তুকি দেওয়ার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রকের বিজ্ঞপ্তিতেই তা স্পষ্ট, দাবি সংশ্লিষ্ট মহলের। তাতে বলা হয়েছে, বেতনের বাড়তি অংশের উপর নিয়োগকারীর দেয় ১২% টাকা থেকে পেনশন তহবিলে কাটা হবে ৯.৪৯%। এখন কাটা হয় ৮.৩৩%। এর ফলে নিয়োগকারীর দেয় টাকা থেকে বাকি ২.৫১% জমা পড়বে সদস্যের পিএফ অ্যাকাউন্টে। এখন জমা পড়ে ৩.৬৭%। অর্থাৎ নিয়োগকারীর দেওয়া যে অংশ সদস্যের পিএফ অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে এবং যা তিনি অবসরের পরে সুদ-সহ হাতে পান, কার্যত সেখান থেকেই ১.১৬% বাড়তি তহবিলের ব্যবস্থা হয়েছে। ফলে অবসরের পরে পিএফ খাতে নিয়োগকারীর দেওয়া টাকা কম মিলবে। নতুন ব্যবস্থা ২০১৪-র ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর ধরা হবে। তবে বর্ধিত পেনশন দাবি না করলে আগের নিয়মই চালু থাকবে।
পিএফ আইন অনুযায়ী, পেনশন তহবিলে কেন্দ্র ১.১৬% ভর্তুকি দেয় ১৫,০০০ টাকা বেতনের (মূল বেতন-ডিএ মিলে) উপর। ১৫ হাজারের সীমা ছাড়িয়ে যখন পুরো বেতনে পেনশন দেওয়ার বিষয়টি ঠিক হয়, তখন প্রশ্ন ওঠে বেশি বেতনের উপর পেনশন তহবিলে ওই ১.১৬% ভর্তুকি কে দেবে? শ্রম মন্ত্রকের বিজ্ঞপ্তিতে পরিষ্কার, ১৫,০০০ টাকা বেতন পর্যন্ত ভর্তুকি দিলেও তার বেশি অংশের উপর পেনশনের ক্ষেত্রে পেনশন তহবিলে ওই ১.১৬% সরকার দেবে না। কার্যত তা উসুল করা হবে কর্মীদের পিএফ খাতে প্রাপ্য টাকা থেকেই।
এত দিন সর্বোচ্চ ১৫,০০০ টাকার উপর পেনশন হিসাব হত। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, কর্মী চাইলে কিছু শর্ত পূরণ করে ওই সীমা ছাড়িয়ে পুরো বেতনে পেনশন দাবি করতে পারেন। কিন্তু সেই পেনশন তহবিলের ভর্তুকি নিয়ে কেন্দ্রের বিজ্ঞপ্তিতে ক্ষুব্ধ বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন। সিটুর সাধারণ সম্পাদক তপন সেন বলেন, “কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ করছি। এটা মাছের তেলে মাছ ভাজা। ইউনিয়নগুলির দাবি সত্ত্বেও ন্যূনতম পেনশনের পরিমাণ ১০০০ টাকা থেকে বাড়ায়নি সরকার। এখন বর্ধিত পেনশনের ক্ষেত্রে বাড়তি তহবিলের দায় চাপিয়ে দিচ্ছে পিএফের কর্মী সদস্যদের উপরেই। ওই ভর্তুকি কেন্দ্রেরই দেওয়ার কথা। বিজ্ঞপ্তির প্রতিবাদ জানিয়ে সরকারকেচিঠি দেব।’’
প্রতিবাদ জানিয়েছে এআইইউটিইউসিও। পিএফের অছি পরিষদে ওই সংগঠনের প্রতিনিধি দিলীপ ভট্টাচার্য বলেন, “ওই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে পিএফ প্রকল্পের পরিবর্তন করা হয়েছে। অছি পরিষদে কোনও আলোচনা ছাড়াই কেন্দ্র কী ভাবে এটা করল, ভেবে অবাক হচ্ছি। এর প্রতিবাদ জানাব।’’ দিলীপবাবুর দাবি, “ভর্তুকির বোঝা সদস্যের উপর চাপিয়ে দেওয়ার পিছনে বর্ধিত পেনশন দেওয়ার প্রকল্পটিকে বানচাল করার উদ্দেশ্যই কাজ করছে। কেন্দ্র চায় এই দাবি থেকে সদস্যেরা মুখ ফিরিয়ে নিন।’’ ইউটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক অশোক ঘোষ বলেন, “পিএফের মতো সামাজিক সুরক্ষায় সাহায্যের বদলে কেন্দ্র দায় ঝাড়ছে।’’