বেশি পেনশন পেতে হলে বেশি টাকা জমা দিতে হবে প্রভিডেন্ট ফান্ডে। প্রতীকী ছবি।
প্রভিডেন্ট ফান্ডের (পিএফ) পেনশন পেতে কর্মীর বেতনের যে ঊর্ধ্বসীমা রয়েছে, তা ছাড়িয়ে বেতনের বাকি অংশের উপরেও শর্তসাপেক্ষে বেশি পেনশন পাওয়ার সুযোগ খুলেছে সম্প্রতি। তবে সে জন্য পেনশন তহবিলে প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত টাকা যে সংশ্লিষ্ট কর্মীকেই ভরতে হবে, সেটা কেন্দ্রের বার্তায় স্পষ্ট। এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার পিএফ কর্তৃপক্ষ যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন, তাতে ইঙ্গিত, বেশি পেনশনের জন্য আর্জি জানানোর পরে কেউ যদি দেখেন ওই খাতে অতিরিক্ত হিসাবে অনেক বেশি টাকা জমা দিতে হচ্ছে তাঁকে, তা হলে সেই দাবি থেকে সরে আসতে পারেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কেউ বেশি পেনশনের জন্য আবেদন করলে পিএফ দফতরের অফিসারেরা হিসাব করে দেখবেন সংশ্লিষ্ট আবেদনকারীকে পেনশন খাতে কত টাকা অতিরিক্ত জমা দিতে হবে। আবেদনকারীকে সেই অঙ্ক জানানোও হবে। যাঁরা চাকরিতে নেই তাঁদের ৩ মাস সময় দেওয়া হবে তা জমা দিতে। যাঁরা চাকরিতে আছেন, তাঁদের অনুমতি নিয়ে তবেই অতিরিক্ত ওই টাকা পিএফ অ্যাকাউন্ট থেকে পেনশন অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরিত করা হবে। টাকা স্থানান্তরিত করতেও মিলবে ৩ মাস। আর এই ৩ মাসের মধ্যেই কেউ ইচ্ছে করলে বেশি পেনশনের দাবি বাতিল করে সরে যেতে পারবেন বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
সাধারণ ভাবে বেতনের সর্বোচ্চ ১৫,০০০ টাকায় পিএফের পেনশন হিসাব করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে, কিছু শর্ত মেনে পিএফের কোনও সদস্য ১৫,০০০ টাকার ঊর্ধ্বসীমা ছাড়িয়ে পুরো বেতনের উপরও পেনশন দাবি করতে পারেন। কিন্তু বর্তমানে সদস্যদের বেতনের সর্বোচ্চ ১৫,০০০ টাকার উপরই পেনশন খাতে টাকা জমা দেওয়া আছে। তাই বেশি পেনশন পেতে ১৫ হাজারের অতিরিক্ত বেতনের উপরও তাঁকে নিয়োগকারীর দেয় বেতনের ১২% থেকে ৮.৩৩% হারে টাকা সুদ-সহ পেনশন অ্যাকাউন্টে জমা দিতে হবে। শ্রম মন্ত্রকের সাম্প্রতিক এক বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, পেনশন খাতে বেতনের উপর যে ১.১৬% হারে অনুদান দিত কেন্দ্র, অতিরিক্ত জমা টাকার উপর সেটাও সুদ-সহ কার্যত পিএফ সদস্যকেই মেটাতে হবে। এর ফলে নিয়োগকারীর ভাগের অংশ থেকে সুদ-সহ মোট ৯.৪৯% (৮.৩৩%+১.১৬%) টাকা জমা দিতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্মীর পেনশন অ্যাকাউন্টে।
এই পরিস্থিতিতে বেশি পেনশন পেতে আবেদনের জন্য মনস্থির করলেও, বাড়তি টাকা জমা দিয়ে বেশি পেনশন নেওয়াটা কতটা লাভজনক হবে সে ব্যাপারে বহু পিএফ সদস্য সংশয়ী। ফলে আবেদন করবেন কি না, তা নিয়ে ধন্দে অনেকে। বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, বৃহস্পতিবারের বিজ্ঞপ্তি সেই ধন্দ কাটাতে সাহায্য করবে। এখন কেউ যদি আবেদন করার পরে দেখেন, যে টাকা জমা দিতে হচ্ছে তার তুলনায় হাতে আসা পেনশন তেমন লাভজনক নয়, তা হলে তিনি অতিরিক্ত টাকা জমা না দিয়ে বেশি পেনশনের দাবি ছেড়ে দিতে পারেন। বিশেষজ্ঞেরা এটাও মনে করছেন, অতিরিক্ত ওই টাকা ব্যাঙ্কে রেখে যে সুদ পাবেন তার তুলনায় অতিরিক্ত পেনশনের অঙ্ক কত হবে, তা মিলিয়ে দেখেই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন আবেদনকারী। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করাচ্ছে, অতিরিক্ত যে টাকা পেনশন অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়া হবে তার পরিবর্তে তিনি বেশি পেনশন পাবেন ঠিকই। কিন্তু ওই টাকা সদস্য বা তাঁর উত্তরাধিকারীরা কোনও দিনই ফেরত পাবেন না। উল্লেখ্য, বেশি পেনশন পাওয়ার জন্য আবেদনের শেষ তারিখ ২৬ জুন।