প্রতীকী ছবি।
পেট্রলে লিটারে ৮ টাকা এবং ডিজ়েলে ৬ টাকা উৎপাদন শুল্ক কমিয়ে কি চড়া মূল্যবৃদ্ধির হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করা সম্ভব, রবিবার প্রশ্ন তুলল বিরোধী দলগুলি। তাদের অভিযোগ, এটা বোকা বানানোর চেষ্টা এবং দাম কমানোর নাম করে লোক ঠকানো। দেশবাসীকে সত্যি সুরাহা দেওয়ার ইচ্ছে থাকলে শুল্ক কমানো হত অনেক বেশি। তবে এই বাক-বিতণ্ডার মধ্যেই রবিবার অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ব্যাখ্যা দিয়েছেন, কী ভাবে তেলের থেকে রাজ্যগুলির রাজস্বে হাত না দিয়ে কেন্দ্র শুল্ক কমিয়েছে শুধু নিজেদের আয়ের অংশ ছেঁটে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এ ভাবে বিরোধী রাজ্যগুলির উপরে ভ্যাট কমানোর জন্য চাপ দিচ্ছেন তিনি। মহারাষ্ট্র, রাজস্থান এবং কেরল ইতিমধ্যেই সেই পথে হেঁটেছে।
তেলমন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরীর বক্তব্যেও তেমনই ইঙ্গিত। মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই মোদী সরকার পর পর দু’বার তেলে শুল্ক কমাল বলে দাবি তাঁর। সব মিলিয়ে পেট্রলে যা ১৩ টাকা এবং ডিজ়েলে ১৬ টাকা। তার পরেই তিনি উল্লেখ করেছেন, উৎপাদন শুল্ক দ্বিতীয় বার কমানোর পরেও মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড এবং কেরলে তেলের দাম বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলির তুলনায় ১০-১৫ টাকা বেশি। রাজ্যগুলিকে ভ্যাট কমিয়ে মানুষকে স্বস্তি দিতে বলেন তিনি।
কংগ্রেস এ দিনও শুল্ক ছাঁটাই নিয়ে তীক্ষ্ণ আক্রমণ শানিয়েছে। দলের মুখপাত্র গৌরব বল্লভ বিবৃতি জারি করে কেন্দ্রের বিপুল শুল্ক বৃদ্ধির হিসাব তুলে ধরে বলেন, এটা রাজনৈতিক চমক। তাঁর অভিযোগ, ‘‘বিজেপি সরকার যে অর্থনীতি সামলাতে পারছে না সেটা প্রকাশ হয়ে গিয়েছে। তা মেনে না নিয়ে তারা ছলনার আশ্রয় নিচ্ছে এবং চোখের বিভ্রম তৈরি করছে।’’
এরই মধ্যে নির্মলা এ দিন টুইটারে উৎপাদন শুল্ক ছাঁটাই নিয়ে একগুচ্ছ ব্যাখ্যা দেন। তাঁর দাবি, মূল উৎপাদন শুল্ক, বিশেষ অতিরিক্ত উৎপাদন শুল্ক, সড়ক ও পরিকাঠামো সেস এবং কৃষি ও পরিকাঠামো উন্নয়ন শুল্ক মিলে তেলের উৎপাদন শুল্কের কাঠামো তৈরি হয়। এর মধ্যে শুধু মূল উৎপাদন শুল্ক থেকে আয় রাজ্যগুলির সঙ্গে ভাগ হয়। পেট্রলে ৮ টাকা এবং ডিজ়েলে ৬ টাকা শুল্ক কমানো হয়েছে সড়ক এবং পরিকাঠামো সেস-এর আয় থেকেই। নভেম্বরে যথাক্রমে ৫ টাকা ও ১০ টাকা শুল্কও ওখান থেকেই কমানো হয়।
অর্থমন্ত্রীর বার্তা, দু’দফায় এই শুল্ক ছাঁটাইয়ের ফলে বছরে কেন্দ্রের মোট ২.২০ লক্ষ কোটি টাকা আয় কমল। শুধু শনিবারেরটা ধরলে ১ লক্ষ কোটি। সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, জ্বালানি এবং নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের চড়া দামে গোটা দেশ ফুঁসছে। কার্যত চাপে পড়েই এই পদক্ষেপ করতে হয়েছে তাদের। বিশেষত, খুচরো ও পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি যেখানে রকেট গতিতে বাড়ছে। প্রথমটি প্রায় ৮ শতাংশের কাছে আর দ্বিতীয়টি ১৫% পেরিয়েছে। তাদের মতে, রাজস্ব কমার এই ক্ষতি স্বীকার করতে কেন্দ্রকে খরচ কমাতে হবেই। তবে কোন খাতে, সেটাই এখন প্রশ্ন।
রবিবার তেলঙ্গানার অর্থমন্ত্রী টি হরিশ রাও মোদী সরকারের বিরুদ্ধে জ্বালানির দাম কমানোর নামে লোক ঠকানোর অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর তোপ, কেন্দ্র এখনও (এমনকি আজকেও) ডিজ়েলে লিটার পিছু ৭.৪০ টাকা এবং পেট্রলে ১৬.৪০ টাকা সেস হিসেবে সংগ্রহ করছে। আগে সেস ২০১৪ সালের জায়গায় নিয়ে যাওয়া হোক, তার পরে এত কথা বলুক তারা।