নতুন দশকে আর্থিক পরিকল্পনাও সাজাতে হবে গুছিয়ে

টিন-এজ পার করে কুড়িতে পা রাখল এই শতাব্দী। এ বার বদলাতে হবে অনেক অভ্যাস। নিতে হবে নতুন নতুন রেজ়োলিউশন। তার মধ্যে আর্থিক পরিকল্পনাও সাজাতে হবে গুছিয়ে। ঠিক যেমন কেকের উপরে ক্রিম আর চেরির টপিং! পরামর্শ দিচ্ছেন অমিতাভ গুহ সরকারপ্রতি বছরের গোড়ায় আমরা অনেকেই নতুন নতুন শপথ নিই। কেউ আবার তা লিখে রাখি কেতাদুরস্ত রংবেরংয়ের খাতায়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২০ ০৬:০৮
Share:

বড়দিন থেকে নতুন বছরের পয়লা তারিখ। সারা পৃথিবীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চুটিয়ে পার্টি করেছে আমাদের দেশ, রাজ্যও। হয়েছে পিকনিক, কেক কাটা। সঙ্গত দিয়েছে জাঁকিয়ে শীত। যাকে কিনা বলে মণিকাঞ্চন যোগ। এই মেজাজেই শেষ হল আরও একটা বছর।

Advertisement

এ বার কিন্তু কাজে ফেরার পালা। গুছিয়ে নেওয়ার পালা পার্টি করা অগোছালো ঘর। ঠিক একই ভাবে এ বার নিজেদের মানিব্যাগও গুছিয়ে নিতে হবে সকলকে। বছরের শেষে সেটার উপরে চাপও পড়ছে যথেষ্ট। পুরনো বছরের কাজের চাপে হয়তো কিছুটা অগোছালো হয়ে গিয়েছে অনেকের আর্থিক পরিকল্পনা। সঞ্চয় ও বিনিয়োগ। সেটাও গুছিয়ে নিতে হবে ঠিক করে।

প্রতি বছরের গোড়ায় আমরা অনেকেই নতুন নতুন শপথ নিই। কেউ আবার তা লিখে রাখি কেতাদুরস্ত রংবেরংয়ের খাতায়। যাকে কিনা পোশাকি ভাষায় বলে রেজ়োলিউশন। এ বার কিন্তু এই রেজ়োলিউশন নিতে হবে ব্যক্তিগত আর্থিক পরিকল্পনার ক্ষেত্রেও। শুরুতেই দেখে নিতে হবে আগের বছরের পরিকল্পনার কোন কোন কাজগুলি বাকি থেকে গিয়েছে। নতুন বছরের পরিকল্পনায় প্রথমেই হবে এদের স্থান। এর পর একে একে জুড়ে নিতে হবে মাথায় আসা নতুন নতুন আর্থিক পরিকল্পনাগুলোকে। আর শুধু তালিকা তৈরি করলেই তো হবে না! গুরুত্ব দিয়ে তা সময় মতো করে ফেলার চেষ্টা করতে হবে। যাতে পরের বছরের পরিকল্পনা করতে বসে আবার পুরনো রেজ়োলিউশনগুলোকে জুড়তে না-হয়। আর পরিকল্পনামাফিক এগোলে কিন্তু সাফল্যের সম্ভাবনা অনেকটাই। শুধু অর্থকড়ির দিক দিয়েই নয়, সমস্ত ক্ষেত্রেই যদি এ ভাবে পরিকল্পনা করে এগোনো যায়, তা হলে জীবনটাও হতে পারে সুন্দর।

Advertisement

আমাদের আজকের আলোচনা অবশ্য চলবে ব্যক্তিগত আর্থিক পরিকল্পনা নিয়েই। আমরা চেষ্টা করব নতুন বছরে এই ক্ষেত্রে করণীয় কাজের একটি তালিকা তৈরি করে নিতে। পাশাপাশি, অঙ্গীকার করব সেই সব কাজ সময়মতো করে তালিকাটিকে ছোট করে আনতে।

সেভিংস অ্যাকাউন্ট

ব্যক্তিগত আর্থিক পরিকল্পনার অ-আ-ক-খ হল সেভিংস অ্যাকাউন্ট ঠিকঠাক রাখা। কারণ, বহু ধরনের লগ্নির টাকাই এই অ্যাকাউন্ট থেকে ডেবিট করা হয়। আবার লগ্নির মেয়াদ শেষ হলে সেই টাকা কিংবা ডিভিডেন্ড জমা পড়ে সেভিংস অ্যাকাউন্টে। সংসার খরচ-সহ বিভিন্ন খরচের জন্যও তো এই অ্যাকাউন্টের উপরেই নির্ভর করতে হয়। অথচ অনেক সময়ে আমরা সেভিংস অ্যাকাউন্টকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিই না। এতে আমাদের অনেক সময়ে ভুগতেও হয়। এই অ্যাকাউন্ট নির্বিঘ্নে চালু রাখতে যা যা করণীয়, তার একটি তালিকা শুরুতেই তৈরি করা উচিত।

• ব্যাঙ্কের শাখা থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাসবই ছাপিয়ে নিন। যাঁরা ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট পান, তাঁরা অর্থবর্ষের প্রথম ন’মাসের স্টেটমেন্ট চেয়ে নিন। আয়কর রিটার্ন দাখিলের জন্য এটি খুবই জরুরি। প্রয়োজন ব্যক্তিগত হিসেবের খাতা ঠিক রাখার ক্ষেত্রেও।

• চেকবইয়ের পাতা ফুরিয়ে এলে নতুন বইয়ের জন্য আবেদন করুন।

• কোনও অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় এক বছর বা তার বেশি সময় কোনও টাকা তোলা না-হয়ে থাকলে এক বার কিছু টাকা তুলুন।

• বছর দুয়েক কেওয়াইসি সংক্রান্ত নথি নবীকরণ করা না-হলে ব্যাঙ্কের শাখায় কথা বলে তা করে নিন।

• অ্যাকাউন্ট অনেক পুরোনো হলে নিজের সইও নতুন করে নথিবদ্ধ করিয়ে নিতে পারেন।

• একক নামে অ্যাকাউন্ট থাকলে, তা যুগ্ম নামে করিয়ে নেওয়া উচিত। তা হলে অ্যাকাউন্ট চালাতে সুবিধা হয়। সম্ভব না-হলে অবশ্যই নমিনির নাম নথিবদ্ধ করান। পেনশন অ্যাকাউন্ট যেমন একক নামেই হয়। যাঁদের এই অ্যাকাউন্ট রয়েছে তাঁরা নমিনির নাম নথিভুক্ত করতে ভুলবেন না যেন।

• অ্যাকাউন্টে বেশি টাকা পড়ে থাকলে প্রয়োজনীয় টাকা রেখে বাকি টাকা মেয়াদি আমানত, লিকুইড ফান্ড বা অন্যত্র লগ্নি করুন।

• অনেকেরই প্রয়োজনের তুলনায় বেশি সেভিংস অ্যাকাউন্ট থাকে। আবার যখন যে ব্যাঙ্কে মেয়াদি আমানতের সুদ বেশি তখন সেখানে লগ্নি করে সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলে নেওয়ার প্রবণতা থাকে কারও কারও। কিন্তু সেই লগ্নির মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়ে থাকলে এবং প্রয়োজনের তুলনায় বেশি অ্যাকাউন্ট থাকলে, একটি বা দু’টি বাদে বাকিগুলি বন্ধ করে দিন।

• নিয়মিত পাসবই বা স্টেটমেন্ট পরীক্ষা করুন। দেখুন যে সব টাকা জমা পড়ার কথা তা জমা পড়েছে কি না। যে সব টাকা কাটা হয়েছে তা ঠিক ভাবে কাটা হয়েছে কি না।

• অ্যাকাউন্টে নিজের মোবাইল নম্বর এবং ইমেল আইডি নথিবদ্ধ করা না হয়ে থাকলে, তা অবিলম্বে করিয়ে নিতে হবে। যাতে টাকা জমা ও খরচের তথ্য তাৎক্ষণিক ভাবে পেতে পারেন।

• ডেবিট কার্ড না নেওয়া হয়ে থাকলে আবেদন করে তা ব্যাঙ্ক থেকে সংগ্রহ করতে পারেন।

• কোনও চেক হাতে এলে তা অতি দ্রুত সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টে জমা করুন। মনে রাখতে হবে, সেভিংস অ্যাকাউন্টে দৈনিক ভিত্তিতে সুদের হিসেব কষা হয়।

ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড

এই দু’ধরনের কার্ড এখন কার্যত জীবনের অঙ্গ। এর ভরসায় বাড়িতে নগদ রাখা কমেছে। প্রয়োজনের সময়ে এটিএম থেকে টাকা তুলে নিলেই হল। বিপণিতে কিংবা ইন্টারনেটে বিল মেটানোর ক্ষেত্রেও এর গুরুত্ব সবার আগে। তাই এই কার্ড সব সময়ে সুরক্ষিত রাখতে হবে।

• যে সব এটিএমে সব সময়ের জন্য রক্ষী থাকে শুধু মাত্র সেখানেই কার্ড ব্যবহার করুন।

• আজকাল ওয়ালেটে একাধিক কার্ড রাখতে হয়। তাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা পিন। তার সঙ্গে রয়েছে ইমেল, সোশ্যাল মিডিয়া-সহ হরেক রকমের পাসওয়ার্ডের বোঝা। এত পিন ও পাসওয়ার্ড মাথায় রাখা সত্যিই কঠিন। রাখতে পারলে ভাল। না-হলে নির্দিষ্ট কোনও জায়গায় সেগুলি লিখে রাখতে পারেন। তবে তা হওয়া উচিত সাঙ্কেতিক ভাষায়। কয়েক মাস অন্তর পাসওয়ার্ড পাল্টালে সুরক্ষা বাড়ে।

• পিন এবং পাসওয়ার্ড কখনও কাউকে জানাবেন না।

• সব সময়ে মাইক্রো চিপযুক্ত ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করুন।

• অনামী এবং অসুরক্ষিত সাইটে কার্ড ব্যবহার না-করাই বাঞ্ছনীয়।

• ক্রেডিট কার্ডের দেনা নির্ধারিত সময়ের আগে শোধ করে দিলে কোনও সুদ গুনতে হয় না। সেই সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করুন। তবে সেই তারিখের কথা যেন মাথায় থাকে।

• ক্রেডিট কার্ডের স্টেটমেন্ট নির্দিষ্ট একটি ফাইলে নিয়মিত রেখে দিন। আয়করের ব্যাপারে ভবিষ্যতে কাজে লাগতে পারে।

মিউচুয়াল ফান্ড

সাধারণ লগ্নিকারীদের মধ্যে মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নির প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। যাঁরা শেয়ার বাজারে পা রাখতে চান, কিন্তু শুরুতেই বেশি ঝুঁকি নিতে পারছেন না, তাঁরা পছন্দ করছেন এই প্রকল্প। আবার এসআইপির মাধ্যমে মিউচুয়াল ফান্ড প্রকল্পে ইদানিং বিপুল অঙ্কের লগ্নি আসছে। তাই নতুন বছরে নতুন মিউচুয়াল ফান্ডে বা এসআইপিতে লগ্নির পরিকল্পনা করতেই পারেন। তবে মাথায় রাখুন কয়েকটি ব্যাপার।

• কোনও ফান্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে থাকলে (ক্লোজড এন্ডেড ফান্ড) তা দ্রুত ভাঙিয়ে নিন।

• অনেক ফান্ডে ছোট ছোট ভাগে লগ্নি করা হয়ে থাকলে, সেগুলি গুটিয়ে কয়েকটি ভাল প্রকল্পে লগ্নি সরিয়ে আনলে ভাল হয়। ফান্ড বাছাইয়ের ব্যাপারে বিনিয়োগ পরামর্শদাতারা সাহায্য করতে পারবেন।

• ইকুইটি প্রকল্পেও ডিভিডেন্ডের উপরে এখন কর বসেছে। তাই ডিভিডেন্ড প্রকল্প থেকে বৃদ্ধি বা গ্রোথ প্রকল্পে সরে আসা বুদ্ধিমানের কাজ।

• ইএলএসএস প্রকল্পে লক-ইন মেয়াদ শেষ হয়ে থাকলে তা ভাঙিয়ে নতুন করে কোনও কর সাশ্রয়কারী প্রকল্পে তা লগ্নি করার কথা ভাবতে পারেন।

শেয়ার

• কাগজের আকারে ধরে রাখা শেয়ার এখন আর বিক্রি বা হস্তান্তর করা যায় না। ঘরে এই ধরনের শেয়ার থাকলে তা দ্রুত ডিম্যাট করিয়ে নিন। ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট না-থাকলে তা দ্রুত খুলে নিতে হবে।

• ডিভিডেন্ড নিয়মিত জমা হচ্ছে কি না, তার দিকে নজর রাখুন। না হলে আপনার ব্রোকারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তারাই পরবর্তী পরামর্শ দেবে।

• পরপর সাত বছর ডিভিডেন্ড না নেওয়ার কারণে সংশ্লিষ্ট শেয়ার সরকারের ইনভেস্টর্স এডুকেশন অ্যান্ড প্রোটেকশন ফান্ডে স্থানান্তরিত হয়ে যায়। আপনার ক্ষেত্রেও তেমন হয়ে থাকলে নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে তা ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা করুন।

• গত বছর সেনসেক্স এবং নিফ্‌টি ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও সূচকের বাইরের বহু বড়, মাঝারি ও ছোট শেয়ার অনেক দিন তলানিতে থেকে গিয়েছে। এই সমস্ত শেয়ার বিক্রি করে ভাল শেয়ারে লগ্নির কথা ভাবতে পারেন।

• বছরে এক বার ডিম্যাট স্টেটমেন্ট আনিয়ে পরীক্ষা করে দেখুন আপনার সব শেয়ার ঠিকঠাক আছে কি না।

• আগে করা না হয়ে থাকলে ডিম্যাট অ্যাকাউন্টে আপনার মোবাইল নম্বর এবং ইমেল আইডি নথিবদ্ধ করান।

ব্যাঙ্ক/কোম্পানি এফডি

হরেক লগ্নির বাজারে এখনও পর্যন্ত কিন্তু সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি ভরসা রাখেন ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসের মেয়াদি আমানতে। কারণ মূলত তহবিলের নিরাপত্তা। তবে ব্যাঙ্কের পাশাপাশি ভাল সংস্থার মেয়াদি আমানতের জনপ্রিয়তা এখন বাড়ছে। নতুন বছরে এ ক্ষেত্রেও কিছু জিনিস মাথায় রাখতে হবে।

• মেয়াদ শেষে তা দ্রুত ভাঙানো অথবা নবীকরণের ব্যবস্থা করুন।

• পরীক্ষা করে দেখুন সুদ সময় মতো জমা পড়ছে কি না।

• উপযুক্ত ক্ষেত্রে উৎসে যাতে কর না কাটা হয়, তার জন্য ১৫জি অথবা ১৫এইচ ফর্ম সময় মতো জমা করুন।

• নমিনেশন করা না-থাকলে অবিলম্বে করিয়ে নিন সেটাও।

• বেসরকারি সংস্থায় টাকা জমা রাখলে নিয়মিত সেই সংস্থার রেটিংয়ের উপরে নজর রাখুন।

জীবন/স্বাস্থ্য বিমা

জীবন বিমা নিশ্চিত ভাবেই জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লগ্নি ক্ষেত্র। যে কোনও মানুষ পেশার শুরুতে সবচেয়ে আগে যে প্রকল্পে লগ্নি করেন, সেটি অবশ্যই জীবন বিমা। এই বিমার গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। সরকারও চাইছে যত বেশি সম্ভব সাধারণ মানুষকে বিমার আওতায় নিয়ে আসতে। পাশাপাশি, সচেতনতা বাড়ছে স্বাস্থ্য বিমা নিয়েও। এ ক্ষেত্রেও কিছু কিছু জিনিস বজায় রাখা জরুরি।

• সব রকম বিমার প্রিমিয়াম মিটিয়ে দিন সময়ের আগেই। মনে রাখবেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রিমিয়াম জমা না করলে স্বাস্থ্য বিমার পলিসি বাতিল হয়ে যেতে পারে।

• উপযুক্ত অঙ্কের বিমা এখনও না নেওয়া হয়ে থাকলে নতুন বছরের গোড়াতেই নতুন কোনও জীবন বিমা করাতে পারেন।

• কোনও বিমার মেয়াদ শেষ হয়ে থাকলে তা জমা করে প্রাপ্য টাকা পাওয়ার জন্য আবেদন করুন।

• ঠিকানা পরিবর্তন হয়ে থাকলে তা সংশ্লিষ্ট বিমা সংস্থাকে প্রমাণ-সহ জানিয়ে দিন।

কর সাশ্রয়

চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ন’মাস আমরা পার হয়ে এসেছি। হাতে আর মাত্র তিন মাস। এরই মধ্যে সেরে ফেলতে হবে কর সাশ্রয়ের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় লগ্নি। শেষ দিনের জন্য ফেলে রাখলে পরে চাপ বাড়বে। এই কারণে এখনও এই খাতে পুরো লগ্নি করা না-হয়ে থাকলে তা শুরু করুন এখন থেকেই।

নথি/তথ্য সংরক্ষণ

• বিনিয়োগ, ব্যাঙ্কিং, বিমা, সম্পত্তি, লকার ইত্যাদি সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য গুছিয়ে একটি ডায়েরিতে লিখুন। তা জানিয়ে রাখুন সবচেয়ে কাছে মানুষকে।

• লগ্নি এবং সম্পত্তি সংক্রান্ত সব নথি অথবা তার কপি রাখুন একটি ফাইলে। মূল নথি রাখতে পারেন লকারে বা অন্য কোনও নিরাপদ জায়গায়।

• আগেই বলেছি, বিভিন্ন পিন, পাসওয়ার্ড ইত্যাদি যদি মনে রাখতে না-পারেন, তা হলে একটি ডায়েরিতে লিখে রাখতে পারেন। তবে তা হওয়া উচিত সাঙ্কেতিক ভাষায়। নির্ভরযোগ্য কাউকে তা পাঠোদ্ধারের সূত্র জানিয়ে রাখতে পারেন।

উইল

যদি উইল করার কথা মাথায় এসে থাকে এবং তার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন, তা হলে নতুন বছরে তা চটজলদি করে ফেলুন। যদি মনে করেন পরে তা পরিবর্তন করতে হতে পারে, তা-ও কিন্তু করা যায়। উইল নিজেও লেখা যায়। তবে কোনও আইনজীবীর সাহায্য নিলে তা আরও নিপুণ হতে পারে।

অন্যান্য

• সম্পত্তি কর যদি দেওয়া না হয়ে থাকে, তবে অবিলম্বে তা মিটিয়ে দিন।

• ব্যাঙ্ক লকারের ভাড়া বকেয়া থাকলে তা মেটানোর ব্যবস্থা করুন।

• ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষের আয়করের রিটার্ন যদি এখনও দাখিল না করে থাকেন, তবে তা অবশ্যই আগামী সাত দিনের মধ্যেই করে ফেলুন।

• ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে যদি কোনও অগ্রিম কর দেওয়ার থাকে, তবে তা অবিলম্বে জমা করুন।

• স্বনির্ভর মানুষদের মধ্যে যাঁরা এখনও পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খোলেননি, তাঁরা নতুন বছরে তা খোলার কথা ভাবতে পারেন।

• কোনও সম্পত্তি কেনা হয়েছে। কিন্তু তার রেজিস্ট্রেশন বা মিউটেশন এখনও করা হয়নি। সে ক্ষেত্রে এখনই তা করিয়ে নিন।

• ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, প্যান কার্ড, রেশন কার্ডের মধ্যে পারস্পরিক সংযুক্তিকরণ যদি করা না হয়ে থাকে, তবে তা করতে যেন আর দেরি না হয়।

• পাসপোর্টের মেয়াদ ফুরিয়ে এলে তা নবীকরণের জন্য আবেদন করুন।

আপনার আর্থিক রেজ়োলিউশন অবশ্য এখানে শেষ না-ও হতে পারে। লগ্নি পরিকল্পনা অনুযায়ী এক এক জনের ক্ষেত্রে তা হবে এক এক রকম। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, পিপিএফ বা সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার মতো প্রকল্পে অর্থবর্ষে অন্তত এক বার ন্যূনতম কিছু টাকা জমা করতে হয়। এখনও যদি তা হয়ে না-থাকে, তবে অবিলম্বে জমা করতে হবে। অতএব নিজের নিজের মতো করে সাজিয়ে তুলতে হবে আর্থিক সঙ্কল্পের থালা। আর শুরুতে যা বলেছিলাম, মন দিয়ে সেগুলি পালন করা জরুরি। তাতে ভবিষ্যতে চাপ কমে।

লেখক বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ (মতামত ব্যক্তিগত)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement