তেলমন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী। ফাইল চিত্র।
পেট্রল-ডিজ়েলের দাম নিয়ে মোদী সরকারের সঙ্গে বিরোধী দলগুলির তরজা নতুন নয়। বৃহস্পতিবার তাতে নতুন মাত্রা যোগ হল লোকসভায় তেলমন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরীর মন্তব্যে। পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানা, কেরল এবং ঝাড়খণ্ডের নাম করে তাঁর বক্তব্য, কেন্দ্র এবং কয়েকটি রাজ্য পেট্রোপণ্যের কর কমালেও অ-বিজেপিশাসিত এই রাজ্যগুলি ভ্যাট ছাঁটার পথে হাঁটেনি। সে কারণেই এই সমস্ত রাজ্যে তেলের দাম বেশি। বিরোধীদের হইহট্টগোলের মধ্যেই বক্তৃতা দিয়েছেন মন্ত্রী। পরে কংগ্রেস, তৃণমূল, ডিএমকে এবং এনসিপির সদস্যেরা সভা থেকে ওয়াকআউট করেন।
তেলের চড়া দরে দেশের মানুষ অনেক দিন ধরেই ব্যতিব্যস্ত। পরিবহণ জ্বালানির দামের প্রভাব পড়ছে অন্যান্য পণ্য ও পরিষেবার খরচেও। অর্থনীতিবিদদের বক্তব্য, এত দিন ধরে খুচরো এবং পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার উঁচুতে উঠে থাকার সেটাও একটা কারণ। এ দিন পুরীর দাবি, সারা বিশ্বে ভারতের তেলের দাম তুলনামূলক ভাবে কম। এ দেশ বিশ্ব বাজারে যে বাস্কেট থেকে তেল কেনে, তা ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের নভেম্বরের মধ্যে ১০২% বেড়েছিল (ব্যারেলে ৪৩.৩৪ ডলার থেকে ৬৭.৫৫ ডলার)। আর গত ৬ এপ্রিল থেকে দেশে পেট্রল-ডিজ়েলের দাম স্থির। বিশ্ব বাজারে তেলের চড়া দামের ফলে চলতি অর্থবর্ষের প্রথমার্ধে তেল সংস্থাগুলির মোট ২৭,২৭৬ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। জ্বালানির দাম নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য পেট্রল-ডিজ়েলের উৎপাদন শুল্ক ছাঁটাই করেছে কেন্দ্র। তার ফলে লিটার প্রতি পণ্য দু’টির দাম যথাক্রমে ১৩ টাকা এবং ১৬ টাকা কমেছে। বেশ কয়েকটি রাজ্যও ভ্যাট কমিয়ে সুরাহা দিয়েছে সাধারণ মানুষকে। কিন্তু ছ’টি রাজ্য তা করেনি। মন্ত্রী বলেন, ‘‘বিরোধী সাংসদদের আমার পরামর্শ, তাঁরা নিজের নিজের রাজ্যকে ভ্যাট কমাতে বলুন। যাতে সেই রাজ্যগুলির মানুষদেরও সুরাহা হয়।’’
বিরোধীদের অবশ্য বক্তব্য, মন্ত্রীর এই যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। অতীতে একাধিক বার বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমলেও মোদী সরকার উৎপাদন শুল্ক বাড়িয়ে রাজকোষ ভরেছে। মানুষকে সুরাহা দেয়নি। একটা সময়ে অশোধিত তেল ১৩০ ডলারের কাছাকাছি পৌঁছে গেলেও এখন তা ফের নেমেছে ৮০ ডলারের কাছে। কিন্তু দেশের বাজারে জ্বালানির দাম কমেনি।
অতীতে অবশ্য কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনও তেলের চড়া দামের জন্য বিরোধী রাজ্যগুলিকে দায়ী করেছিলেন। জানিয়েছিলেন, উঁচু ভ্যাটের বিরূপ প্রভাব পড়ছে রাজ্যস্তরে মূল্যবৃদ্ধির উপরে।