দুই বছর আগের গরমের মরসুম। আলাদা রাজ্যের দাবিতে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে দার্জিলিং পাহাড়। বিমল গুরুঙের ডাকে টানা ১০৮ দিনের বন্ধে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে পাহাড়ের জনজীবন। প্রভাব পড়ে গোটা জেলার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও। সব চেয়ে বেশি মার খায় পর্যটন ব্যবসা। যার সরাসরি প্রভাব পড়ে বিমান পরিষেবা ক্ষেত্রে। রাতারাতি বাগডোগরা বিমানবন্দরের বছরের যাত্রীর বৃদ্ধির শতাংশের অনেকটাই নেমে যায়। প্রভাব পড়ে আন্তর্জাতিক যাত্রী সংখ্যাতেও। ধীরে ধীরে পাহাড়ের পরিস্থিতি পাল্টেছে। চলতি গরমের মরসুমে বহু দেশ বিদেশের পর্যটকেরা পাহাড় থেকে সমতলে ঘুরতে এসেছেন। তাতেই যাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধির শতাংশের হারের নতুন আশা দেখছেন অফিসারেরা।
গত মার্চ মাসে এয়ারপোর্ট অথারিটি অব ইন্ডিয়া (এএআই)যাত্রী সংখ্যা নিয়ে নতুন সমীক্ষায় যাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি হার ধরা পড়েছে। তবে প্রভাব রয়েছে আন্তর্জাতিক যাত্রীর সংখ্যায়। তবে বৃদ্ধির হার অবশ্য আগের মতো হয়নি। ওই অফিসারদের বক্তব্য, এ অঞ্চলের গত দুই বছরের পরিস্থিতির সঙ্গে বিমান সংস্থাগুলি বাগডোগরায় ডায়নামিক ‘ভাড়া’র নামে আকাশছোঁয়া ভাড়ায় কিছুটা লাগাম দিলে যাত্রী সংখ্যা অচিরেই আবার নতুন রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলবে। উল্লেখ্য, দুই বছর আগে রেকর্ড হারে বাগডোগরার যাত্রী বৃদ্ধির হার ছিল বছরে প্রায় ৪৮ শতাংশের মতো। যা দেশের বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে রেকর্ড করে। সেখানে চলতি বছরে বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ২৯ শতাংশের মতো। বিমানবন্দরের অধিকর্তা সুব্রমণী পি বলেন, ‘‘বিমানবন্দরের যাত্রী সংখ্যা প্রায় ২৯ শতাংশ হারে বেড়েছে। গত বছর নানা কারণে বৃদ্ধির হার একটু কম ছিল। আগামীতে আবার পুরানো মাত্রায় ফিরবে বলেই আমরা মনে করছি।’’
উত্তরবঙ্গের একমাত্র সচল বড় বিমানবন্দর বাগডোগরা। কোচবিহার থেকে বালুরঘাট, নামনি অসম, সিকিম, নেপাল এবং ভুটানের একাংশ অনেক সময়ই এই বিমানবন্দরকে ব্যবহার করে থাকেন। বিশেষ করে শিলিগুড়িকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থার আগমন, একাধিক স্কুল কলেজ ম্যানেজমেন্ট, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ তৈরি ছাড়াও পর্যটন শিল্পের একটি বড় অংশ বিমানবন্দরের উপর নির্ভরশীল। গত ২০১৬ সালের পর থেকে এএআই বাগডোগরার সঙ্গে দেশের নতুন নতুন একাধিক শহরের যোগাযোগ তৈরি শুরু করে। কলকাতা, দিল্লি, গুয়াহাটির পর হায়দরাবাদ, মুম্বই, চেন্নাই, ডিব্রুগড়ে সরাসরি বিমান ছাড়াও একাধিক সংযোগকারী শহরের মধ্যে বিমান চালু হয়। তাতেই যাত্রী সংখ্যা বাগডোগরার বাড়তে থাকে।
এর পরেই রাজ্য সরকার বিমানের তেলের সারচার্জে ছাড় দিতেই বিমানের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়। যার সুফলে যাত্রী সংখ্যা ২৩ লক্ষের কাছাকাছি পৌঁছয়। এর পরে ২০১৭ সালের পাহাড় সমস্যার জেরে পর্যটনে প্রভাবে কমে যাত্রী। ২০১৮ সাল থেকে পরিস্থিতি আবার ঠিকঠাক হতে থাকলেও ‘ডায়ানামিক ফেয়ারের’ ঠেলায় যাত্রী কমছে বলে অফিসারেরা মনে করছেন। চলতি মাসে বাগডোগরা-কলকাতা টিকিট ৫০ হাজার টাকা ছাড়ায়।
হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল জানান, কোনও এলাকায় সমস্যা, গোলমাল চললে অঞ্চলটিতে লোকজনের আগমনে প্রভাব পড়েই। বিদেশিরা এখনও খোঁজখবর নিয়ে আসেন। কিন্তু তা স্বাভাবিক হতে বিমানের টিকিটের দর একটা বিষয়।