-ফাইল চিত্র।
সংস্থার লেনদেন ব্যবসায় নিষেধাজ্ঞা জারির প্রায় এক বছরের মাথায় নিয়ম না-মানায় কার্ভি স্টক ব্রোকিং-কে খেলাপি বলে ঘোষণা করল ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (এনএসই)। কাড়া হয়েছে তাদের সদস্যপদও। একই সঙ্গে মঙ্গলবার ব্রোকিং সংস্থাটির লেনদেনে চূড়ান্ত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সেবি।
বলেছে, লগ্নিকারীদের টাকা ফেরানো শেষ না-হওয়া পর্যন্ত এনএসই-র সায় ছাড়া সম্পদ হাতবদল করতে পারবে না কার্ভি। এই সিদ্ধান্তে সংস্থার গ্রাহকেরা শেয়ার ও নগদ মিলিয়ে নিজেদের টাকা ফেরতের দাবি জানাতে পারবেন ঠিকই, কিন্তু কী ভাবে প্রায় ১০০০ কোটি টাকার ওই বকেয়া মেটানো হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
নিয়ম অনুসারে, ব্রোকিং সংস্থা আনুষ্ঠানিক ভাবে খেলাপি ঘোষিত হলে, সংশ্লিষ্ট এক্সচেঞ্জের গ্রাহক সুরক্ষা তহবিল থেকে টাকা ফেরতের দাবি জানাতে হয়। সে ক্ষেত্রে এক জন পান সর্বোচ্চ ২৫ লক্ষ টাকা। ফলে তার বেশি লগ্নি থাকলে কী ভাবে এবং কত টাকা পাবেন, তা নিয়ে সংশয় থাকছে। তার উপরে যে ঋণদাতাদের কাছে শেয়ার বন্ধক রেখে কার্ভি টাকা তুলেছিল, তাদের একাংশ লগ্নিকারীদের শেয়ার ফেরানো নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে।
ঘটনা কী
• গত বছর নভেম্বরে জানা গেল, গ্রাহকদের পাওয়ার অব অ্যাটর্নির সাহায্য নিয়ে তাঁদের শেয়ার নিজেদের ডিম্যাট অ্যাকাউন্টে সরিয়েছে কার্ভি ব্রোকিং।
• সেই শেয়ার বন্ধক রেখে বাজার থেকে ২০০০ কোটি টাকার বেশি তুলেছে তারা।
• যে টাকার একাংশ সরানো হয়েছে কার্ভি রিয়েল এস্টেটের মতো সংস্থায়।
• কার্ভি নতুন গ্রাহক নথিভুক্ত করতে পারবে না, অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিল সেবি।
• ডিসেম্বরে ডিপোজ়িটরি সংস্থা এনএসডিএল-কে কার্ভির লগ্নিকারীদের শেয়ার তাঁদের ডিম্যাট অ্যাকাউন্টে ফেরাতে বলল তারা।
• কার্ভির লেনদেনের অধিকার ফিরিয়ে নিল এনএসই।
• প্রায় এক বছর পরে মঙ্গলবার কার্ভিকে খেলাপি (ডিফল্টার) বলে ঘোষণা করল এনএসই। কেড়ে নেওয়া হল সদস্যপদও।
• লেনদেনে নিষেধাজ্ঞার চূড়ান্ত নির্দেশ দিল সেবি। নিষেধ সম্পত্তি হাতবদলেও।
কী হবে লগ্নিকারীদের
• প্রায় ২.৩৫ লক্ষ গ্রাহককে ২৩০০ কোটি টাকারও বেশি ফেরানো হয়েছে বলে জানিয়েছে এনএসই।
• জোর ক্ষুদ্র লগ্নিকারীদের উপরে, যাঁদের বিনিয়োগ ৩০,০০০ টাকার কম।
• এখনও প্রায় ১০০০ কোটি ফেরানো বাকি।
• কার্ভিকে খেলাপি ঘোষণা করায় এ বার বাকি গ্রাহক টাকা ফেরত পেতে দ্বারস্থ হতে পারবেন এনএসই-র।
• স্টক এক্সচেঞ্জটির গ্রাহক সুরক্ষা তহবিল থেকে সেই অর্থ মেটানোর কথা।
সমস্যা কোথায়
• তহবিলের অর্থ শেষ হতে পারে কার্ভির লগ্নিকারীদের টাকা মেটাতেই। ফলে সমস্যা হবে আগামী দিনে।
• এই তহবিল থেকে এক জন সর্বোচ্চ ২৫ লক্ষ পাবেন। তার বেশি লগ্নি থাকলে টাকা পাওয়া অনিশ্চিত।
• যে শেয়ার বন্ধক রাখা হয়েছিল, তার অধিকার নিয়ে ইতিমধ্যেই বিরোধ বেঁধেছে ঋণদাতাদের সঙ্গে।
এ ছাড়া, ছোট লগ্নিকারীদের টাকা ফেরানোর পরেও আরও হাজার কোটি দিতে হবে কার্ভিকে। ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য বিধান দুগার বলেন, ‘‘ওই অর্থ এনএসই-র লগ্নিকারী সুরক্ষা তহবিল থেকে দিতে হলে, তার প্রায় পুরোটাই উবে যাবে।’’ ফলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা কী ভাবে সামাল দেওয়া যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তবে সূত্রের খবর, লগ্নিকারীদের টাকা মেটাতে এখনও সংস্থা নিজেরাই চেষ্টা চালাচ্ছে।