ইনফোসিসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এন আর নারায়ণমূর্তি। —ফাইল চিত্র।
উৎপাদনশীলতার নিরিখে অনেক দেশের চেয়েই ভারত পিছিয়ে থাকায় দেশের তরুণ প্রজন্মকে সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন ইনফোসিসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এন আর নারায়ণমূর্তি। যা নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়েছে দেশে। উৎপাদনশীনতা বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে আপত্তি না থাকলেও তাঁর সেই বার্তা শ্রমনীতির পরিপন্থী বলে মন্তব্য করল বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন।
সম্প্রতি ইনফোসিসের প্রাক্তন সহযোগী মোহনদাস পাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার পক্ষে সওয়াল করে ওই দাওয়াই দেন নারায়ণমূর্তি। তবে সেটি পাঁচ না ছ’দিনের হিসাবে তা তিনি স্পষ্ট না করলেও, দুই ক্ষেত্রেই আট ঘণ্টার কাজের যে আন্তর্জাতিক রীতি স্বীকৃত রয়েছে, তার চেয়ে বেশি।
শনিবার সিটুর সাধারণ সম্পাদক তপন সেন বলেন, ‘‘ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা কী ভাবে শ্রমিক বিরোধী এমন কথা বললেন! এই ভাবনাই আন্তর্জাতিক সব শ্রমনীতির পরিপন্থী। যা কার্যকর হলে ভারতের মতো দেশে বেকারত্ব আরও বাড়বে। ইতিমধ্যেই আধুনিক প্রযুক্তির জেরে এমনিতেই কম কর্মী লাগছে। কাজের সময় বাড়লে তা কর্মসংস্থানে আরও বিরূপ প্রভাব ফেলবে।’’
এআইটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক অমরজিৎ কউরের দাবি, নারায়ণমূর্তির বক্তব্য আর কেন্দ্রের প্রস্তাবিত শ্রমবিধি প্রায় একই। তিনি বলেন, ‘‘কিন্তু ১৯১৯ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সম্মেলনে আট ঘণ্টা কাজের প্রস্তাবে সায় দিয়েছিল ভারতও। তাই আমরা ওই শ্রমবিধিরই বিরোধী।’’
একই সুর ইউটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক অশোক ঘোষের গলাতেও। তাঁর কথায়, ‘‘ভারতে লকডাউনের পরে কোনও কোনও মহলে শ্রমিকদের ১২ ঘণ্টা কাজ করানোর দাবি উঠলেও, আইএলও তা সমর্থন করেনি। ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা সম্মাননীয় ব্যক্তি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, তিনি ওই নিদান দিলেও ন্যূনতম বেতন নিশ্চিত করা নিয়ে কিছুই বলেননি!’’
আইএনটিইউসি-র সহ-সভাপতি এবং আইএলও-র পরিচালন পর্ষদের অন্যতম সদস্য অশোক সিংহরও প্রশ্ন, ‘‘সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজ করলে সেই মতো বেতন দেওয়া হবে কি?’’
তপন ও অমরজিতের পাল্টা দাবি, কাজের সময় না বাড়িয়েও উৎপাদনশীতা বাড়ানো সম্ভব। তা প্রমাণ করার মতো দেশেই নানা উদাহরণ রয়েছে।