ছবি: সংগৃহীত
সময় মাত্র ২৫ সেকেন্ড।
পুজোর আড্ডায় মশগুল থাকলে মোবাইল ফোন বাজলে তা চট করে খেয়াল না পড়াটা স্বাভাবিক। তবে এ বার নিত্য দিন তা একটু বেশিই খেয়াল করতে হবে। কেউ ফোন করলে প্রতিবার তা বাজবে মাত্র ওই ২৫ সেকেন্ড। ধরতে না পারলে ‘মিস্ড-কল’ হয়ে যাবে। তখন হয় ফের ফোন আসার অপেক্ষা অথবা সেই নম্বরে ফোন করার ঝক্কি পোহাতে হবে।
রিলায়্যান্স-জিয়ো বাজারে আসার পরে মাসুল যুদ্ধের জেরে এই শিল্পের আর্থিক বোঝা বেড়েছে বলে দাবি একাংশের। সূত্রের খবর, রিং-টাইম হ্রাসের পিছনে এ বার আর এক মাসুল, আইইউসি নিয়ে যুদ্ধের ইঙ্গিত রয়েছে। নাম না করে সম্প্রতি এয়ারটেলের দাবি ছিল, জিয়ো-র গ্রাহক অন্য সংস্থার গ্রাহককে ফোন করলে তা মাত্র ২৫ সেকেন্ড বেজেই প্রতিবার থেমে যাচ্ছে। কোনওটি ‘মিস্ড কল’ হলে তখন অন্য সংস্থার গ্রাহক জিয়ো-র গ্রাহককে পাল্টা ফোন করছেন। ফলে জিয়ো সেই সংস্থাকে আইইউসি দেওয়ার বদলে তাদের থেকে উল্টে আইইউসি বাবদ আয় করছে। এ নিয়ে ট্রাইকে চিঠি দিয়ে এয়ারটেল জানায়, তারাও রিং টাইম কমিয়ে ২৫ সেকেন্ড করছে। সূত্রের খবর, ভোডাফোন-আইডিয়া কিছু সার্কলে তা করলেও বিএসএনএল এখনও তা কমায়নি। আগামী ১৪ অক্টোবর সংশ্লিষ্ট মহলকে নিয়ে ট্রাইয়ের আলোচনা সভা হতে পারে। সংবাদ সংস্থার খবর, জিয়ো কোনও রকম সময়সীমা বাধ্যতামূলক ভাবে বেঁধে দেওয়ার বিরুদ্ধে।
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, সময় কমলে আখেরে গ্রাহক পরিষেবার উপর প্রভাব পড়বে। সে জন্য ফোন করার পরে কথা না হলে কেউ ভাবতে পারেন ‘কল-ড্রপে’র সমস্যা হচ্ছে। যা গ্রাহক অসন্তোষ আরও বাড়াতে পারে।
তাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ ওড়ালেও সময় কমানোর কথা জিয়ো কার্যত অস্বীকার করেনি। তাদের দাবি, বিশ্বে বেশিরভাগ সংস্থাই গড়ে ১৫-২০ সেকেন্ড সময় দেয়। তাদের আরও দাবি, আইইউসি-র জন্য পুরানো সংস্থাগুলির ২জি ও ৩জি গ্রাহকদের ফোনের জন্য বেশি হারে মাসুল দিতে হচ্ছে। তাই অন্য সংস্থার গ্রাহকেরা জিয়োর নিখরচায় ফোনের সুবিধা নিতে তাঁদের মিস্ড-কল দিচ্ছেন। যদিও আইইউসি-র পক্ষে থাকা অন্য সংস্থাগুলির দাবি, ২জি ও ৩জির পরিকাঠামো গড়তে বিপুল লগ্নি করছে তারা। তবে তাদের বিরুদ্ধে ওঠা আইইউসি বাবদ বাড়তি আয় নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি জিয়ো।
রিং টাইম কী
এক জন আর এক জনকে কল করলে দ্বিতীয়জন ফোননা-ধরা পর্যন্ত সেটি বাজার (রিং) সময়।
বিতর্ক কোথায়
ভারতে সমস্ত সংস্থা নির্বিশেষে তা ৪৫ সেকেন্ড ছিল। সম্প্রতি এয়ারটেলের দাবি, রিলায়্যান্স জিয়ো তা কমিয়ে ২৫ সেকেন্ড করার দরুন, তারাও সে পথে হাঁটছে। একই যুক্তিতে সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভোডাফোন আইডিয়াও।
দু’টি ভিন্ন সংস্থার গ্রাহক একে অপরকে ফোন করলে সংযোগ চালু হওয়ার পরে ইন্টারকানেকশন ইউসেজ চার্জ (আইইউসি) মাসুল ধার্য হয়। যে সংস্থার সংযোগ থেকে ফোন করা হচ্ছে তারা যে সংযোগে কল ঢুকছে তাদের এখন মিনিটে ৬ পয়সা হারে আইইউসি দেয়।
কিন্তু মিস্ড কল হলে বহু ক্ষেত্রেই ফিরতি কল (কল ব্যাক) করেন ফোন ধরতে না পারা গ্রাহক। তখন তাঁরসংযোগের সংস্থাকে মাসুল দিতে হয়।
গ্রাহকের সমস্যা
মোবাইলে ফোন এলে তা আগের থেকে কম সময় বাজবে। আগের থেকে মিস্ড কলের সংখ্যা বাড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে বাড়বে ফিরতি ফোন করার ঝক্কি।
এ নিয়ে এয়ারটেল, ভোডাফোন-আইডিয়া-র প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে সূত্রের বক্তব্য, প্রতিযোগিতার বাজারে অন্যরা সময় কমালে আর্থিক পরিস্থিতির অবনতি রুখতে তাদেরও তাতে সামিল হওয়া ছাড়া উপায় নেই।
মোবাইল থেকে ফোন করার খরচ কম রাখতে আগে অনেকেই অন্যকে ‘মিস্ড কল’ দিতেন। এখন মাসুল হার কমায় তা আর সে রকম দরকার পড়ে না। তবে টেলিকম শিল্পের নতুন সমীকরণের জেরে ফের মিস্ড-কলের চক্করে পড়ার আশঙ্কা থাকছে।