প্রতীকী ছবি
ভারতীয় অর্থনীতির দুর্বল স্বাস্থ্যের চিহ্নগুলি উপেক্ষা করেই নজির গড়েছিল সেনসেক্স। পরে সেই জায়গা থেকে নামলেও, তার পা এখনও ৪০ হাজারের খানিকটা উপরে। প্রথমবার ১২ হাজার স্পর্শ করার পরে সামান্য নেমে নিফ্টি ১১,৯১৪ পয়েন্টে। তবে সূচকের এত উঁচুতে পৌঁছনোর মূল কারণ বড় মাপের সংস্থার শেয়ারগুলির (লার্জ ক্যাপ) দাম বাড়া। ফলে আগামী দিনে ভাল মানের ছোট-মাঝারি সংস্থাগুলির শেয়ার দর বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এতদিন পিছিয়ে ছিল যারা। মনে করা হচ্ছে ভাল রিটার্নের খোঁজে লগ্নিকারীদের নজর এ বার সেগুলির দিকে ঘুরবে। বিশেষত এই দুই শ্রেণির কোনও কোনও শেয়ার এরই মধ্যে যেহেতু উপরের দিকে তাকাতে শুরু করেছে।
দেশের অর্থনীতি নিয়ে চারদিক থেকে যখন খারাপ খবরের প্রবাহ অব্যাহত, তখন সামান্য আশার আলো দেখিয়েছে অর্গানাইজ়েশন ফর ইকনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি)। প্যারিসের এই সংস্থা ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে ভারতে বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৫.৯% থেকে বাড়িয়ে করেছে ৬.২%। সরকারকে কিছুটা স্বস্তি দিয়ে বলেছে, সম্প্রতি দেশের অন্দরে চাহিদা ও বিক্রি বাড়ার কারণেই এই ইঙ্গিত। এমনকি তারা এটাও মনে করে যে, চাহিদা বাড়ার সঙ্গে বাড়বে বেসরকারি লগ্নিও। যে লগ্নিতে ভাটা থাকায় মার খাচ্ছে কল-কারখানায় উৎপাদন। ভুগছে বেশির ভাগ শিল্প। এর আগে আরবিআই,বিশ্ব ব্যাঙ্ক, মূল্যায়ন সংস্থা মুডি’জ়-সহ প্রায় সকলেই বৃদ্ধির পূর্বাভাস ছাঁটাই করেছে। এই পরিস্থিতিতে বৃদ্ধি নিয়ে ওইসিডি-র ইঙ্গিত কিছুটা হলেও অর্থনীতি সম্পর্কে আশা জাগায়।
সম্প্রতি কেন্দ্রকে বকেয়া লাইসেন্স ও স্পেকট্রাম ফি মেটানোর জন্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বিপুল আর্থিক বোঝা চেপেছে টেলিকম সংস্থা এয়ারটেল এবং ভোডাফোন-আইডিয়ার ঘাড়ে। সেই খাতে আর্থিক সংস্থান করতে গিয়ে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে পাহাড়প্রমাণ লোকসানে ডুবেছে তারা। এই পরিস্থিতিতে সরকার স্পেকট্রাম বাবদ শুল্ক আদায়ের শর্ত কিছুটা শিথিল করায় এবং এই দুই সংস্থা ফোনের মাসুল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় গত সপ্তাহে বেড়েছে তাদের শেয়ারের দাম। মাসুল বাড়াচ্ছে বিএসএনএল এবং রিলায়্যান্স জিয়ো-ও। অর্থাৎ ডিসেম্বর থেকে ফোনের খরচ বাড়বে সাধারণ মানুষের। কিন্তু শেয়ার বাজার খুশি। মুকেশ অম্বানীর রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ়ের শেয়ার দর ১৫০০ টাকা পেরিয়েছে। বাজারে শেয়ার মূলধন প্রথম বার ছাপিয়েছে ৯.৫ লক্ষ কোটি টাকা।
তবে সুদ কমায় আকর্ষণ কমছে বিভিন্ন স্থির আয়ের প্রকল্পের। যে কারণে ব্যাঙ্ক এফডি-র বদলে বহু মানুষ ঝুঁকছেন ৭.৭৫% সুদযুক্ত ভারত সরকারের বন্ডের দিকে। এই বন্ডের সমস্যা একটাই— যখন খুশি ভাঙানো যায় না। তাই অনেকে অপেক্ষা করছেন রুরাল ইলেক্ট্রিফিকেশন কর্পোরেশন এবং ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি বন্ডের জন্যও। কমবেশি ঝুঁকি নিতে যাঁদের আপত্তি নেই, তাঁরা মিউচুয়াল ফান্ড এবং শেয়ার বাজারেও পা বাড়াচ্ছেন। দেশের আর্থিক স্বাস্থ্য ভাল নেই, তবে শেয়ার ও ফান্ডে লগ্নিকারীরা এখনও স্বস্তিতে।
(মতামত ব্যক্তিগত)