কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী। —ফাইল চিত্র।
যখন এক ফোঁটা পেট্রল-ডিজ়েলও বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে না, তখন ভারত ‘নতুন করে স্বাধীনতা পাবে’ বলে মন্তব্য করলেন কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী। রবিবার গোয়ায় এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, রফতানি বাড়ানো এবং আমদানিকে কমিয়ে আনাই দেশাত্মবোধ এবং স্বদেশি ভাবনার নতুন পথ। তাই তাঁর জীবনের লক্ষ্য, দেশে জ্বালানি আমদানি বন্ধ করা। যদিও মন্ত্রীর এই বার্তার পরেই সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, অদূর ভবিষ্যতে তেল আমদানি বন্ধের সম্ভাবনা নেই। কিন্তু বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম কম থাকার সুবিধা এ দেশের সাধারণ মানুষের দরজায় পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। পেট্রল-ডিজ়েল বা রান্নার গ্যাসের দাম কমলে তাঁরা মূল্যবৃদ্ধির ফাঁস থেকে কিছুটা রেহাই পেতে পারেন। সেই বার্তা কই? উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলে এখন ৭৭-৭৯ ডলারে ঘোরাফেরা করছে।
বর্তমানে তেলের চাহিদার ৮৫ শতাংশই আমদানি করে মেটায় বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম জ্বালানি ব্যবহারকারী দেশ ভারতকে। গডকড়ী বলেছেন, ‘‘এই মুহূর্তে পেট্রল-ডিজ়েল আমদানি খাতে ১৬ লক্ষ কোটি টাকা খরচ হয়। আমদানি কমিয়ে সেই টাকা বাঁচাতে পারলে তা গরিবের কাজে লাগবে। সেই কারণেই জৈব জ্বালানি আনা হয়েছে। দেশাত্মবোধ এবং স্বদেশি ভাবনার অগ্রগতির জন্য আমদানি হ্রাস এবং রফতানি বৃদ্ধিই রাস্তা।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘যত দিন না আমদানি বন্ধ হচ্ছে, তত দিন বিশ্বে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপও বন্ধ হবে না। আমার জীবনের লক্ষ্যই হল পেট্রল-ডিজ়েল আমদানি বন্ধ করা। সেটাকেই আমি নতুন স্বাধীনতা বলব।’’
সেই সঙ্গে গাড়ির মতো পণ্য রফতানি বৃদ্ধির বার্তাও দিয়েছেন মন্ত্রী। তুলে ধরেছেন ২০১৪ সালে ৭ লক্ষ কোটি টাকা থেকে গাড়ি শিল্পের ১২.৫ লক্ষ কোটিতে পৌঁছনোর কথা। এই
ক্ষেত্রে ৪.৫ কোটি মানুষ যুক্ত জানিয়ে তাঁর মত, গাড়ি শিল্প কেন্দ্র-রাজ্যের জন্য সবচেয়ে বেশি কর আদায়ের ব্যবস্থা করে। অথচ এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি আমদানিও হয়। তিনি চান, গাড়ি রফতানিতে ভারতকে প্রথম স্থানে নিয়ে যেতে। এখন যা তৃতীয়।
উল্লেখ্য, গত বছর বিশ্ব বাজারে তেলের দাম ব্যারেলে ১৪০ ডলারের কাছে পৌঁছনোর পরে এ বছর তা প্রায় অর্ধেক কমেছে। অথচ ২০২২ সালের মে-র পর থেকে ভারতে তেলের দাম স্থির। কলকাতায় পেট্রল লিটারে ১০৬.০৩ টাকা, ডিজ়েল ৯২.৭৬ টাকা।
এ দিকে, টাকার দামের দোলাচল যাতে আমদানির খরচের উপরে না পড়ে, সে জন্য ২০২২-এর জুলাইয়ে ভারতীয় মুদ্রায় বাণিজ্য চালানোর পথ খুলেছিল রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। কিন্তু সংসদীয় স্থায়ী কমিটির রিপোর্ট বলছে, গত অর্থবর্ষে সেই ডাকে সাড়া দেয়নি কোনও তেল রফতানিকারী দেশ। পছন্দের মুদ্রায় বরাতের অর্থ পাওয়া নিয়ে চিন্তা এবং নিজেদের দেশের মুদ্রায় বদলের বিপুল খরচের যুক্তিই তুলে ধরেছে তারা।