প্রতীকী চিত্র।
মোদী সরকার হামেশাই প্রশাসনিক সাফল্যের বড়াই করে তাদের জমানায় দেশে সহজে ব্যবসার পরিবেশের (ইজ় অব ডুয়িং বিজ়নেস) উন্নতিকে তুলে ধরে। চিনকে টপকে বিদেশি লগ্নি টানতেও তাকেই হাতিয়ার করছে তারা। কিন্তু সেই সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী লাল ফিতের ফাঁসের ইঙ্গিত দিয়ে নিজেই জানালেন, দু’বছর ধরে চেষ্টা করেও পুরনো গাড়ি বাতিলের নীতি চূড়ান্ত করতে না-পারার ব্যর্থতার কথা। এমনকি গাড়ি শিল্পের সঙ্গে ভিডিয়ো বৈঠকে তাঁর মন্ত্রকের সচিবকে তা দ্রুত করার আর্জি জানিয়ে বললেন, ‘‘আমি ক্লান্ত। দু’বছর ধরে ফাইল ঘুরছে। ওঁদের (গাড়ি শিল্পের কর্তা) মুখোমুখি হতে লজ্জা লাগে!’’
বছর দেড়েক ধরে অর্থনীতির ঝিমুনি-সহ নানা কারণে দেশের উৎপাদনমুখী শিল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গাড়ি শিল্পের বেহাল দশা। মূলত কর্মসংস্থানের বিপুল সূত্র হওয়ায় করোনা-সঙ্কটের পরে এখন আর এই শিল্পের সমস্যা উপেক্ষা করতে পারছে না কেন্দ্র। সম্প্রতি তাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ভারী শিল্পমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরের ভিডিয়ো বৈঠকের পরে, বৃহস্পতিবার গাড়ি সংস্থাগুলির সংগঠন সিয়ামের মুখোমুখি হন নিতিন।
সিয়ামের কর্তাদের প্রশ্ন, লকডাউন উঠলেও ক’জন গাড়ি কিনতে আগ্রহী হবেন? ২০২০-২১ সালে দেশের জিডিপি তলানিতে পৌঁছনোর পূর্বাভাস উল্লেখ করে এ দিন গোড়াতেই সিয়ামের প্রেসিডেন্ট রাজন ওয়াধেরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, গাড়ি বিক্রি এ ভাবে কমলে শিল্প ১০ বছর আগের জায়গায় পিছিয়ে যাবে। এই শিল্পের অন্যতম কর্তা তথা সিআইআইয়ের প্রেসিডেন্ট বিক্রম কির্লোস্কার ফের জিএসটি হ্রাসের পাশাপাশি পুরনো গাড়ি বাতিলের জন্য আর্থিক সুবিধা নীতির (ইনসেন্টিভ বেসড স্ক্র্যাপেজ পলিসি) পক্ষে সওয়াল করেন। কারণ আর্থিক সুবিধা পেলে পুরনো গাড়ি বাতিল করে নতুন গাড়ি কেনার চাহিদা বাড়বে। রাজন বলেন, ‘‘আপনি গত কয়েক বছর ধরে চেষ্টা করছেন।’’
আরও পড়ুন: লকডাউনের জোর ধাক্কা নতুন চাকরির বাজারেও
আশঙ্কার হিসেব
• চলতি অর্থবর্ষে ভারতে জিডিপি ২% বাড়লে গাড়ি বিক্রি কমতে পারে ১৮%-২৪%।
• জিডিপি বৃদ্ধির হার শূন্য হলে গাড়ি বিক্রি কমতে পারে ৩৫%।
• জিডিপি ২% সঙ্কুচিত হলে গাড়ি বিক্রি কমতে পারে ৪৫%।
• পরিস্থিতি যে দিকে গড়িয়েছে, তাতে সরকারি ত্রাণ না-পেলে ১০ বছর
(*বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও মূল্যায়ন সংস্থা চলতি অর্থবর্ষে নাগাড়ে কমাচ্ছে ভারতের বৃদ্ধির হার। সেই অনুযায়ী গাড়ি বিক্রি নিয়ে পূর্বাভাস গাড়ি সংস্থাগুলির সংগঠন সিয়ামের।)
পরে এ নিয়ে বলতে গিয়ে হেসে ফেলেন মোদী সরকারের অন্যতম মুখ গডকড়ী। বলেন, ‘‘আমি দু’বছর ধরে চেষ্টা চালাচ্ছি। আপনারা জানেন, আমলাতন্ত্র, সিস্টেম কী ভাবে কাজ করে। অন্য মন্ত্রক ও অংশীদারদেরও সহযোগিতা দরকার। অনেক সমস্যা আছে। তবে আমি সচিবের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছি। তাঁকে বিষয়টি দেখতে বলেছি। এটি হলে গাড়ি শিল্পে গতি আসবে। কী কী বাধা রয়েছে, তা দেখে দ্রুত সমাধান করব।
এখানেই শেষ নয়, বৈঠকের একেবারে অন্তিম পর্বে এসে ফের মন্ত্রকের সচিবকে নিতিন বলেন, ‘‘যা হয়েছে তা অন্তত ওঁদের জানান। এটা হলে ওঁদের খরচ কমবে। পুরনো গাড়ি বাতিল হলে দূষণও কমবে। এটা এ বার করে দিন।’’ সচিব অবশ্য নিতিনকে জানান, আলাদা করে পরে তাঁকে সবটা জানাবেন তিনি।
আরও পড়ুন: পরিষেবাও তলিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত
বৈঠকে মহীন্দ্রার এমডি পবন গোয়েন্কা দাবি করেন, আবাসন ও গাড়ি শিল্পের সঙ্কট এখন সবচেয়ে বেশি। নিতিনের অবশ্য দাবি, আবাসন শিল্পের দুরবস্থা গাড়ির দ্বিগুণ খারাপ। তাঁর কথায়, ‘‘আবাসন ক্ষেত্র ভেঙে পড়ার মুখে।’’
এ বছরে গাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে যে সব নতুন নিয়মকানুন চালু হওয়ার কথা, তা আপাতত স্থগিত রাখার জন্যও আর্জি জানান শিল্প-কর্তারা। নিতিন তা খতিয়ে দেখার পাশাপাশি ফের জিএসটি হ্রাসের আর্জিও অর্থ মন্ত্রকের কাছে পাঠানোর আশ্বাস দেন।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)