Nirmala Sitharamn

ঘুরে দাঁড়াতে পন্থের মতো ঝোড়ো ইনিংসের সওয়াল

লকডাউনের ধাক্কায় এপ্রিল-জুনে জিডিপি প্রায় ২৪% কমেছে। জুলাই-সেপ্টেম্বরে সঙ্কুচিত ৭.৫%।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২১ ০৬:৩৯
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

ছত্রিশ রানে অল-আউট হওয়ার পরে ঘুম ভাঙল!
চেতেশ্বর পুজারার মতো উইকেট আগলে পড়ে থাকা অনেক হয়েছে। লকডাউন-বিধ্বস্ত অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এ বার ঋষভ পন্থের মতো রানের ঝড় তোলার পক্ষে সওয়াল করল আর্থিক সমীক্ষা। বাজেটের আগে আজ অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সংসদে ওই সমীক্ষা পেশ করেছেন। তাতে মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কৃষ্ণমূর্তি সুব্রহ্মণ্যন মোদী সরকারকে আরও ‘সক্রিয়’ হয়ে, অর্থনীতির মোড় ঘোরাতে সরকারি খরচ বাড়াতে বলেছেন।

Advertisement

লকডাউনের ধাক্কায় এপ্রিল-জুনে জিডিপি প্রায় ২৪% কমেছে। জুলাই-সেপ্টেম্বরে সঙ্কুচিত ৭.৫%। আজ সুব্রহ্মণ্যন আর্থিক সমীক্ষায় বলেন, ‘‘ঠিক যে ভাবে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে ৩৬ রানে অল আউট হওয়ার পরেও ভারতীয় ক্রিকেট দল ঘুরে দাঁড়িয়েছিল, ঠিক তেমন ভাবেই দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। প্রায় ২৪% সঙ্কোচনের পরেও আগামী দু’বছরের মধ্যে ভারত আর্থিক বৃদ্ধির হারে বিশ্ব সেরা হবে।’’

আর্থিক সমীক্ষার সার সংক্ষেপ
অর্থনীতি

• ২০২০-২১ অর্থবর্ষে সম্ভাব্য সঙ্কোচন ৭.৭%।
• করোনা প্রতিষেধক প্রয়োগ ও আর্থিক কার্যকলাপ বাড়ায় অর্থনীতি দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে। ইংরেজি ‘ভি’ বর্ণের মতো।
• ২০২১-২২ অর্থবর্ষে বৃদ্ধির হার হতে পারে ১১%। তবে মূল কারণ আগের অর্থবর্ষের সঙ্কোচন।
• শিল্প ও পরিষেবা সঙ্কুচিত হলেও রুপোলি রেখা কৃষি ক্ষেত্র।
• চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয়ার্ধে রফতানি ৫.৮% কমতে পারে। আমদানি ১১.৩%।
• চলতি খাতে উদ্বৃত্ত হতে পারে ২%। ১৭ বছরের সর্বোচ্চ।

Advertisement

অর্থনীতিবিদদের প্রশ্ন, দু’বছর পরে বিশ্ব সেরা হওয়ার জন্য কি ৩৬ রানে অল আউট হওয়াটা আদৌ জরুরি ছিল? সরকারি খরচ বাড়িয়ে আগেই কি সাধারণ মানুষের হাতে টাকা তুলে দেওয়া যেত না?
এতদিন ধরে নোবেলজয়ী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে রঘুরাম রাজনের মতো প্রায় সব তাবড় অর্থনীতিবিদেরাই দাবি করে আসছেন, অর্থনীতির হাল ফেরাতে মোদী সরকার রাজকোষ ঘাটতির কথা ভুলে সরকারি খরচ বাড়াক। তাতে মানুষের হাতে টাকা আসবে। বাজারে চাহিদা বাড়বে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী সরকারি খরচ বাড়াতে চাননি। লকডাউনের পরে গরিব কল্যাণ যোজনা ঘোষণা করেছেন। তিন দফায় ‘আত্মনির্ভর ভারত প্যাকেজ’-ও এনেছেন। কিন্তু সেই ২৯.৪ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজে সরকারি খরচ ছিল যৎসামান্য, সিংহভাগই ব্যাঙ্কের ঋণ। নির্মলা বলেছিলেন, তাঁর দাওয়াইয়ের পরিমাণ জিডিপি-র ১৫%। বাস্তবে তার মধ্যে সরকারি খরচ ছিল জিডিপি-র মাত্র ৯%।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ এর সবগুলিকেই এক একটি ‘মিনি বাজেট’ আখ্যা দিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘ভারতের ইতিহাসে প্রথমবার ২০২০ সালে একটা নয়, অর্থমন্ত্রীকে চার-পাঁচটা বাজেট পেশ করতে হয়েছে। আমার বিশ্বাস, এই চার-পাঁচটি মিনি বাজেটের প্রেক্ষিতেই সোমবারের নতুন অর্থবর্ষের বাজেটকে দেখা হবে।’’

অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় ভারতে মোদী সরকার যে অনেক কম খরচ করেছে, তা মেনেছে আর্থিক সমীক্ষা। সুব্রহ্মণ্যনের যুক্তি, যতক্ষণ না আর্থিক বৃদ্ধি প্রাক-কোভিড পর্বে ফেরে, ততক্ষণ সরকারি খরচ বাড়াতে হবে। সে জন্য রাজকোষ ঘাটতিতে লাগাম পড়ানোর নিয়মও বদলাতে হবে। তবে মনে করিয়েছেন, তিনি লাগামছাড়া ঘাটতির কথা বলছেন না। সুব্রহ্মণ্যন বলেন, ‘‘পুজারার মতো সাবধান থাকতে হবে। আবার পন্থের মতো রানও তুলতে হবে। আমার ধারণা, বাজেটের দিন পুজারা ও পন্থ, দু’জনকেই খেলতে দেখা যাবে।’’

স্বাস্থ্য পরিষেবা

• অতিমারি পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য ভারতের স্বাস্থ্য পরিষেবা পরিকাঠামোকে তৈরি থাকতে হবে।
• সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা খাতে খরচ ১% থেকে বাড়িয়ে ২.৫-৩% করার পরামর্শ।
• লকডাউনের কৌশল ৩৭ লক্ষ সংক্রমণ কমিয়েছে। প্রাণ বাঁচিয়েছে এক লক্ষ মানুষের।

যদিও কম সরকারি খরচ সত্ত্বেও অর্থনীতির হাল ফিরছে বলেই ফের দাবি করেন সুব্রহ্মণ্যন। তবে কৌশিক বসুর মতো অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, ভারত অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম সরকারি খরচ করেছে। তাই এ দেশের অর্থনীতিতে কোভিডের ধাক্কা লেগেছে সব থেকে বেশি। তাঁদের প্রশ্ন, আর্থিক সমীক্ষা থেকেই স্পষ্ট কেন্দ্র বাজেটে যতখানি সম্ভব সরকারি খরচ বাড়িয়ে অর্থনীতির হাল ফেরানোর চেষ্টা করবে। কিন্তু এতদিন তা করা হল না কেন?
সমীক্ষার হিসেবই বলছে, লকডাউনের পরে এপ্রিল থেকে শুরু করে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারি খরচ বাড়ানো দূরের কথা, উল্টে তা কমেছে। সুব্রহ্মণ্যনের যুক্তি, যখন গাড়ির ব্রেক চাপা থাকে, তখন অ্যাক্সিলারেটরে চাপ দিলে লাভ কিছুই হয় না। শুধু জ্বালানি নষ্ট হয়। আগে বেশি খরচ হয়নি বলেই এখন খরচ করার মতো অর্থ মিলছে।

সংস্কারে চোখ

• অর্থনীতির উপরে নিয়ন্ত্রণ এখন মাত্রাতিরিক্ত।
• সেই বাঁধন কাটাতে বিভিন্ন বিধি আরও সরল করতে হবে কেন্দ্রকে।
• অতিমারির ধাক্কা সামলাতে চালু করা আর্থিক ক্ষেত্রের সুরাহাগুলি ধীরে ধীরে তুলতে হবে। তবে তার পরেই করতে হবে সম্পদের মান যাচাই। পোক্ত করতে হবে ঋণ উদ্ধারের আইনি পরিকাঠামোকে। তাতে সামলানো যাবে এনপিএ।

অর্থের অভাবই যে সরকারি খরচ করার পক্ষে অন্যতম বাধা ছিল, তা আজ অর্থ মন্ত্রকের পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট। এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত, আর্থিক বছরের তিন মাস বাকি থাকতে বাজেট অনুমানের মাত্র অর্ধেক আয় হয়েছে। রাজকোষ ঘাটতি ইতিমধ্যেই লক্ষ্যমাত্রার ১৪৫% ছাপিয়ে গিয়েছে। যা থেকে স্পষ্ট, এ বছর ঘাটতি ৭% ছাপিয়ে যেতে পারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement