অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। —ফাইল চিত্র।
আন্তর্জাতিক স্তরে উৎপাদন ও সরবরাহে আরও বেশি অংশ নেওয়া এবং ‘আত্মনির্ভর’ হওয়ার জন্য শিল্পমহলকে কল-কারখানায় উৎপাদনকেই পাখির চোখ করে এগোনোর বার্তা দিলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। লক্ষ্য পূরণের জন্য নজর দিতে বললেন পণ্যের মানের উন্নতিতে। আর সেই প্রসঙ্গে নাম না করে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন-সহ অর্থনীতিবিদদের একাংশের মতের বিরোধিতা করছেন জানিয়ে উস্কে দিলেন বিতর্ক।
সম্প্রতি রাজন-সহ ওই অর্থনীতিবিদেরা বলেন, উৎপাদনে অগ্রগতির সুযোগ হেলায় হারিয়েছে ভারত। উৎপাদন নির্ভর বৃদ্ধির যে পথ চিন দেখিয়েছে, তা আর নকল করা যাবে না। তাই এ দেশ পরিষেবা ক্ষেত্রের উন্নতিতেই বরং জোর দিক। বণিকসভা সিআইআইয়ের বার্ষিক ব্যবসা সম্মেলনের মঞ্চ থেকে নির্মলার মন্তব্য, ‘‘ভারতের আর কল-কারখানায় উৎপাদন বা উৎপাদন বৃদ্ধির দিকে তাকানো উচিত নয় বলে কয়েকজন অর্থনীতিবিদ সম্প্রতি যে পরামর্শ দিয়েছেন, আমি তার বিরুদ্ধেও জোর দিতে চাই। বলতে চাই, উৎপাদন বাড়াতেই হবে। নীতির সাহায্য নিয়ে আন্তর্জাতিক উৎপাদন ও বিপণনে বাড়াতে হবে দেশের অংশগ্রহণও।’’
যদিও সংবাদমাধ্যমের খবরে সম্প্রতি নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে রাজনকে বলতে শোনা গিয়েছে, তিনি উৎপাদন কিংবা ভারতে আরও বেশি পণ্য তৈরির বিরোধী নন। কিন্তু তাঁর আশঙ্কা এ দেশে যে রকম অস্বচ্ছ ভাবে ভর্তুকি এবং শুল্ক ব্যবহার করে তা করা হচ্ছে, সেই বিষয়ে। বড় বড় সংস্থাগুলিকে কেন্দ্রের উৎপাদন ভিত্তিক উৎসাহ ভাতা (পিএলআই) প্রকল্পে চড়া ভর্তুকি এবং চিপ তৈরির ক্ষেত্রে বিপুল উৎসাহ ভাতা দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। অর্থনীতিবিদ রোহিত লাম্বার সঙ্গে লেখা বইয়ে দু’জনেই তুলে ধরেছেন, কী ভাবে চড়া ভর্তুকি যথেষ্ট কর্মসংস্থানের পথ রুদ্ধ করে। কয়েক দিন আগে সমাজমাধ্যমে রাজন লিখেওছেন, তিনি এবং লাম্বা যা বলতে চেয়েছেন বিজেপির মন্ত্রীরা তার ভুল ব্যাখ্যা করছেন।
নির্মলার অবশ্য বক্তব্য, পণ্য উৎপাদন বাড়িয়েই ভারত আত্মনির্ভর হতে পারবে। পিএলআই-এর সাহায্যে এর মধ্যেই টেলিকমে ৬০% আমদানি কমেছে। ৯৯% মোবাইল দেশে তৈরি হচ্ছে। আইফোন তৈরির জন্য ভারতকে অ্যাপল-এর দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার কথাও বলেন তিনি। তাঁর দাবি, এ দেশের এখনও উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির সুযোগ বিপুল। কারণ, বিশ্বের বহু সংস্থা শুধু চিনে উৎপাদনের জন্য লগ্নির কৌশল বদলে ভারতের মতো দেশে সরতে চাইছে। এই প্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী ক্যাপজেমিনি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রিপোর্টও তুলে ধরেন। বলেন, সমীক্ষায় ইউরোপ এবং আমেরিকার ৭৬০ জন আধিকারিকের ৬৫% বলেছেন, ভারতে লগ্নি বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছেন তাঁরা।