সরেজমিনে: অশোকনগরে ওএনজিসি-র প্রকল্পের কাজ খতিয়ে দেখছেন আধিকারিকেরা। সঙ্গে স্থানীয় বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী (বাঁ দিকে)। উত্তোলন হওয়া প্রাকৃতিক তেল, নাম ‘ব্ল্যাক গোল্ড’ (ডান দিকে)। ছবি: সুজিত দুয়ারি
রাজ্যে অশোকনগরের বাইগাছি এলাকায় আগেই তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের সন্ধান পেয়েছিল ওএনজিসি। এখন সেখানে নিয়মিত উত্তোলনের কাজ চলছে। এ বার উত্তর ২৪ পরগনার সেই অশোকনগরেরই দৌলতপুরে তেল-গ্যাস মজুত থাকার ইঙ্গিত মিলল। ওএনজিসি কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রাথমিক সমীক্ষার পরে মনে করা হচ্ছে ভান্ডার আছে। এ জন্য শীঘ্রই কূপ খননের কাজ শুরু হবে। মাটির ২.৭ কিলোমিটার নীচে প্রাকৃতিক সম্পদের সন্ধান মিলতে পারে। সংস্থার দাবি, কূপ খনন করে তথ্য অনুসন্ধান করতে মাস চারেক লাগতে পারে। সত্যিই বাণিজ্যিক উত্তোলনের মতো তেল-গ্যাস জমা থাকলে শুরু হবে উত্তোলন।
বিশ্ব বাজারের অশোধিত তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস চড়া দামে কিনতে গিয়ে বিপুল আমদানি খরচে নাস্তানাবুদ দেশের সংস্থাগুলি। তার জেরে দামি হয়েছে জ্বালানি। পরিস্থিতি সামলাতে বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারের কথা তো বলা হচ্ছেই। সেই সঙ্গে দেশে অশোধিত তেলের উৎপাদন বাড়ানোর পক্ষেও সওয়াল করছেন বিশেষজ্ঞেরা। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, এই অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গে নতুন তেল-গ্যাস ভান্ডারের সন্ধান পাওয়ার আশা ইতিবাচক। সূত্রের খবর, বাইগাছিতে অশোকনগর ইউনিট নম্বর ১ কূপ থেকে এখনও পর্যন্ত ৩০০ টন অশোধিত তেল তোলা হয়েছে। দৌলতপুর থেকেও বাণিজ্যিক উত্তোলন সম্ভব হলে, বাংলার পাশাপাশি উপকৃত হবে গোটা দেশ।
শনিবার অশোকনগরের বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামীর উপস্থিতিতে ওএনজিসি কর্তৃপক্ষ দৌলতপুরে কূপ খননের কাজ উদ্বোধন করেন। সঙ্গে ছিলেন সংস্থাটির গ্রুপ জেনারেল ম্যানেজার ই বিজয় পাল-সহ অন্যান্য আধিকারিক। স্থানীয় ভুরকুন্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বৃন্দাবন ঘোষ এবং হাবড়া ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রতন দাসও সেখানে ছিলেন। বিজয় জানান, ‘‘চার দিনের মধ্যে কূপ খনন শুরু হবে। প্রাথমিক ভাবে যে তেল মিলেছে, তা অতি উন্নত মানের। আমাদের বিশ্বাস এ রাজ্যে আরও তেল-গ্যাসের ভান্ডার আছে। একে কেন্দ্র করে অশোকনগরে শিল্প আসবে। এখানকার গ্যাস বাড়ি-বাড়ি দেওয়া হবে নাকি বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত হবে, তা রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব।’’ সূত্রের দাবি, ডিসেম্বরের আগে ৪টি এবং দু’বছরের মধ্যে ১৪টি জায়গায় কূপ খননের পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থার।
ওএনজিসি কর্তৃপক্ষের মতে, বাইগাছির পরে দৌলতপুরেও উত্তোলন শুরু হলে প্রচুর কর্মসংস্থান হবে। শীঘ্রই স্থানীয় ভাবে ২০০০ শ্রমিক নিয়োগ করবেন তাঁরা। এ দিন সংস্থা বিধায়কের হাতে দৌলতপুর থেকে পাওয়া তেলের নমুনা উপহার হিসেবে তুলে দেয়। বিধায়ক বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক তেল ও গ্যাস উত্তোলনের মানচিত্রে পশ্চিমবঙ্গকে তুলে ধরছে অশোকনগরই। প্রকল্পগুলি এলাকার অর্থনৈতিক ছবিটা পাল্টে দেবে। অনুসারী শিল্প আসবে। যার হাত ধরে চাকরি তৈরি হবে।’’
ইতিমধ্যেই ওএনজিসি সেখানে ৪৫০০ কোটি টাকা লগ্নি করেছে। বিধায়কের কথায়, ‘‘অশোকনগরের পুঙলিয়া এবং মালিকবেড়িয়াতেও অনুসন্ধান শুরু করেছে সংস্থাটি। মুখ্যমন্ত্রী বলে গিয়েছিলেন তেল ও গ্যাস প্রকল্পে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করতে। আমরা তা করছি।’’
দৌলতপুরে প্রায় ১৫ বিঘে জমিতে খনন চলছে। সেখানে চাষিরা ধান, তিল, সর্ষে ইত্যাদি ফলাতেন। তবে ওএনজিসি-কে স্বেচ্ছায় জমি দিয়েছেন। সুজিত মজুমদার নামে এক চাষির কথায়, ‘‘এক বিঘে জমি তিন বছরের জন্য লিজ়ে দিয়েছি। বছরে বিঘে প্রতি ৮০,০০০ টাকা দেবে। টাকা পেয়েওছি। পরে তেল-গ্যাস তোলার জন্য ন্যায্য দাম পেলে জমি দিয়ে দেব। আসলে এখানে এই প্রকল্প চাই আমরা। তাতে কর্মসংস্থান হবে। রাস্তাঘাট, আলোর উন্নতি হবে।’’ জমিদাতা চাষি বিনোদবিহারী পাল বলেন, ‘‘দু’বিঘে ৩১ শতক জমি দিয়েছি। এক বিঘের জন্য বছরে ৮০,০০০ টাকা করে দিচ্ছে। তেল না মিললে জমি চাষ যোগ্য করে ফেরত দেবে। পাওয়া গেলে ন্যায্য মূল্যে কিনে নেবে।’’