প্রতীকী ছবি।
শেয়ার বাজার চাঙ্গা থাকার সুবাদে এখন নতুন ইসুর (বাজারে কোনও সংস্থা যখন প্রথম শেয়ার বিক্রি করে টাকা তোলে, অর্থাৎ আইপিও) বাজারে ভরা জোয়ার। গুণগত মানে এবং দামের বিচারে খুব আকর্ষণীয় না-হলেও, গত সপ্তাহে প্রয়োজনের তুলনায় ৩৮ গুণেরও বেশি আবেদন জমা পড়েছে রেস্তরাঁর খাবার ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার সংস্থা জ়োম্যাটোর শেয়ার কিনতে। ৯৩৭৫ কোটি টাকার ইসুর জন্য লগ্নিকারীদের আবেদনের অঙ্ক ২,১৩,২৮৫ কোটি টাকা। এর আগে এমন হিড়িক দেখা গিয়েছিল রিলায়্যান্স পাওয়ার (২০০৮) এবং কোল ইন্ডিয়া (২০১০) বাজারে শেয়ার ছাড়ার পরে। শেয়ার বাজার, মিউচুয়াল ফান্ড ও নতুন ইসুর বাজার বিরাট অঙ্কের লগ্নি টানছে মানে, বিনিয়োগকারীদের হাতে তহবিল আছে। অর্থনীতির বর্তমান অবস্থাকে উপেক্ষা করে তাঁরা ভবিষ্যতে ভাল হওয়ার আশায় পুঁজি ঢালছেন। এর পরে বাজারে আরও নতুন ইসু আসবে। এর মধ্যে পেটিএম ১৬,৬০০ কোটি টাকার আইপিও-র জন্য সেবির কাছে আবেদন করেছে। সরকারি মহলে তৎপরতা শুরু হয়েছে চলতি অর্থবর্ষেই এলআইসি-র ইসু ছাড়ার জন্য। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, তা হতে পারে দেশের বৃহত্তম পাবলিক ইসু।
কিন্তু প্রশ্ন হল, আইপিও-র মারফত যে বিপুল অর্থ সংগ্রহ হচ্ছে তা কল-কারখানায় লগ্নি হবে কি? তাতে কি উৎপাদন বাড়বে? তার হাত ধরে বাড়বে কর্মসংস্থান? জবাবে বলে রাখা ভাল, এই টাকার খুব বড় অংশ কারখানায় উৎপাদন বাড়াতে লগ্নি হওয়ার নয়। কারণ বড় ইসুকারী সংস্থার অনেকগুলিই পরিষেবা শিল্পের। এলআইসি-র শেয়ার বিক্রির টাকা যাবে সরকারি কোষাগারে। ফলে এই সব ইসুর মানে এই নয় যে, তাতে মুলধনী পণ্যের বিক্রি এবং কর্মসংস্থান তেমন বাড়বে। তবে বাড়বে শেয়ার বাজারে নথিবদ্ধ সংস্থা, তাদের ইসুকৃত শেয়ারের মোট বাজার দর (মার্কেট ক্যাপিটালাইজ়েশন)।
শেয়ারে লাভের বহর দেখে ফান্ডেও টাকা ঢালছেন লগ্নিকারীরা। যদিও সিংহভাগই মাসিক কিস্তিতে এসআইপি পথে। যাতে ঝুঁকি কম থাকে। গত এক বছরে বহু প্রকল্প রিটার্ন দিয়েছে ৬০%-১০০%। যা দেখে হু হু করে বাড়ছে এসআইপি অ্যাকাউন্টের সংখ্যা। এপ্রিল থেকে জুনেই খুলেছে ৫০ লক্ষের বেশি অ্যাকাউন্ট। ২০২০-২১ সালে খুলেছিল ১.৪১ কোটি। এসআইপি-তে জুনে লগ্নি এসেছে ৯১৫৬ কোটি টাকা, এপ্রিলের থেকে ৩৩৭ কোটি টাকা বেশি।
বাজার এক ঝলকে।
গত বৃহস্পতিবারই রেকর্ড উচ্চতা ছুঁয়েছিল সেনসেক্স, নিফ্টি। তার চোখ এখন সংস্থাগুলির আর্থিক ফলে। চলতি অর্থবর্ষের এপ্রিল-জুনে তিন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা টিসিএস, ইনফোসিস ও উইপ্রো ব্যবসা এবং লাভ বাড়িয়েছে। এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের নিট লাভ বেড়ে ৭৭৩০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। তবে তা আশার চেয়ে কম। অনাদায়ী ঋণও বেড়েছে। এ সপ্তাহে যে সব ফল বেরোবে তার কম-বেশি প্রতিফলন ঘটবে বাজারে।
(মতামত ব্যক্তিগত)