হিসাব পরীক্ষার (অডিট) মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল সত্যম-কেলেঙ্কারির সময়েই। জিজ্ঞাসা ছিল, প্রতি বছর নামী অডিট সংস্থা খুঁটিয়ে দেখা সত্ত্বেও তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাটির হিসেবের এত বড় গড়মিল সময়ে ধরা পড়ল না কেন? আরও এক ধাপ এগিয়ে এ বার হিসাব পরীক্ষায় ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস (আইসিএআই)-এর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা খর্ব করার প্রস্তাব দিল বিশেষ কমিটি। কোম্পানি আইন সংশোধনের বিষয়ে তৈরি ওই কমিটি এই সুপারিশ করেছে কেন্দ্রীয় কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রকের কাছে। প্রত্যাশিত ভাবেই এর বিরোধিতা করেছে আইসিএআই।
এখন হিসাব পরীক্ষার ক্ষেত্রে যাবতীয় নীতি (স্ট্যান্ডার্ড) নির্ধারণ করে আইসিএআই। এ বার কেন্দ্র নিজেরাই তা করতে উদ্যোগী হয়েছে। এ ব্যাপারে যাবতীয় প্রক্রিয়া পূরণের জন্য বিশেষ কর্তৃপক্ষ গঠনেরও সুপারিশ করেছে বিশেষ কমিটি। এখনকার নিয়ম অনুযায়ী, ওই সব নীতি প্রথমে আইসিএআই ঠিক করে। তারপরে তা যায় ন্যাশনাল অ্যাডভাইসরি কমিটি অন অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ডসের কাছে। তারা খসড়া নীতিগুলি খতিয়ে দেখে সুপারিশ-সহ পাঠিয়ে দেয় কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রকের কাছে। মন্ত্রকই তা বিজ্ঞপ্তি হিসেবে ঘোষণা করে।
পুরনো এই পদ্ধতি বদলের জন্য সুপারিশ করেছে বিশেষ কমিটি। তাতে বলা হয়েছে— হিসাব পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণের জন্য ন্যাশনাল ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং অথরিটি (এনএফআরএ) নামে নতুন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হোক। এটি কার্যকর হলে অডিট সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণের ক্ষমতা আইসিএআইয়ের হাতে কার্যত থাকবে না।
হিসাব পরীক্ষার নীতি নির্ধারণের জন্য এনএফআরএ-র আওতায় তিনটি ডিরেক্টরেট তৈরিরও প্রস্তাব দিয়েছে ওই কমিটি। সেগুলি হল—(১) অ্যাকাউন্টিং ডিরেক্টরেট (২) অডিটিং স্ট্যান্ডার্ড ডিরেক্টরেট (৩) এথিক্স অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি ডিরেক্টরেট। প্রস্তাব অনুযায়ী, হিসাব পরীক্ষা এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নীতি নির্ধারণের দায়িত্ব থাকবে ওই তিন ডিরেক্টরেটের উপর। তাদের তৈরি খসড়া নীতিই এনএফআরএ-র মাধ্যমে জমা পড়বে কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রকের কাছে।
স্বাভাবিক ভাবেই হিসাব পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণে নতুন কর্তৃপক্ষ তৈরির বিরোধিতা করেছে আইসিএআই। এ নিয়ে লিখিত বক্তব্য কমিটির কাছে পেশ করেছে তারা। তাদের দাবি, নতুন কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রয়োজন নেই।
আইসিএআইয়ের কাউন্সিল সদস্য অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আইসিএআই ৬৬ বছর ধরে দায়িত্বের সঙ্গে অডিেট নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করছে। এ ক্ষেত্রে কোনও ভুল নজরে এলে সংশ্লিষ্ট অডিটরের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতেও আমাদের সংগঠন পিছপা হয় না। এই নীতি নির্ধারণ নিয়ন্ত্রণে আইসিএআইয়ের মতো দক্ষতাও আর কারও নেই।’’
অভিজিৎবাবু জানান, মন্ত্রকের আওতায় ইতিমধ্যেই একটি স্বাধীন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ তৈরি হয়েছে। তাদের কাজ প্রতি বছর ১০০ থেকে-১৫০টি হিসাবের খাতা (ব্যালান্স শিট) কোনও পক্ষপাতিত্ব ছাড়া তুলে নিয়ে বিশেষ অডিটরকে দিয়ে ফের পরীক্ষা করানো। তাতে কোনও গাফিলতি ধরা পড়লে, ওই কর্তৃপক্ষ অডিটরের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে আইসিএআইয়ের কাছে সুপারিশ করে। অভিজিৎবাবু বলেন, ‘‘সেই কারণেই আর একটি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রস্তাব অযৌক্তিক।’’ অবশ্য কমিটি যে সুপারিশ করেছে, তাতে বলা হয়েছে যে, প্রস্তাবগুলির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আইসিএআই-এর বক্তব্য খতিয়ে দেখা জরুরি।